একটি মা তার সন্তানদের কতটা ভালোবাসতে পারে এটি জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দিবেন আপনি।এর কোন উত্তর হয়তো আপনার কাছে নেই,হয়তো আমার কাছেও নেই।
সেটি ছিল জুলাই মাস।নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে।গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি সবাই মিলে।নদীপথে যেতে হয়। গ্রামের বাড়ি নদী অঞ্চলে।বলতে গেলে নদীর ওপরে ভেসে রয়েছে।আর কোন রাস্তা নেই সেখানে যাওয়ার।
গ্রামের বাড়ি নদী অঞ্চলে হলে কি হবে?আমাদের এই নদীতেই সবচেয়ে বেশী ভয়।আমি আর আমার বোন কেউই সাঁতার জানিনা।তাই আম্মু সব সময়ে ভয়ে থাকে কখন কি হয়ে যায়।ছোট থেকে শহরে বড় হয়েছি তাই সাঁতার শেখা হয়ে ওঠেনি।এখন অনেকে বলতে পারেন শহরের মানুষ কি সাঁতার জানেনা?হ্যাঁ জানে ,কিন্তু আমাদের সাঁতার শেখা হয়নি।
আম্মুকে দেখতাম লঞ্চ দিয়ে যাওয়ার সময় নানারকম দোয়া পড়তে থাকতো। তার মনে সব সময় তো একটি ভয় কাজ করতো যদি নৌকা ডুবে যায় তাহলে কি হবে?
আমরা তখন মনে মনে হাসতাম।আর বলতাম,
_এই তো বসে আছি আমরা।কিছু তো হচ্ছে না আম্মু
যাই হোক আমরা দাদু বাসায় গিয়ে দেখি সব চাচাতো ভাইয়েরা এসেছে।আব্বু এবং তিন কাকা এবং দুই ফুফু।বিশাল বড় পরিবার বলা চলে।
আমরা চাচাতো ভাই বোনেরা নয় জন।সকলে যখন একসাথে হই তখন তো একেবারে আনন্দের শেষ থাকতো না।সেবার সকলে একসাথে হয়েছিলাম।সবাই মিলে গান গাওয়া, নাচানাচি করা।বড় কাকাকে দেখতাম রক্ত বর্ণ চোখে তাকিয়ে থাকতো।তাতে যেন আমাদের বয়েই গেছে।সবচেয়ে মজা হতো যখন সকলে একসাথে খেতে বসতাম।নয়জন গোল হয়ে বসা অসাধারণ সেই মুহূর্ত। এখন আর একসাথে হওয়া হয় না।
আসল কথায় আসি তাহলে।
আমরা দাদু বাড়ি থেকে ফিরে আসছি।নদীর ঘাটে দাড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ ধরে।প্রায় আধা ঘণ্টা তো হবেই।তখন দেখি একটি নৌকা ঘাটে আসলো।নৌকা দেখেই তো আমার কলজের পানি শুকিয়ে গিয়েছে বলা চলে।নিজের মনেই একটু গোঙানির শব্দ করে আম্মুকে বললাম,
_আম্মু গো যে নৌকা এসেছে মাঝ নদীতে আমরা ভেসে না যাই।
সাথে সাথে আমার গালে রাম চর।কাকা চর মেরেছি আর বলছে
_নদীর পথ এর মইদ্ধে তুই একটা অলুক্ষুইনা কথা কইলি।
আমরা কোনোভাবে নৌকায় চড়েছি।আর যেভাবে মাঝি নৌকার মধ্যে মানুষ উঠাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে মাঝ নদীতেই আমাদের হয়ে যাবে।আম্মু আমাদের দুজনের হাত ধরে রেখেছে।
এক কোনায় দেখলাম এক মহিলা তার কোলের বাচ্চাটিকে জড়িয়ে ধরে বসে রয়েছে।বুঝতে পারলাম তার মনেও একটু ভয় কাজ করছে।ভয় করাটাই স্বাভাবিক।একটি বাচ্চা নিয়ে নদী পথে যাওয়া তার ওপর এরকম অবস্থা নদীর।
মাঝ নদীতে নৌকা যেতেই দেখি একবার এই কাত তো আরেকবার ঐ কাত হচ্ছে নৌকাটি।একটু পর এমনভাবে নৌকাটি কাত হলো যে পানি উঠে গেলো অনেকখানি।নৌকা ডুবতে শুরু করেছে।আর তারচেয়েও তারাতারি ডুবছে সবার লাফালাফিতে।মহিল াটিকে দেখলাম অসহায় দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।আর এদিকে আম্মু আমাদের দুজনকে ধরে চিৎকার শুরু করে দিয়েছে।আমরা তো সাঁতার জানিনা।আম্মু যদিও সাঁতার জানে তবুও আমাদের ছেড়ে তো উঠতে পারবে না।
এমন সময় নৌকা পুরো ডুবে যায়।আম্মু তো আমাদের ভাসিয়ে রাখার খুব চেষ্টা করছে।আর কতক্ষন এভাবে রাখতে পারবে তার ঠিক নেই।এমন সময় দেখি একটি লঞ্চ তার সর্ব শক্তি দিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।প্রায় সকলেই তো সাঁতার জানে।শুধু আমরাই জানি না।আমরা অনেক কষ্টে লঞ্চে উঠলাম।আম্মু ওঠার সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে গেলো।
আমি আব্বু ডাক্তার আনতে যাই।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার নিয়ে এসে দেখি আম্মু কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে।
আমার কথাটা তাহলে ফলেই গেলো।নৌকা ঠিকই ডুবল।তখনই আমার সেই মহিলাটির কথা মনে পড়লো যার কোলে বাচ্চা ছিলো।অনেক খোজা খুজির পরেও তাকে এই ভীরের মধ্যে পেলাম না।
সত্যি আম্মু কতটা ঝুকি নিয়েছে আমাদের বাচিয়ে রাখার জন্য।
পরে খবর নিয়ে জানতে পারি দুইদিন পরে সেই মহিলাটি এবং বাচ্চাটির লাশ পাওয়া গিয়েছিলো।বাচ্চা টিকে মহিলা নাকি জড়িয়ে ধরে ছিলো।সত্যি হয়তো বাচ্চাটিকে বাচাতে গিয়ে মাও মারা গিয়েছে।কতটা ভালোবাসা থাকলে এমন করা যায়।
এতদিন পর এই কথাটি মনে পরে আমার আবার কেমন যেন লাগছে।মাঝখানে পাঁচটি বছর কেটে গেছে।বাচ্চাটি যদি বেচে থাকতো আর মহিলাটিও যদি বেচে থাকতো তাহলে কেমন হতো?মা বাচ্চাটিকে নিয়ে বাহিরে যেতো খেলতে।খাইয়ে দেওয়া,স্কুলে নিয়ে যাওয়া।
এখন আর কোনটাই সম্ভব না।কারন দুজনই তো এখন পরপারে চলে গিয়েছে।
@SraN ton Hossain
সেটি ছিল জুলাই মাস।নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে।গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি সবাই মিলে।নদীপথে যেতে হয়। গ্রামের বাড়ি নদী অঞ্চলে।বলতে গেলে নদীর ওপরে ভেসে রয়েছে।আর কোন রাস্তা নেই সেখানে যাওয়ার।
গ্রামের বাড়ি নদী অঞ্চলে হলে কি হবে?আমাদের এই নদীতেই সবচেয়ে বেশী ভয়।আমি আর আমার বোন কেউই সাঁতার জানিনা।তাই আম্মু সব সময়ে ভয়ে থাকে কখন কি হয়ে যায়।ছোট থেকে শহরে বড় হয়েছি তাই সাঁতার শেখা হয়ে ওঠেনি।এখন অনেকে বলতে পারেন শহরের মানুষ কি সাঁতার জানেনা?হ্যাঁ জানে ,কিন্তু আমাদের সাঁতার শেখা হয়নি।
আম্মুকে দেখতাম লঞ্চ দিয়ে যাওয়ার সময় নানারকম দোয়া পড়তে থাকতো। তার মনে সব সময় তো একটি ভয় কাজ করতো যদি নৌকা ডুবে যায় তাহলে কি হবে?
আমরা তখন মনে মনে হাসতাম।আর বলতাম,
_এই তো বসে আছি আমরা।কিছু তো হচ্ছে না আম্মু
যাই হোক আমরা দাদু বাসায় গিয়ে দেখি সব চাচাতো ভাইয়েরা এসেছে।আব্বু এবং তিন কাকা এবং দুই ফুফু।বিশাল বড় পরিবার বলা চলে।
আমরা চাচাতো ভাই বোনেরা নয় জন।সকলে যখন একসাথে হই তখন তো একেবারে আনন্দের শেষ থাকতো না।সেবার সকলে একসাথে হয়েছিলাম।সবাই মিলে গান গাওয়া, নাচানাচি করা।বড় কাকাকে দেখতাম রক্ত বর্ণ চোখে তাকিয়ে থাকতো।তাতে যেন আমাদের বয়েই গেছে।সবচেয়ে মজা হতো যখন সকলে একসাথে খেতে বসতাম।নয়জন গোল হয়ে বসা অসাধারণ সেই মুহূর্ত। এখন আর একসাথে হওয়া হয় না।
আসল কথায় আসি তাহলে।
আমরা দাদু বাড়ি থেকে ফিরে আসছি।নদীর ঘাটে দাড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ ধরে।প্রায় আধা ঘণ্টা তো হবেই।তখন দেখি একটি নৌকা ঘাটে আসলো।নৌকা দেখেই তো আমার কলজের পানি শুকিয়ে গিয়েছে বলা চলে।নিজের মনেই একটু গোঙানির শব্দ করে আম্মুকে বললাম,
_আম্মু গো যে নৌকা এসেছে মাঝ নদীতে আমরা ভেসে না যাই।
সাথে সাথে আমার গালে রাম চর।কাকা চর মেরেছি আর বলছে
_নদীর পথ এর মইদ্ধে তুই একটা অলুক্ষুইনা কথা কইলি।
আমরা কোনোভাবে নৌকায় চড়েছি।আর যেভাবে মাঝি নৌকার মধ্যে মানুষ উঠাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে মাঝ নদীতেই আমাদের হয়ে যাবে।আম্মু আমাদের দুজনের হাত ধরে রেখেছে।
এক কোনায় দেখলাম এক মহিলা তার কোলের বাচ্চাটিকে জড়িয়ে ধরে বসে রয়েছে।বুঝতে পারলাম তার মনেও একটু ভয় কাজ করছে।ভয় করাটাই স্বাভাবিক।একটি বাচ্চা নিয়ে নদী পথে যাওয়া তার ওপর এরকম অবস্থা নদীর।
মাঝ নদীতে নৌকা যেতেই দেখি একবার এই কাত তো আরেকবার ঐ কাত হচ্ছে নৌকাটি।একটু পর এমনভাবে নৌকাটি কাত হলো যে পানি উঠে গেলো অনেকখানি।নৌকা ডুবতে শুরু করেছে।আর তারচেয়েও তারাতারি ডুবছে সবার লাফালাফিতে।মহিল
এমন সময় নৌকা পুরো ডুবে যায়।আম্মু তো আমাদের ভাসিয়ে রাখার খুব চেষ্টা করছে।আর কতক্ষন এভাবে রাখতে পারবে তার ঠিক নেই।এমন সময় দেখি একটি লঞ্চ তার সর্ব শক্তি দিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।প্রায় সকলেই তো সাঁতার জানে।শুধু আমরাই জানি না।আমরা অনেক কষ্টে লঞ্চে উঠলাম।আম্মু ওঠার সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে গেলো।
আমি আব্বু ডাক্তার আনতে যাই।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার নিয়ে এসে দেখি আম্মু কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে।
আমার কথাটা তাহলে ফলেই গেলো।নৌকা ঠিকই ডুবল।তখনই আমার সেই মহিলাটির কথা মনে পড়লো যার কোলে বাচ্চা ছিলো।অনেক খোজা খুজির পরেও তাকে এই ভীরের মধ্যে পেলাম না।
সত্যি আম্মু কতটা ঝুকি নিয়েছে আমাদের বাচিয়ে রাখার জন্য।
পরে খবর নিয়ে জানতে পারি দুইদিন পরে সেই মহিলাটি এবং বাচ্চাটির লাশ পাওয়া গিয়েছিলো।বাচ্চা
এতদিন পর এই কথাটি মনে পরে আমার আবার কেমন যেন লাগছে।মাঝখানে পাঁচটি বছর কেটে গেছে।বাচ্চাটি যদি বেচে থাকতো আর মহিলাটিও যদি বেচে থাকতো তাহলে কেমন হতো?মা বাচ্চাটিকে নিয়ে বাহিরে যেতো খেলতে।খাইয়ে দেওয়া,স্কুলে নিয়ে যাওয়া।
এখন আর কোনটাই সম্ভব না।কারন দুজনই তো এখন পরপারে চলে গিয়েছে।
@SraN
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন