শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯

তিলোত্তমা

চারপাশ অন্ধকার হয়ে এসেছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।কেমন হালকা একটি আলো চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে।কেমন একটি প্রশান্তি অনুভব করতে পারছি।
আমি একটি বাসে বসে আছি।ফাকা রাস্তা।হু হু করে ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।ক্লান্ত শহরটা যেন দিনের শেষে ঝিমিয়ে পড়েছে।অন্যান্য দিনের মতো কোন ভিড় নেই।কিছু কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে যারা অফিস এর কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছে।
আমার কোলের ওপর একটি ডাইরি।প্রত্যেকদিনের অভ্যাস আমার যে গাড়িতে বসে কিছু লিখা কিন্তু আজ কিছু ভালো লাগছে না।হয়তো এই কোলাহল পরিবেশ হঠাৎ করে এমন চুপ হয়ে গেছে তার জন্য।চোখ বন্ধ করে আছি।
এমন সময় বাস পড়ের স্টপেজে থামল।অনেক মানুষ উঠলো জোরাজোরি করে।সবার শেষে দেখলাম একটি মেয়ে উঠছে।তার কোলে তিন কি চার বছরের একটি বাচ্চা।বাস এর পিছনের দিকে একটি সীট খালি আছে।একটি বাচ্চাকে নিয়ে পিছনে বসা খুব কষ্ট সেটা আমরা জানি।আমার পাশের সীট টাও খালি আছে।হয়তো মেয়েটি বসতে সঙ্কোচ বোধ করছে।তখন আমি মেয়েটিকে বললাম
-তুমি এখানে বোসো।আমি পিছনের সীটে গিয়ে বসছি
মেয়েটি দেখলাম লজ্জা পেলো।সে বলল
-না আঙ্কেল আপনি পিছনে যাবেন কেন।আর আপনি তো আমার বাবার সমান।বাবার পাশে তো মেয়ে বসেই তাইনা।
মেয়েটি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে পাশে বসল।মেয়েটি দেখলাম খুবই হাসি খুশি।আমার কোলের ওপর ডাইরি দেখে ও যেন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো।মেয়েটির মনের ভাব আমি বুঝতে পারলাম।হয়তো আমার ডাইরি সম্পর্কে ওর আগ্রহ জন্মেছে।আমি বললাম
-ডাইরি লিখার অভ্যাস আমার অনেক দিন থেকেই।পড়তে চাইলে পড়তে পারো ।
মেয়েটি দেখলাম খুশি হয়ে উঠলো।কিন্তু কোলের বাচ্চাটির জন্য সমস্যা হচ্ছে।আমি বললাম
-দাও তোমার বাচ্চাটিকে আমার কাছে দাও।তোমার মেয়েটি কিন্তু খুব সুন্দর
বলতে যতটুকু দেরি আমার কোলে এক লাফ দিয়ে চলে আসলো।
-দেখলেন আঙ্কেল কতটা দুষ্টু।একটু সময়ের মধ্যে আপনাকে পাগল বানিয়ে ফেলবে।
বাচ্চাটি দেখলাম ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো।আমি মেয়েটির হাতে ডাইরিটি ধরিয়ে দিলাম।আমি বসে বসে বাচ্চাটির সাথে অনেকক্ষণ কথা বলছি।মেয়েটির দেখি এদিকে কোন হুশ নেই।ডাইরির পাতায় হারিয়ে গেছে।
বাচ্চাটিকে জিজ্ঞেস করলাম
-তোমার নাম কি বাবু?
-রুহি।আমি কিন্তু বাবু না।আমি এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছি
-ও তাই তো।তুমি তো এখন অনেক বড় হয়ে গেছ।তাহলে আমি তোমাকে রুহি বলেই ডাকবো।
-হুম
-এই বুড়ো দাদুটাকে তোমার কেমন লাগলো?
-কে বুড়ো?
-কেন আমি বুড়ো
-কি বোলো তুমি।তুমি দেখতে কতো সুন্দর।আর তুমি দেখতে একেবারেই বুড়ো নও।
আমি রুহির কথা শুনে হাঁসতে থাকলাম।রুহি এখন আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে আমার বুকের ওপর শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
আকাশটা এখন অন্যরকম লাগছে।চারপাশে অন্ধকার হয়ে এসেছে।রাত হয়ে গেছে যে।আটটা বাজে এখন।আকাশে আজকে কোন মেঘের ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না।তারাগুলো ঝিকমিক করছে।মাঝখানে চাঁদ উঠে রয়েছে।অর্ধেক রুটির মতো দেখতে লাগছে।
রুহির দিকে তাকিয়ে দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে।বুকের ওপর মাথা দিয়ে এক হাতের বুড়ো আঙুল মুখে দিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে।কি নিষ্পাপ এই বাচ্চা।পাশে তাকিয়ে দেখি মেয়েটিও ঘুমিয়ে গিয়েছে।কোলের ওপর ডাইরিটি উল্টো হয়ে রয়েছে।মেয়েটির বয়সই বা কতো হবে।সর্বচ্চ হলে বাইশ বছর।আমার কাছে বাচ্চাটিকে দিয়ে কি নিশ্চিন্ত ঘুম দিয়েছে।আমি তো এদের কিছু লাগিনা তাহলে এতো বিশ্বাস কেন।
তখনই মাথার মধ্যে কথাটি বাজতে শুরু করলো
- আপনি তো আমার বাবার সমান।বাবার পাশে তো মেয়ে বসেই তাইনা।
আমি ডাইরিটিকে কোলের ওপর থেকে সরিয়ে নেই খুব সাবধানে।যাতে মেয়েটির ঘুম ভেঙে না যায়।কিছুদুর যাওয়ার পর মেয়েটির ঘুম একাই ভেঙে যায়।তখন মেয়েটি লজ্জা মাখা মুখে বলে
-এমা আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম দেখি।আর বাবুটাও দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে।
-হুম
-আমার কাছে দিন
-না থাক এখন নিতে গেলে হয়তো ঘুম ভেঙে যাবে।
-হুম।আপনার ডাইরিটি পড়ে মনে হচ্ছিল আমি যেন আপনার যায়গায় আছি।খুব ভালো মতো উপস্থাপন করেছেন নিজেকে
-এইতো সখের বসে লিখা আরকি
-ডাইরিটি গেলো কোথায়?নিচে পড়ে গেলো নাকি
-না আমিই সরিয়ে রেখেছি।তোমার ঘুমের সমস্যা হবে বলে।পড়তে চাইলে নিতে পারো।
-থাক একটু পড়েই নেমে যাবো।
বাস থেকে নামার সময় রুহিকে আমার কোল থেকে নেয়ার সময় ওর ঘুম ভেঙে যায়।তখন আমাকে ধরে কান্না করে কিছুক্ষণ।কি আজব এই পৃথিবী।একটু পরিচয়েই এতো আপন।
বাস থেকে নামার সময় মেয়েটি বলে
-তিলোত্তমা এখনো আপনাকে ভুলে যায়নি।আমার মায়ের নাম তিলোত্তমা।
আমি যেন কিছুক্ষণের জন্য থেমে যাই।কি শুনলাম আমি।মেয়েটি হন হন করে নেমে যাচ্ছে।পিছন ফিরে একবারও তাকালো না।রুহি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে কান্না করেই যাচ্ছে।

@SraNton Hossain

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...