শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯

মৃত্যু

-কি চাও তুমি?
-মৃত্যু
-কিন্তু কেন?
-আমার দিকে তাকিয়ে দেখো আমার কি অবস্থা।
-কেন কি হয়েছে?ডাক্তার যে বলছেন তোমার কোন অসুখ নেই,জবরদস্ত আছো তুমি।তাহলে মৃত্যু কামনা করছো কেন?
-ও তাই নাকি,আমি কীভাবে জবরদস্ত আছি?এই জীবনের কোন মানে হয়?
-কেন এই কথা বলছো?
-দেখো আমার এতো সময় নেই তোমার সাথে ফাউ পেচাল পারার।তুমি আমার কাছে পাঁচ মিনিট সময় চেয়েছিলে।কখন সময় পার হয়ে গেছে। এখন তুমি আসতে পারো
_কিন্তু
_কোন কিন্তু না।তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছেনা।
-ঠিক আছে আমি যাচ্ছি
-হুম যাও
সৈকত সাহেব চোখ বন্ধ করলেন।তার খুব ঘুম পাচ্ছে।একটি নার্স এসে তাকে নানারকম ঔষধ খেতে দিলেন।প্রত্যেকদিন তাকে একরকম জোর করেই ঔষধ খাওয়াচ্ছে।
সৈকত সাহেব একটি কলেজের বাংলার প্রোফেসর ছিলেন।তার টাকাপয়সার কোন অভাব নেই।কিন্তু তিনি এই অসহায় জীবন মেনে নিতে পারছেন না।বয়সের কারনে তাকে সারাদিন বিছনায় শুয়ে থাকতে হয়।হাটা চলা করতে পারেন না।তার এই জীবন পছন্দ না।তিনি এই জীবন থেকে মুক্তি চান কিন্তু তার ছেলেমেয়েরাই আসল সমস্যা করছে।তা নাহলে কোনদিন তিনি ইদুর মারার বিষ খেয়ে শুয়ে পড়তেন।
সৈকত সাহেবের ছেলে অনেকক্ষণ ধরে তার সাথে কথা বলার জন্য পাশে বসে আছে কিন্তু সৈকত সাহেব তার দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছেনা।সকলের প্রতি তার রাগ হয়েছে।
তার মতে কেন সকলে তার স্বাধীনতা হরন করছে।সে কি নিজের ইচ্ছায় মরতেও পারবে না।
-বাবা তুমি আমার সাথে কথা না বললে আমি থাকতে পারিনা তুমি সেটা বুঝো না
-চুপ কর বলছি।কথা বলবিনা আমার সাথে।একটু বুঝার চেষ্টা কর আমার কতটা কষ্ট হচ্ছে।তুই তো জানিস আমি কেমন মানুষ।আমি কি কোনদিন ঘরে বসে থেকেছি?তুই বল
-তাই বলে তুমাকে আমি কখনোই আত্মহত্যা করতে দেবোনা।তুমি আমার লক্ষি বাবা না বলো।
-হইছে হইছে ঢং কমা।এতো বড় হয়ে গেলি কিন্তু এখনো তোর ঢং যায় নাই।দাদুভাই কই গেছে?
-বাইরে খেলতে গেছে
-এবার বল কি বলতে এসেছিস?আমি তো এখন একটা বোঝা।আমাকে দিয়া কোন কাজ হবেনা।
-রাখো তুমার কথা।তুমাকে দেখে এখনো যে কোন মেয়ে পাগল হয়ে যাবে
সৈকত সাহেব তার দুইপাটি দাত ছাড়া মারি বের করে বলল
-এগুলা দেইখা পাগল হবে নাকি?হুম তাই হবে ভুত ভেবে মাথা নষ্ট হয়ে না যায়।
তখন দুজনে মিলেই খিল খিল করে হাঁসতে থাকে।
সৈকত সাহেবের মনে হয় “এইতো কিছুদিন আগে তিনি হাতে কলেজ এর কাগজপত্র সাথে করে নিয়ে ক্লাস করাতে যেতেন।কতো আনন্দ করে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন।তার পড়ানোর ধরনই অন্যরকম ছিলো।ক্লাস এর বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রীর প্রিয় শিক্ষক ছিলেন তিনি।এগুলো ভাবতে গেলেই তার কান্না এসে পড়ে।
এখন সেই সব প্রিয় শিক্ষার্থীগুলোই তার সাথে দেখা করতে আসে।তারা এখন অনেক বড় হয়েছে ঠিক তার ছেলে মেয়ের মতো।
সৈকত সাহেব আর এসব মনে করতে চাননা।কি হবে তার এসব মনে করে।
-দাদুভাই ও দাদুভাই কি ভাবছো এতো?আসো আমরা খেলি
-আমার সাথে কি খেলবে বলো?আমি তো বিছনা থেকে উঠতে পারিনা।
-তুমি না অনেক ভালো দাবা খেলতে পারো।আমাকে শেখাবে
-ও তাই নাকি।দাবার কোট নিয়ে আসো।তুমাকে আজকে দাবা খেলা শিখীয়ে দেই।
সৈকত সাহেবের মেয়ে তার স্বামী সংসার নিয়ে বিদেশে থাকে।
পাঁচ বছর পর..................
অয়ন তাদের বাড়ি পরিষ্কার করার সময় ধুলো মাখা একটি ডাইরি পায়।সে তখন সেই ডাইরিটি উল্টেপাল্টে দেখতে থাকে।তখন সে দেখে যে এটি তার দাদু সৈকত সাহেবের ডাইরি।অয়ন ডাইরিটির প্রত্যেকটি পাতা মনোযোগ সহকারে পড়ে এবং তার দাদুর জীবন কাহিনী পড়ে প্রায় কান্না করে দিতে চায়।
তার দাদু হয়তো নেই কিন্তু তার কথাগুলো ঠিকই রয়ে গেছে।
মৃত্যু মানুষকে মারতে পারে কিন্তু তার অস্তিত্বকে নয়।

=== SraNton Hossain; MD Hridoy Hasan

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...