শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯

ডাইরির পাতা


====== SraNton Hossain
আমি ছোট বলে আমাকে কতো কিছু করতে দেওয়া হয়না।আম্মু আব্বু বোঝেই না যে আমি কাজটি করতে পারবো।তাদের কাছে বললে তারা বলে
-তুই তো এখন খুব ছোট।একটু বড় হ তারপর নাহলে করিস।
খুব রাগ হয় তখন।তখন আমি লুকিয়ে লুকিয়ে করতে গিয়ে সমস্যা তৈরি করে ফেলি।আম্মুকে বললাম
-আম্মু আমি আপেল কাটতে সাহায্য করি?
কিন্তু আম্মু আমার কথা শুনল না।তখন ছুড়ি দিয়ে একটি আপেল কেটে দেখানোর জন্য রান্নাঘরের কোনায় চলে গেলাম।আমি কাটছি আপেলটি।একটু ছোট বলে আকা বাকা হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কাটতে পারছি তো।একটু পর ঘার ঘুরিয়ে দেখি আম্মু পেছনে দাড়িয়ে আছে।
আউচ হাতটা কেটে গেলো।সব কিছু আম্মুর জন্যে হলো।আম্মু আমার কাছে এসে রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে ছিলো।যেই দেখলো আমার হাত কেটে গেছে ওমনি ঘর থেকে ঔষধ এনে লাগিয়ে দিলো।আম্মু আমার বলছে
-বলেছিলাম না তুই এখনো ছোট।একটু বড় হ তারপর সব কাজ করতে পারবি
আমি ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে বললাম
-আমি এখনি সব কাজ করতে পারি।কিন্তু তোমার জন্য সব কিছু হলো।তুমি আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছ বলেই তো হাতটা কেটে গেলো।
আম্মু আমার দিকে মমতাময়ী দৃষ্টিতে তাকিয়ে কোলে তুলে নিলো।...
*আজকে বিছানা থেকে উঠতে মন চাচ্ছে না।মন চাচ্ছে স্বপ্নটা আবার দেখতে।আমাদের জীবনে কতো স্বপ্ন দেখি কিন্তু কয়টা মনে রাখি।আমি ভাবছি প্রত্যেকদিন রাতে যে স্বপ্নগুলো দেখি সেগুলো যদি সকালে নোট করে রাখি তাহলে খারাপ হয় না।তাহলে আজকে থেকেই শুরু কেন নয়?
তাই করলাম।একটি ডাইরিতে লিখে রাখলাম।এমন সময় মোবাইল টা বেজে উঠলো।নাম্বার এর দিকে তাকিয়েই আমার ঘুম উড়ে যাওয়ার অবস্থা।হায় হায় আজকে সকাল সাত টায় না বন্ধুদের সাথে যাওয়ার কথা পাহাড়ে।এখন বাজে সারে ছয়টা।মোবাইল ধরেই বললাম
আমি আসছি
বলেই শরীরে একটি ঢুলা গেঞ্জি জড়িয়ে দিয়ে ব্রাশের মধ্যে পেস্ট ভরিয়ে ব্যাগের মধ্যে সব কিছু ভরে আম্মুকে সালাম করে দে দৌড়।গাড়িতে উঠে ইচ্ছা মতো ব্রাশ করে নিচ্ছি।ড্রাইভার মামার কাছ থেকে পানি নিয়ে কুলি করে জলদি বন্ধুর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি সবাই গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।যাক বাচা গেলো।কথা হয়েছিলো আমি যদি এক মিনিটও দেরি করি তাহলে আমাকে ছেড়েই চলে যাবে।এক বন্ধু বলে উঠলো
-নে এবারের মতো বেচে গেলি।গাড়িতে উঠ এবার।সাতটা তো বেজে গেলো।
আমরা একটি মাইক্রো ভাড়া করেছি চার বন্ধু সিলেট যাওয়ার জন্য।আমার তো গাড়িতে বমি হয় এটা বন্ধুরা জানেনা।আমিও ঘুরতে যাবো এই আনন্দেই সব ভুলে গিয়েছিলাম।আধ ঘণ্টা পার হওয়ার পর আমার গা গুলানি শুরু হয়ে যায়।ব্যাগ থেকে পলিথিন বাহির করতে করতেই আমার হয়ে যায়।আর কে দেখে, আমার পাশে বসা মায়সার পুরো কাপড় শেষ।
মায়সা তো চিৎকার শুরু করে দিলো।
হায় হায় কি করলি তুই।আমার এতো দামি ড্রেসটার বারোটা বাজিয়ে দিলি।আমি ফিক করে একটা হাসি উপহার দিলাম।যাক কোনোভাবে সিলেট গিয়ে নামলাম।
নামার পর সকলে মিলে একটা হোটেলে গিয়ে উঠলাম।আমরা তিন বন্ধু এক রুম নিলাম আর মায়সার জন্য এক রুম।রাত হয়ে গেছে তার ওপর সারাদিনের গাড়ির ধকল সকলে হোটেলে ওঠার পরই শুয়ে পড়লাম।
পড়ের দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই ঘুমে কাদা হয়ে রয়েছে।থাক না ঘুমিয়ে তাতে আমার কি।আমি যাবো ঘুরতে।গেঞ্জি এবং প্যান্ট পালটিয়ে হাটা ধরলাম গ্রামের রাস্তা ধরে।কি সুন্দর রাস্তা ,দুই পাশে বিশাল বড় বড় গাছ মাঝখানে মাটির রাস্তা।রাস্তার ওপর গাছের পাতা পড়ে যেন চাদর হয়ে রয়েছে।হেটে যাচ্ছি আমি এর ওপর দিয়েই।এমন সময় আম্মুর কল এসে পড়েছে।ধরতেই আম্মু বলছে
-কিরে কি খবর তোদের।গিয়ে তো একবার ফোনও দিলি না।বাদ দে কি করছিস এখন?
-আরে মা আমি একটু ঘুরতে বেড়িয়েছি।
-ও তাই।তাহলে ঘুর।দুপুরের দিকে একটু ফোন দিস।মোবাইল ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছে।
হাটতে থাকলাম মনের আনন্দে।কিছুদুর যাওয়ার পর একটি মেয়েকে দেখলাম রাস্তার পাশের গাছের গুড়ির ওপর বসে আছে।ঝিলের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে।পিছনে থেকে চুল ছেড়ে দেওয়া আন্দাজ করতে পারলাম কম করে হলেও পিঠ ছাড়িয়ে গেছে এই চুল।আকাশী রঙের একটি কাপড় পড়েছে।
পেছন থেকে দেখেই আমি মেয়েটির নাম দিলাম কঙ্কাবতী।কিন্তু কঙ্কাবতীর মানে কি জানিনা।পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।কি বলে সম্বোধন করবো বুঝতে পারছি না।তাই ছোট্ট করে একটু কাশী দিলাম।মেয়েটি ঘুরে তাকালো আমার দিকে।আমি তো মনে হয় ঘুরে পড়ে যাবো ঝিলের পানিতে।এতো সুন্দর মানুষ হতে পারে কখনো।রঙ টা একটু শ্যামলা কিন্তু তাতেই তাকে সুন্দর লাগছে।মনে হচ্ছে এ মেয়ে যদি গৌর বর্ণ হতো তাহলে ভালো লাগতো না।
মেয়েটির কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম
-কিছু কি বলবেন?এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?
-না কিছু বলবো না।তুমি এমনভাবে বসে আছো।পানিতে পড়ে যাবেন তো।
মেয়েটি খিল খিল করে হেসে দিলো।আমি মেয়েটির হাসি মুগ্ধ চোখে দেখছি।মেয়েটির সাথে কথা বলার পর মেয়েটি বলে যে সেও নাকি তার বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছে।মেয়েটির সাথে কথা বলতে বলতে দেখি মায়সা আর বাকি বন্ধুরা হেটে হেটে আসছে।কাছে এসেই আমার দিকে আর চোখে তাকাল।এমন ভাব করছে যেন বলতে চাচ্ছে
-শুরু করে দিলি তো তোর ছ্যাঁচড়ামো?
আমি আবার ফিক করে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম।আমার বন্ধুদের অবস্থা আরও খারাপ।ওরা দুই জনই চেষ্টা করছে কার আগে কে মেয়েটিকে পটাতে পারে।আমি মায়সার দিকে আর চোখে তাকিয়ে বললাম
-কিরে এখন বল কি বলবি
মায়সার মুখটা দেখলাম ভার হয়ে গেলো।কারন তার প্রাণপ্রিয় সোহেলও যে মেয়েটিকে পটানোর চেষ্টা করছে।আমি জলদি সোহেলের কাছে গিয়ে বললাম
-ভাই তুই ছেড়ে দে।নাহলে কখন মায়সা অগ্নি মূর্তি ধারণ করে তার ঠিক নেই।দিপুকেই লাইন মারতে দে।
আমাদের দেশের এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে সুন্দরি মেয়ে দেখলেই হয়ে গেলো।তাকে চিনো বা না চিনো তার পিছনে জোকের মতো লেগে থাকবে।কিন্তু সোহেল আমার কথা শুনল।একটু পর দেখছি সোহেল মায়সার কাছে গিয়ে কান ধরে ক্ষমা চাচ্ছে।যাক মিটমাট হয়েই গেলো।এরা থাক এদের মতো আমি আমার কাজ করে যাই।
হাটতে হাটতে পাহাড়ের একেবারে কিনারে চলে এসেছি।কি সুন্দর লাগছে দেখতে।কতো উচুতে এখন আমি।নিচের গাছগুলো দেখতে কতো ছোট লাগছে।
আমি এক মামার কাছ থেকে দশ টাকার বাদাম কিনে খাদের ধারে পা ঝুলিয়ে বসে বাদাম খাচ্ছি।এমন সময় এক বয়স্ক দাদু এসে আমাকে গলা ধরে ওখান থেকে দাড়া করালো এবং বলে
এই ছেলে তুমি এখানে এভাবে বসে আছো কেন।পড়ে গেলে তো একেবারে শেষ হয়ে যাবে এটা বুঝো না।
আমি দাদুর কথায় কোন দাম না দিয়ে তার পিছনের ছোট বাচ্চাটিকে দেখতে থাকি।দেখি বয়স্ক আঙ্কেলের প্যান্টের ফাক দিয়ে ফুচি দিচ্ছে।আমি আঙ্কেলকে বললাম
-কি সুন্দর বাচ্চা।দেখতে কি কিউট।
দাদু তখন বলল
-এটা আমার নাতি।বায়না ধরেছে যে আমার সাথে পাহাড়ে ঘুরতে আসবে তাই নিয়ে আসলাম।
আমি চুপ করে থাকলাম।কিছুক্ষণ পর পিচ্চিটি বলছে
-ভাইয়া আমি তোমার মতো ওখানে বসে থাকবো।
এই সেরেছে।আমি বললাম
-তুমি তো খুব ছোট।একটু বড় হও তারপর করবা
-আমাকে ছোট বললে খুব খারাপ লাগে।আমি করতে পারবো
তখন আমি চমকে যাই।কালকে সকালেও না এমন একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।কথা বাত্রা এতোটা মিলে গেলো কীভাবে।পৃথিবী বড়ই রহস্যময়।
যাক দাদুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম।তারপর দাদু চলে গেলো।আমি আবার পা ঝুলিয়ে বসে পড়লাম।আমার বন্ধুরা দেখছি আবার আমার পিছনে পিছনে এসে পড়েছে।দিপুকে দেখলাম মেয়েটিকে পটিয়ে ফেলেছে।দুইজন হাতে হাত দিয়ে আসছে।তার পাশে মায়সা এবং সোহেল হাত ধরে ধরে আসছে।আমি এই দৃশ্যটি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম একেবারে।মানিয়েছে কতো এদের চারজনকে।জলদি ক্যামেরা বাহির করে ছবি তুলে রাখলাম।অসাধারণ একটি ছবি এসেছে।সবচেয়ে সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে।খোলা চুলগুলো উড়ছে।বাহ অসাধারণ একটি ছবি হয়েছে।
কাছে এসে সবাই মিলে আমাকে খোঁচাতে শুরু করলো।বারে বারে এক কথা
-কেন আমি এভাবে একা একা ঘুরছি।
আমি মোক্ষম একটি উত্তর পেয়ে গেলাম
-তাহলে কি করবো।তোমরা এখন জোড়ায় জোড়ায় রয়েছো।তোমাদের সাথে থেকে কি করবো।তার চেয়ে একা একা ঘুরাই ভালো
চারজনের মুখ দেখি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।আমি উঠে গিয়ে সকল কিছু দেখতে শুরু করলাম যেমন গ্রাম্য বাজার ব্লা ব্লা ব্লা।ভাবছি এই ছবিটা ওঁদের চারজনকে উপহার দেবো।বাদ দেই এইসব।
দুপুর বেলা হোটেলে ফিরে গেলাম।তারপর গোছল করে ডাইরি নিয়ে বসলাম।আজকের সমস্ত বৃত্তান্ত দেওয়ার পর ডাইরিটি রাখলাম।কিছুক্ষণঘুমানোর পর উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে।তার মানে কিছুক্ষণ নয়।কম করে হলেও চার ঘণ্টা ঘুমিয়েছি।খাইছে আমারে।জলদি কাপড় চোপর পড়ে আবার বেড়িয়ে গেলাম।আবার ঐ একই যায়গায় গিয়ে উপস্থিত হলাম।এখান থেকে সূর্য ডোবার দৃশ্যটি দেখতে কি সুন্দর লাগছে।পাশে এসে আমাদের বন্ধুরাও দাঁড়ালো।অপরূপ মহিমা আমাদের এই প্রকৃতির।
অন্ধকার হওয়ার সময় সেই দাদুর সাথে দেখা।তিনি আমাদের সাথে কথা বললেন।আমার নাম্বার রেখে দিলেন।হোটেলে গিয়ে আর ঘুম আসে না।খেয়ে দেয়ে আবার ডাইরি নিয়ে বসলাম ।বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর একটি মেসেজ আসলো আমার মোবাইল এ ।আমি মেসেজ দেখে তো হতবাক।দাদু একটি এমএমএস পাঠিয়েছে।আমরা সব বন্ধুরা মিলে সূর্য ডোবার দৃশ্য দেখছি।পিছন থেকে তোলা হয়েছে ছবিটি।এটিও একটি আউটস্ট্যান্ডিং ছবি।চোখ দিয়ে পানি পড়তে চাইছে ।
দাদুকেও আমার ডাইরিতে যায়গা দিয়ে দিলাম।তার সম্পর্ক অনেক কিছু লিখলাম।আমরা দুইজন দুই প্রান্তের মানুষ কিন্তু কতটা আপন হয়ে গিয়েছি।আমরা মানুষ বলেই এটা সম্ভব।......
দশ বছর পর।...
আমার ছেলে সোহান
আজকে আমার চার বছর বয়সী ছেলেটি আমাদের পুরানো এ্যালবাম বাহির করে নিয়েছে দেখার জন্য।এবং আমার পুরানো ডাইরিটিও তার কব্জায়।একটি ছবির কাছে গিয়ে সোহান থেমে গেলো।এই সেই ছবি যেটা আমি তুলেছিলাম।চারজন হাত ধরে এগিয়ে আসছে।কিছুক্ষণ ছবিটি দেখে সোহান বলল
-এই মেয়েতি দেখতে কি চুন্দল তাই না ববা।মেয়েতিল নাম কি?
-কঙ্কাবতী
আমার মনের ডুপ্লিকেট কপি আমার ছেলে।চুপ করে থাকলাম।এখন জানি সোহান এখন সকল বন্ধু দাড়িয়ে থাকা ছবিটি বাহির করে কিছুক্ষণ দেখবে তারপর অ্যালবাম টা আবার যায়গা মতো রেখে দেবে।এটি ওর নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর আমার ডাইরিটি নেরে চেরে দেখে।একটি দুইটি শব্দ পড়তে পারে এখন।ডাইরির একটি পাতায় শিরোনামে লিখা কঙ্কাবতী কিন্তু পুরো পাতা খালি।আর কিছু লিখা নেই সেই পাতায়।এই লিখাটিই আমার ছেলেটি পড়ার চেষ্টা করছে।
কোথায় গেলো বন্ধুগুলো।সবাই সবার নিজের জীবন নিয়ে রয়েছে।এখন হয়তো মাসে এক কি দুইবার মোবাইল এ কথা হয় কিন্তু তাদের সাথে আর এক সাথে ঘুরতে যাওয়া হয়না।
আমি আছি আমার মতো।আজও যেসব স্বপ্ন দেখি সেগুলো লিখে রাখি ডাইরির পাতায়।

====== SraNton Hossain

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...