শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯

রাতের আকাশ


-অ বৌমা পুলাডার চেহারা অমন লাগে ক্যান।শুকাইয়া দেহি একেবারে কাঠ হইয়া গেছে।
-না আম্মা কোথায় শুকিয়ে গেছে। হয়তো গাড়ির ধকলের কারনে এমন লাগছে ।ঠিক হয়ে যাবে।
-অ তাই হইবো হয়তো।
দাদির মুখটা দেখলাম ভার হয়ে রয়েছে।দাদির মনে কি চলছে সেটা দাদিই বলতে পারবে।
পড়ের দিন সকালবেলা দাত ব্রাশ করছি এমন সময় দাদি একটি চিকন পাট কাঠির মতন দেখতে একটি লোককে কোথা থেকে ধরে নিয়ে এসেছে।
শুনলাম দাদি মাকে বলছে
-অ বৌমা ইনি হইতাছে আমাগো অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ফকির।ঝার ফুক করে।
-তাতে কি হয়েছে আম্মা।উনাকে এখানে নিয়ে এসেছেন যে।
-না এমনি নিয়া আইলাম।কাইলকা দেখলাম পুলাডার চেহারা ক্যামন শুকাইয়া গেছে।চাইরপাশে আমাগো তো শত্রুর অভাব নাই।কেউ পুলাডারে তাবিচ কবচ করছে নাকি।
দাদির কথা শুনে আমার হাসি পেয়ে যায় কিন্তু হাঁসতে পারিনা।
মা বলেন
-এগুলো কি বলছেন।এইসবে কেউ বিশ্বাস করে নাকি।এগুলো সব ভণ্ডামি
-তুমি যা খুশি ভাবো কিন্তু পুলাডারে সামনে নিয়া আসো।ফকির বাবারে দিয়া দেখাইতে দাও।সমস্যা তো নাই কোন।
আমি ঘরের মধ্যে থেকে এক লাফে বাহির হয়ে আসি।কারন মা কখন চিকনা লোকটাকে তাড়িয়ে দেয় তার ঠিক নেই।তাহলে আমার মজা করাই হবেনা।
আমি বলি
এইযে আমি।দেখুন আমার কিছু হয়েছে নাকি
-এইতো আমার ভালো দাদুভাই।আসো সামনে আসো
লোকটাকে দেখি কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আমি মনে মনে বলছি
এই লোকটা যে এক নাম্বার ভণ্ড সেটা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে।তাহলে দাদি কেন বুঝছে না।
লোকটা বলল
-সন্ধ্যার সময় বাবুডারে ফকির বাড়ি নিয়া আইয়েন।বড় ফকির দেইখা কইবো নে কি হইছে।
মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি রাগে শুধু গজ গজ করছে কিন্তু দাদির জন্য কিচ্ছু বলতে পারছেনা।আর আমার রাগ হচ্ছে কারন আমাকে ঐ চিকনা লোকটা বাবু বলেছে।আমি অতটাও ছোট না।আমি এখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি।
কিন্তু ভেবেই মজা লাগছে আজ রাতে বড় রকমের ইন্টারেস্টিং কিছু দেখা যাবে।মাও কিছু বলতে পারবেনা কারন দাদি যেখানে বলেছেন সেখানে মা কিচ্ছু বলতে পারবেন না।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।বাবা মেজো কাকা আর আমি যাচ্ছি ফকির বাড়ি।দাদি যখন বলেছেন তখন তো যেতেই হতো।মা বার বার আমাকে আটকানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু কোন সুবিধা করতে পারছেন না।
নদীপথ।ছোট একটা ডিঙ্গি নৌকা আর দুইটা দার এই যা সম্বল।আমরা নৌকায় উঠে পড়লাম।নৌকায় উঠার সাথে সাথে আমি তো ভয়ে শেষ।যেভাবে নৌকা কাপছে আমি পড়ে না যাই।মেজো কাকা আমাকে টান দিয়ে বসিয়ে দিলেন আর বললেন
-এইসব নৌকায় যত কম নড়াচড়া করবে ততই ভালো।দেখো এখন আর কাপবেনা।
সত্যিই আমি লক্ষ্য করলাম আর নৌকা কাপছে না।
আমরা রউনা দিয়ে দিলাম।বাবা এবং কাকা দুজনে সব শক্তি দিয়ে দার টানছে কিন্তু আমি কিচ্ছু করতে পারছি না।আর কোন দারও নেই যে আমি হাত লাগাবো।নৌকার মধ্যে দেখলাম যে এক টুকরো কাঠ রয়েছে।তাই দিয়েই আমি পানির মধ্যে আগু পিছু করতে থাকলাম।এমন সময় আমার পা পিছলে গেলো।পানির মধ্যে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম এমন সময় আব্বু আমার প্যান্ট ধরে ফেলল।আমার প্যান্ট অর্ধেক খুলে গেলো কিন্তু পানিতে পড়ার হাত থেকে তো বেচে গেলাম।কিন্তু কাকার সামনে খুব সরম পেয়েছি।প্যান্ট প্রায় খুলা অবস্থায় বসে আছি।
এমন সময় কাকা আমার প্যান্ট উপরে উঠিয়ে দেয়।আমি নৌকার পাটাতনের উপর শুয়ে পড়ি।নদীর শব্দ ভালোই লাগতে থাকে।
যখন ফকির বাড়িতে আমাদের নৌকা থামে তখন অনেক রাত হয়ে গেছে।মেজো কাকা তো অপেক্ষায় আছে কখন এই ভণ্ড ফকিরের পর্দা ফাস করবে।আমিও মজা দেখার অপেক্ষায় আছি।
বড় ফকির যাকে বলে সে দেখতে অতটাও খারাপ না।আমাদের খুব আদর যত্ন করলো।ফকির বাড়িতে দেখি অনেক লোক এসেছে তাদের অসুখ সারানোর জন্য।আমি অবাক হয়ে যাই এতো মানুষকে দেখে।মানুষগুলো ডাক্তার এর কাছে না গিয়ে এখানে এসেছে ঝার ফুক করার জন্য।যখন আমাকে দেখার সময় আসলো তখন আমাকে বড় ফকিরের সামনে বসিয়ে দেওয়া হলো।ফকির আমার হাতে কতো কি ঘসে পরীক্ষা করে দেখলো।আমিও মজা দেখছি।
কিছুক্ষণ পর ফকির ঘরের কোনা থেকে এক ধরনের লতা জাতীয় গাছ বের করলো কিন্তু কোন ফাক নেই যেখান থেকে সেই গাছ আসতে পারে।আমি তো অবাক।ইনি আবার কোন ম্যাজিক দেখাচ্ছেন।মেজো কাকা চুপি চুপি ঘরের পিছনে গিয়ে দেখছেন কিছু আছে নাকি।কোন লোক পিছন থেকে গাছ গুলো দিচ্ছে নাকি।কিন্তু কাকা কিছুই পেলো না।কিন্তু এদিক থেকে ফকির একের পর এক গাছ বের করেই যাচ্ছে।আরও নানারকম জাদুর কাজ দেখালেন এবং নানারকম গাছ দিলেন বেটে খাওয়ানোর জন্য।
আমি জানি মা এগুলো সব ফেলে দিবে ।কিন্তু ভালোই হলো মজা করতে পারলাম।
কাকার মুখ দেখলাম বাংলার পাচের মতো হয়ে আছে।হয়তো ফকিরের ভণ্ডামি ধরতে পারেনি তাই।কিন্তু এই ফকিরের ধূর্ততা আমাকে মুগ্ধ করেছে।এতো মানুষের সামনে এমন চালাকি করা তো সহজ ব্যাপার নয়।
আকাশে অসংখ্য তারা উঠেছে তার মাঝে একটি চাঁদ জল জল করছে।দেখতে ভালোই লাগছে।এই সুন্দর রাতের আকাশের নিচে আমরা নৌকায় করে নদীর বুকে ভেসে যাচ্ছি।
এই সুন্দর পৃথিবীতে অনেক রহস্যময়তা আছে যা আমরা বুঝতে পারিনা।যা আমরা বুঝতে পারিনা তা আমরা এড়িয়ে যাই।
ধুর এসব আমি কি ভাবছি।আমি এগুলো ভেবে কি করবো।তারাগুলো দেখতে থাকি।সত্যি অপুরুপ সুন্দর এই জোছনা রাত এবং এই তারা ভরা আকাশ।মাকে সাথে করে নিয়ে আসলে ভালো হতো।আমার সাথে তারা দেখতো।
শহরের জীবনে সময় কোথায় এভাবে রাতের আকাশ দেখার।আর শান্তিই বা কোথায়।চারপাশে প্যাঁ পু শব্দ গাড়ি ঘোড়ার।
Written by: SraNton Hossain; MD Hridoy Hasan

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...