রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯

অপূর্ণ ইচ্ছা

একটি পাগল মহিলার মধ্যেও যে একটি মাতৃ হৃদয় রয়েছে সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা।সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পাগলামি করে বেড়ায় দেখে যে তার মধ্যে কোন অনুভূতি নেই তা তো নয়।তারও হাসি কান্না রয়েছে সেটা আমরা বুঝতে চাইনা।কেউ কি একজন পাগলের সাথে ভালো ব্যাবহার করে পরবর্তীতে খারাপ ব্যাবহার পেয়েছে।না তা কোনোদিনও সম্ভব নয়।সেটা আমি মনে করি।
তাহলে আসা যাক মুল ঘটনায়
রহিমা ঢাকা শহরের একটি পাগল।তার যে একটি নাম আছে তা কেউ মনে রাখেনি।তাকে সবাই জটা পাগলী বলে খেপায়।যারা তাকে জটা পাগলী বলে তাদের সে তেরে যায় মারার জন্য।কিন্তু শহরের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা রহিমাকে স্নেহ করে।তাকে দেখলে দোকান থেকে কিছু কিনে খেতে দেয়।রহিমা তাদের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে।
কেননা সে তো পাগলী।সে তো সকলের কাছে একটু ভালো ব্যাবহার চায়।
সারাদিন নানা যায়গায় ঘোরার পর লোকে যে যা দিয়েছে তাই নিয়ে সে তার পলিথিনের ফুটপাতের ঘরটাতে ফিরছে।তার এক হাতে একটা বন রুটি অন্য হাতে একটি আধ পচা কলা যা একটি চায়ের দোকানি তাকে দিয়েছে।সেগুলো নিয়ে বাড়িতে ফিরছে।রাতের খাবারের জন্য।
রহিমা যখন রাস্তার মাঝখান দিয়ে যাচ্ছে তখন ভালোই রাত হয়ে গেছে।তখন সে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়।সে তখন এদিক ওদিক তাকিয়ে একটি ল্যাম্প পোষ্টের নিচে একটি বাচ্চার দোলনা দেখতে পায়।কাছে গিয়ে দোলনায় বাচ্চাটিকে দেখে তার খুব ভালো লাগে।সে তখন ভাবে হয়তো বাচ্চাটির মা কোথাও খাবার আনতে গেছে।এখন যদি সে বাচ্চাটিকে একা ফেলে যায় তাহলে বাচ্চাটির কোন ক্ষতি হয়ে গেলে বা কেউ যদি বাচ্চাটিকে ধরে নিয়ে যায়।তাই সে দোলনাটির পাশে গিয়ে বসে।
এমনভাবে মানুষের উপকার করতে গিয়ে মানুষের কতো যে মার খেয়েছে তার কোন ঠিক নেই।কিন্তু রহিমা ঠিকই মানুষকে সাহায্য করতে যায়।অনেকক্ষণ বসে থাকার পর যখন রহিমা দেখল যে কেউ আসছে না তখন সে বাচ্চাটির কাছে গিয়ে তার গাল ছুয়ে দেখল।বাচ্চাটির বয়স এক বছরের কম হবে।বাচ্চাটি খুব কান্না করছে।
রহিমা তখন বাচ্চাটিকে বলে
খিদা পাইছে তর।রুটি কলা খাইবি
বাচ্চাটি যেন রহিমার কথা বুঝতে পারে।তখন সে কান্না বন্ধ করে দেয়।রহিমা তখন একটু একটু করে রুটি ছিরে ছিরে বাচ্চাটির মুখে দিতে থাকে এবং একটু একটু কলা খাওয়াতে থাকে।
বাচ্চাটিকে খাওয়ানোর পর যখন দেখে যে কেউ আসছে না তখন সে বাচ্চাটিকে কুলে তুলে নেয়।বাচ্চাটিকে নিয়ে সে হাটতে থাকে।রহিমা এটুকু বুঝতে পারে যে এলাকার মানুষ ওর কাছে এই বাচ্চাটিকে দেখলে ওকে বাচ্চা ছিনতাইকারী বলে পিটিয়েই মেরে ফেলবে।কিন্তু সে বাচ্চাটিকে রেখে তো আসতে পারেনা।
সে যখন ওর ফুটপাতের ঘরে যায় তখন ওর পাশে যারা থাকে সকলে জিজ্ঞেস করে যে সে বাচ্চাটিকে কোথা থেকে পেয়েছে।
তখন রহিমা সকলকে সকল কিছু বলে।এবং বলে যে কেউ যদি বাচ্চাটিকে নিতে না আসে তাহলে বাচ্চাটিকে রহিমাই রাখবে।
সকলে রহিমার কোথা শুনে অবাক হয়ে যায় কিন্তু কেউ কিছু বলে না।কারন বলারই বা কি থাকতে পারে।একটি বাচ্চা এতো রাতে রাস্তার ধারে আসবে কীভাবে।নিশ্চয়ই বাচ্চাটির বাবা মা বাচ্চাটিকে ফেলে দিয়েছে।
প্রথম কিছুদিন সকলের মনে সন্দেহ হলেও কিছুদিন পর সব কিছু ঠিক হয়ে যায়।রহিমা বাচ্চাটিকে খুব আদর করে পালতে থাকে।রহিমার আছেই বা কি ,কিন্তু যা আছে তা দিয়েই সে বাচ্চাটিকে পালন করে।সকলে বুঝতে পারেনা একটি পাগলী একটি বাচ্চার এতো যত্ন করে কীভাবে।নিজে না খেয়ে বাচ্চাটিকে খাওয়ায়।
বাচ্চাটির নাম দিয়েছে সে।তইমুর।সে রাস্তায় রাস্তায় তইমুরকে নিয়ে ঘুরে।কতো আদরই না রহিমার মধ্যে আছে।সে ভাবে তার যদি টাকা পয়সা থাকতো তাহলে তইমুরকে অনেক আদর যত্ন করে পালত ।
বাচ্চাটি অসুস্থ হলে রহিমার পাগলামি যেন আরও বেড়ে যায়।সে সকলের কাছে গিয়ে বাচ্চাটির জন্য সাহায্য চায়।যে যা পারে তাই দিয়ে সাহায্য করে রহিমাকে।এভাবেই যেন বেশ কয়েক বছর কেটে যায়..............................
তইমুরের এখন চার বছর বয়স।সে এখন রাস্তার ছেলেদের সাথে দৌড়ে বেড়ায় সারাদিন।কিন্তু ব্যাবহারে সে সকলের চেয়ে আলদা।হয়তো সকলের সাথে থাকতে থাকতে ভাষা একরকম কিন্তু সে কখনো কারও সাথে খারাপ ব্যাবহার করে না।হয়তো সে সভ্য জগতের ছেলে হয়তো তাকে পাগলী ছোটবেলা থেকে সকলের সাথে ভালো ব্যাবহার করতে শিখিয়েছে বলে।
তইমুরকে সব বাচ্চারা খেলায় নেয় না।তারা তইমুরকে পাগলীর ছেলে বলে খেপায়।কিন্তু সে কিছু মনে করে না।কারন সে তো যানে যে তার মা পাগলী।সেই পাগলী মা তার জন্যই তার কতো যেন ভালোবাসা।দিনের শেষে পাগলীর কাছে গিয়েই তার শান্তি।
রহিমা কয়দিন ধরে খুব অসুস্থ।শরীর দিয়ে কেমন ফোসকা ফোসকা উঠছে।বিছানা থেকে উঠতে পারেনা।তইমুর রহিমার যত্ন করে ।গলির ছোট ডাক্তারের কাছ থেকে একটা ফোসকার মলম নিয়ে এসেছিলো কিন্তু কোন কাজে আসছে না।দিন দিন যেন কেমন দুর্বল হয়ে পড়ছে।
সকাল বেলা রহিমাকে সব কিছু দিয়ে তইমুর খেলতে চলে যায়।সারাদিন খেলে ।বিকেলবেলা তইমুরের রহিমার কথা মনে পরে।দৌড়ে ছাউনির ভেতর গিয়ে দেখে রহিমা কেমনভাবে যেন শুয়ে আছে।সে রহিমার কাছে গিয়ে তাকে ধাক্কা দেয় কিন্তু সে উঠে না।শরীর একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।
আশেপাশের সকলকে ডেকে আনলে সকলে বলে যে রহিমা মারা গেছে।এ কথা শুনে তইমুরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।তার এই পাগলী মাটা আর বেচে নেই।তার এই পাগলী ছাড়া তো আর দুনিয়াতে কেউ নেই।সে এখন দিনের শেষে কার কাছে যাবে।
রহিমাকে এলাকার কবরে কবর দেওয়ার পরেরদিন সকালে তইমুরের কিচ্ছু ভালো লাগছে না।সে যখন তার ছাউনির ভেতর যায় তখন তার খুব কান্না পেতে থাকে।সে এখন একা।তাই এখন সে বেশীক্ষণ ছাউনির মধ্যে থাকতে পারেনা।সে শান্তভাবে ঘুরতে থাকে।তখন এক চায়ের দোকানি তাকে ডেকে বলে
কেমন আছো মিয়া ভাই?পাগলীর জন্নে কষ্ট হচ্ছি।কি আর করবা কউ
তইমুর বিরস মুখে দাড়িয়ে থাকে
দোকানি তখন একটি কলা দেয় তইমুরকে।বলে যে
একটা সত্যি কথা কই।ওই পাগলী তোমার মা না।ও তো তোমারে কুড়াইয়া পাইছিল।নিয়া আইছে সাথে কইরা।
এই কথা শুনে তইমুরের মাথায় যেমন আকাশ ভেঙে পরে তেমনি পাগলীর জন্য শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যায়।
সে তখন নদীর ধারে গিয়ে পাথরের উপর বসে থাকে।এই কয়েকদিনের মধ্যে তার জীবনটা ওলটপালট হয়ে গেলো।সে নানাজায়গায় ঘুরতে থাকে।তার তো এখন আর কোন মায়া টান নেই।এখন সে যেখানে থাকবে সেখানেই ঠিক আছে।সে ভাবতে থাকে কে তার বাবা মা।ওকে রাস্তায় ফেলেই বা কেন গিয়েছিল।তার এই চার বছরের জীবনে এইসব ভাবনা অনেক বেশী কঠিন কিন্তু পরিস্থিতি তাকে এগুলো ভাবতে শিখিয়েছে।
এইভাবে তইমুরের জীবনে আরও তিনটি বছর কেটে যায়।সে আর তার সেই পুরনো পাগলীর এলাকায় ফিরে যায়নি।কেননা সেখানে গেলেই তার খুব কষ্ট হয়।রাস্তায় রাস্তায় সে ঘুরে।ছোটখাটো যে কাজ পায় তাই করে দেয় সে।খাওয়ার খরচ উঠে না কিন্তু কোনোমতে চলে যায়।এখনো তার মনে একটাই প্রশ্ন
কারা তার বাবা মা?
সে তার এই সাত বছরের জীবনে অনেক কিছু দেখে ফেলেছে।সে মানুষের ব্যাবহার দেখেছে।কিছু মানুষ কিরকম খারাপ ব্যাবহার করে আবার কিছু মানুষ খুব ভালো ব্যাবহার করে।অনেক কিছু শিখেছে।
তার মনে এখনো একটি আশা রয়েছে যে সে তার বাবা মায়ের সাথে দেখা করবে কিন্তু তা কখনো সম্ভব নয়।
এক সকালে তইমুর একটি নতুন এলাকায় গিয়েছে।সেখানে খুব সুন্দর নদী রয়েছে।কিন্তু সে লক্ষ্য করলো সেই এলাকায় তার মতো কোন বাচ্চা নেই।সকলেই তার বাবা মায়ের সাথে সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে ঘুরতে এসেছে।সে কোন কথা না বলে নদীটার পাশে গিয়ে বসে।নদীর স্রোত দেখে সে অবাক হয়ে যায়।কি সুন্দর এই নদী।তখন একটি মেয়ে ওর বয়সই হবে তইমুরকে ডেকে বলছে
তুমি এখানে এভাবে বসে আছো কেন।নদীর পানিতে পরে যাবে তো।আর ছি তুমি এটা কি পোশাক পরে আছো।কি নোংরা আর ছেরা পোশাক।
সে মেয়েটির দিকে তাকায় এবং বুঝতে পারে তার কথার উত্তর দেওয়ার দরকার নেই।কিছুক্ষণ পর আরও কিছু বাচ্চা আসে তার সাথে কথা বলতে।তারা বলে দেখ কি সাহস ওর।তুমার কি ভয় করেনা
তন্ময় শুধু বলে
না
তুমার নাম কি?
তইমুর
বাবা কি সুন্দর নাম।আমাদের নাম কেমন ভাঙা ভাঙা উচ্চারণ করতে হয়।
তইমুরের বাচ্চাগুলোকে খুব পছন্দ হয় কিন্তু তাদের সাথে তইমুরের অনেক বড় পার্থক্য।সে একটা অনাথ পথের ছেলে।
তখন একটা মহিলা তার পিছনে দাড়ায়।কোন কথা না বলে তইমুরকে টান দিয়ে দাড়া করিয়ে ফেলে।মহিলাটির চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে।মহিলাটি বলে
এই ছেলে তুমি এখানে এভাবে বসে আছো কেন।চলো আমার সাথে
মহিলাটি তইমুরকে একটি মার্কেট এ নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে তার সাইজ এর নানারকম জামা কিনে নেয়।তারপর তইমুরকে তার বাসায় নিয়ে গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে ভালো জামাকাপড় পরিয়ে নানারকম খাবার খাইয়ে রাস্তায় নিয়ে ছেড়ে দেয়।এবং বলে
সব সময় পরিষ্কার থাকবে এবং নদীর পাশে কখনো বসবে না
তইমুর বলে
সবাই তো আপনার মতো হয় না।আর আমার তো এতো টাকাও নেই যে ...
মহিলাটি আর কিছু বলে না।হন হন করে হেটে যায়।
তইমুর ভাবতে থাকে তার যদি মা থাকতো তাহলে তাকে এভাবেই আদর করতো।রাগ দেখাতো ঠিকই কিন্তু গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে দিত।
আবার ভাবে
এই মহিলার মনে হয় মাথায় সমস্যা আছে।
সে তখন আবার নদীর ধারে গিয়ে বসে এবং লক্ষ্য করে তাকে এখন এই বাচ্চাদেরই মতো লাগছে।তাকে আলাদা করা যাচ্ছে না।বেশ কয়েকটা মেয়ে তার সাথে বন্ধুত্ব করতে এগিয়ে আসে যারা তার দিকে আগে তাকিয়েও দেখেনি।তইমুর সকলের সাথে অনেকক্ষণ খেলা করে।সব বাচ্চা তইমুরের খেলা দেখে অবাক হয়ে যায়।সকল খেলাতে সবার চেয়ে এগিয়ে তইমুর।তইমুরের ইচ্ছা করে সব সময় এদের সাথে খেলা করতে কিন্তু এটা যে সম্ভব নয়।তাকে আবার তার পুরানো রাস্তায় ফিরে যেতে হবে।
তখন পিছনে চিৎকারে শব্দ শুনতে পায়।সে দেখে একটি বাচ্চা নদীর পানিতে পরে গেছে।তখন সে কোনোকিছু না ভেবে পানির মধ্যে ঝাপিয়ে পরে।নদীর পানি কনকনে ঠাণ্ডা।সে তার জীবনে এতো ঠাণ্ডা পানি জীবনে দেখেনি।সে বাচ্চাটিকে অনেক কষ্ট করে তুলে আনে।
এটা হয়তো একটু অবাক করা বিষয় যে তইমুরের বয়সই তো সাত বছর।সে আরেকটি বাচ্চাকে নদীর পানি থেকে তুলে আনে।
বাচ্চাটির মা তো বাচ্চাটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।সকলে তখন তইমুরকে ঘিরে ধরে।বাচ্চারা সবাই চিৎকার করতে থাকে
আমাদের সুপার হিরো।
এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়ে তইমুরের চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।তখন সকলে মিলে তোয়ালে কাপর চোপর যোগার করে তাকে মুছে দেয়।সকলে যখন জানতে পারে যে সে একটি রাস্তার ছেলে তখনও তারা তাকে দেখে ঘেন্না বোধ করে না।সকলে মিলে বলে আজ আমরা তোমার গল্প শুনবো,বলো
কিছুক্ষনের মাঝে সমস্ত কিছুর বেবস্থা হয়ে যায়।তইমুর একটি চেয়ারে বসে আছে।তার সামনে দুইশ এর মতো মানুষ বসে আছে তার জীবন কাহিনী শোনার জন্য।
তইমুরের ভেতরে কেমন যেন ঠাণ্ডা লাগছে কিন্তু সে সবাইকে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলতে শুরু করে
আমি তইমুর।আমি এক পাগলীর কাছে ছোট থেকে বড় হয়েছি।পাগলীর কিচ্ছু ছিলোনা কিন্তু সে আমাকে তার ক্ষমতার বেশী আদর করতো এবং ভালোবাসতো।প্রত্যেকদিন সে ঘুরে ফিরে যা পেতো আমার জন্য নিয়ে আসত।
আমি তার কাছে ৪ বছর বয়স পর্যন্ত বড় হয়েছিলাম।পাগলী একদিন খুব অসুস্থ হয়ে পরে।আমি তাকে রেখে খেলতে গিয়েছিলাম।ফিরে এসে দেখি পাগলী মরে পরে আছে।খুব কান্না পেয়েছিলো।কারন দুনিয়াতে পাগলী ছাড়া তো আমার কেউ ছিল না।
পাগলী মারা যাওয়ার পরের দিন এক চা দোকানি বলল যে আমি নাকি পাগলীর ছেলে নই।সে নাকি রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছে।আমি তখন কি করবো।কিছুই করার ছিলোনা।কিন্তু পাগলীর ওপর আমার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গিয়েছিলো।
তইমুর একটু থামল।তার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।
সে আবার বলতে শুরু করলো
আমাকে নাকি রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছে।আমি তো এখনো আশায় আছি একদিন আমার বাবা মায়ের সাথে দেখা হবে।তোমাদের মতো তখন আমারও মা বাবা থাকবে।
আর কিছু বলেনা তইমুর।সে ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে।তার সাথে দুইশর মতো মানুষও কান্না করতে থাকে।তইমুরের ভেতরকার ঠাণ্ডা লাগা ভাবটা এখন যেন আরও বেড়ে গিয়েছে।
সকলে কোন কথা না বলে তইমুরের মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে চলে যায়।তইমুরের একদিকে খুব ভালো লাগতে থাকে যে এতো মানুষ এখন তাকে ভালোবাসে।অন্যদিকে তাকে এক ঠাণ্ডা গ্রাস করে নিতে চাইছে।
তখন সন্ধ্যা সন্ধ্যা হয়ে গেছে।সে গাছের নিচেই শুয়ে পরে।সে খুব আবছা আবছা ভাবে সপ্নে দেখতে পায় একটি মহিলা ছোট একটি বাচ্চাকে কোলে করে ঘুম পারাচ্ছে।
কে সেই মহিলা এবং বাচ্চাটি?
তার যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখতে পায় একটি বড় হাসপাতালের বিছনায় শুয়ে আছে।অনেক মানুষ তার জন্য অপেক্ষা করছে।
ডাক্তার বলে দিয়েছে তইমুরের খুবই খারাপভাবে নিউমোনিয়া হয়েছে।আগে থেকেই ছিল।এই ভিজে যাওয়ার পর আরও বেরেছে।ডাক্তাররা কোন কিছু বলতে পারছেনা।
সকলে তখন তইমুরের সাথে দেখা করতে যায়।সকলের চোখে পানি।তইমুর তখন আসতে করে বলে
আমার মাকে তোমরা খুজে দিও।তোমরা আমাকে খুব ভালোবেসেছো।
তইমুরের চোখের কোনা দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে।কিন্তু তার মুখে একটি মিষ্টি হাসি লেগেই রয়েছে।
তইমুর যদি বেচে থাকতো তাহলে দেখতে পেতো পৃথিবীর কতো মানুষ তার দুঃখে কান্না করেছে।তার কথা গুলো একজন ভিডিও করে নিয়ে ফেসবুক এ ছেড়ে দিয়েছিলো।
তইমুর ঠিকই সকলের ভালোবাসা পেয়েছে কিন্তু তার শেষ ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেলো।তার বাবা মা কোথায় সেটা আর জানা হলো না।
Written by: Md Hridoy Hasan
Edit: SraNton Hossain

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...