বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

অতীত দেখা

টাইম মেশিন বা এরকম কিছু যদি সত্যি আবিষ্কার হতো যা দিয়ে আমাদের অতীত দেখা যেতো কতো ভালো হতো তাই না।আমাদের ছোট বেলার কতো মজার মজার সময়গুলো হাড়িয়ে ফেলেছি চিরদিনের জন্য।যা হয়তো ফিরে পাওয়া সম্ভব না কিন্তু অনুভব করাও কি অসম্ভব।বিজ্ঞানীরা কি আবিষ্কার করতে পারেনা এমন কোন যন্ত্র? 

*সাল ২০৫০। পৃথিবীর মধ্যে যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী তইমুর।সে এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছে যার মাধ্যমে মানুষ তার পুরানো দিনে ঘুরে আসতে পারবে।ঘুরে আসতে পারবে তা ঠিক নয়,সে তার পুরানো দিন গুলো দেখতে পারবে। 
বিজ্ঞান একাডেমীর বিশেষ কিছু বিজ্ঞানী তার কথা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনা।এতো বছর ধরে যে আবিষ্কার এতো বড় বড় বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পারলো না তা নাকি বাংলাদেশের এই খুদে এক বিজ্ঞানী আবিষ্কার করে ফেলেছে। 
তইমুর পৃথিবীর নামি দামি সকল বিজ্ঞানীকে ডাকে তার এই আবিষ্কার দেখানোর জন্য।সে যে শুধু মাত্র বিজ্ঞান মহলে এসেছে শুধুমাত্র এই আবিষ্কারটি করার জন্য।সে তার অতীত দেখতে চায় শুধু।তারপর সে এই আবিষ্কার বিজ্ঞান একাডেমীর হাতে তুলে দিবে।সে তার পুরানো দিন গুলো দেখতে চায় যেখানে সে এবং তার বন্ধুরা মাঠে খেলা করছে।অনেকে তাকে এর জন্যে পাগল বলেও আখ্যা দিয়েছেন কিন্তু সে তার জায়গায় অনর ছিলো। 
সভায় পৃথিবীর বেশ কয়েকটি প্রতিভাবান বিজ্ঞানী এসেছেন।তইমুর সকলের সামনে তার সেই যন্ত্র প্রকাশ করলো।যেখানে মানুষের মাথায় পড়ার মতো একটি হেলমেট এবং নানারকম বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি।পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাবান বিজ্ঞানী টমাস বলে উঠলো 
-আমি দেখতে চাই এটি কাজ করে কিনা।আমি প্রথমে পড়বো এই হেলমেট। 
তইমুর খুশী হয়ে যায়।সে টমাসকে হেলমেটটি পড়িয়ে দেয় এবং নানারকম যন্ত্রপাতি ঘাটতে থাকে।এই হেলমেটের সাথে একটি মনিটর যুক্ত করা রয়েছে।টমাস যা দেখবে বাকি সবাই তাই দেখতে পাবে।কিছুক্ষণ পর মনিটরে একটি উজ্জ্বল আলো ফুটে উঠে।ধীরে ধীরে সেটা পরিষ্কার হতে থাকে।সেখানে দেখা যায় একটি ছেলে একটি ফাটা বল নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।ছেলেটির চুলগুলো একেবারে বোকাদের মতো আঁচড়ানো।সবাই ছেলেটিকে চিনে ফেলল।এটি বিজ্ঞানী টমাস।এলাকার ছেলে তার ফুটবল তা ফাটিয়ে দিয়েছে আর সে সেই ফাটা বল নিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করছে। 
সভার সকলে বিকট শব্দে হেসে উঠলো।তইমুর সময়টা কয়েক বছর এগিয়ে দিলো যেখানে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানী টমাস একটি বই পড়তে পড়তে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেটে যাচ্ছে।সেই বোকা ছেলেটি আজকে এতো বড় বিজ্ঞানী। 
বিজ্ঞানী টমাস তার হেলমেট খুলে ফেলল এবং বলল 
-সত্যি তুমি অসাধারণ আবিষ্কার করেছো তইমুর। 
তইমুরের তো গর্বে বুক ফুলে উঠছে।তইমুরকে বিজ্ঞানী টমাস কানে কানে বলল 
-এই ফুটেজের কোন রেকর্ড থাকলে ডিলিট করে দাও। 
তইমুর বলল 
-স্যার আপনাকে স্ক্যান করার সময়ই রেকর্ড বন্ধ করে দিয়েছি।আপনার মতো এতো বড় বিজ্ঞানীর অতীত রেকর্ড করার মতো সাহস আমার নেই। 
-ধন্যবাদ তইমুর। 

তইমুরের আবিষ্কারের পর পৃথিবীর অনেক বিজ্ঞানী তার সাথে দেখা করতে এসেছিলো।অনেকে তইমুরের আবিষ্কার কিনে নিতে চেয়েছে কিন্তু সে এটি বিক্রি করেনি।সে এটি বিজ্ঞান একাডেমীতে দিবে বলে ঠিক করেছে। 
এখন সন্ধ্যা সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।সে তার অতীত দেখার যন্ত্রটি নিয়ে পড়লেন।আজ সে তার পুরানো দিনে কাটানো সময়গুলো দেখবে।তইমুরের সহকারি জেসিকা তাকে সাহায্য করছে যন্ত্রগুলো ঠিক জায়গায় লাগাতে।যখন যন্ত্রগুলো চালু করা হলো তখন তইমুরের সামনে অন্ধকার হয়ে এলো।তারপর ধীরে ধীরে সব কিছু পরিষ্কার হতে থাকে।সে দেখতে পায় 
একটি ছেলে একটি ছোট ইটের টুকরো লাথি দিতে দিতে স্কুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।ইয়া বড় একটি ঢাউস সাইজের ব্যাগ তার পিঠে।ছেলেটি ক্লাসের সামনে গিয়ে দাড়ায়।দেখে স্যার এসে পড়েছে। 
স্যার তা খুব মজার।স্যার এর নাম ভানু ।কিন্তু সবাই মজা করে বলে বানো স্যার।স্যার বললেন 
-কিরে আজকেও দেরি করে আইলি দেখি। 
-হুম।দুঃখিত স্যার 
-যা সীটে যাইয়া বয় 
ছেলেটি সীটে গিয়ে বসে। 
ভানু স্যার কখনো কোন ছাত্রকে মারেন না।সকলের সাথে মজার সম্পর্ক তার।ছাত্রদের সাথে মজার মজার কথা বলেন। 
স্যার বিজ্ঞান ক্লাস করাচ্ছেন।এমন সময় স্যার পড়ানো বাদ দিয়ে বললেন  
-একটা কথা বলতে পারবি নি?পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তির জায়গা কোনডা।দাড়া ইসলামিক দৃষ্টিতে বলা যাইব না কিন্তু 
-ছেলেটি বলে উঠে পায়খানা 
সবাই হো হো করে হাঁসতে শুরু করে।স্যার সকলের হাসি থামার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।হাসি থামলে স্যার বলেন 
-এক্কেবারে ঠিক উত্তর দিছস।এবার বল ক্যারা কেম্নে পায়খানা করছ 
সবাই তো লজ্জায় শেষ।এই ধরনের স্যার হলো ভানু স্যার। 

তইমুর তার সহকারীকে বলে সময় পরিবর্তন করতে।সময় পরিবর্তন করে এক সপ্তাহ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।তখন তইমুর দেখে 
ছেলেটি ক্লাস করছে খুব মনোযোগ দিয়ে।হাবিব স্যার এর ক্লাস।এমন সময় একটি বই এর প্রকাশনি থেকে তাদের বই এর বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য বাচ্চাদের জন্য ছোট ছোট বই নিয়ে এসেছে।সকলের মাঝে স্যার বই বিতরন করে দিচ্ছে।বই এর নানা রকম রঙ।একটি লাল একটি সবুজ একটি হলুদ।ছেলেটি চাইছিলো যাতে করে তাকে লাল বইটি দেওয়া হয় কিন্তু দিলো সবুজ রঙের বই।সে মন খারাপ করে তার পাশের বন্ধুদের বলল 
-দেখলি আমাকে লাল রঙের বইটি দিলো না।স্যার কিরকম খারাপ। 
ক্লাসের শেষে ছেলেটির দুই বন্ধু মজা করার জন্য স্যার কে এই কথাটি বলে দেয়।স্যার বিষয়টি খুবই সেনসিটিভলি নেয়।তিনি এসে ছেলেটিকে অনেক কথা শোনায়।ছেলেটি খুবই কান্না করতে থাকে।কারন সে ভাবতে পারেনি এমন হবে।ছেলেটির বন্ধু দুজনও একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।তারা ভাবতে পারেনি বিষয়টি এমন হবে।স্যার ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে 
-এটি কি তোমার রাগের কান্না নাকি অনুতাপের কান্না। 
ছেলেটি হেচকি তুলতে তুলতে বলে 
-আমায় মাপ করে দিন স্যার।আমার ভুল হয়ে গেছে। 
হাবিব স্যার কোন কথা না বলে চলে যায়।সকলে ভয় পায় এই ভেবে যে এই কথাটি প্রধান শিক্ষিকার কানে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।তিনি খুবই কোমল মনের মানুষ কিন্তু কোন অন্যায় দেখতে পারেন না।সবাই শুধু প্রার্থনা করছিলো যেন প্রধান শিক্ষিকা না আসে।কিছুক্ষণ পড়েই ছুটির ঘণ্টা দিয়ে দেয়।সবাই হাফ ছেড়ে বাচে। 
কিন্তু কোন লাভ হয় না।সকলে দেখে প্রধান শিক্ষিকা দরজার সামনে দাড়িয়ে।তিনি অনেক কথা শোনায় ছেলেটিকে।ছেলেটি একটি কথাও বলে না।তার পর ছেলেটিকে বেশ কয়েক ঘা লাগিয়ে দেয়।কারন তা নাহলে হয়তো হাবিব স্যার অন্য কিছু মনে করবেন।ছেলেটি কোন শব্দ করে না।সব মার হজম করে নেয়।আর সে তো আসলেই একটি অন্যায় করে ফেলেছে।আর প্রধান শিক্ষিকা যে তার অনেক শ্রদ্ধার একজন মানুষ। 
মুখ বুজে বাড়িতে চলে যায়।বাড়ি গিয়েই মায়ের কোলে মুখ গুজে সে কান্না করতে শুরু করে।সমস্ত কথা সে তার মায়ের কাছে বলে।মায়ের মুখটাও অন্ধকার হয়ে যায়।ছেলে এভাবে কান্না করলে সহ্য করতে পারে না যে সে কিন্তু ছেলে তো তার অন্যায় করেছে অনেক।সে ছেলেকে অনেক ভাবে বোঝায় যেন কান্না না করে। 
পড়ের দিন ছেলেটি স্কুলে যায় মাথা নতো করে।সে যে অন্যায় করেছে তারপর মাথা উচু কীভাবে করবে।প্রথম ক্লাসেই প্রধান শিক্ষিকা আসেন।তিনি বেশ কিছুক্ষণ নিজেই ক্লাস নেন।যাওয়ার আগে প্রধান শিক্ষিকা ছেলেটিকে ডেকে আনেন কাছে।ছেলেটিও খুব ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়।যাওয়ার পর প্রধান শিক্ষিকা ছেলেটিকে ধরে অঝোর ধারায় কান্না করতে থাকে।তিনি যেভাবে মেরেছেন সেটা হয়তো তাকে খুব যন্ত্রণা দিয়েছে। 
প্রধান শিক্ষিকার কান্না দেখে ছেলেটিও কান্না করে দেয়।তার বাধ যেন আর মানেনা।পুরো ক্লাস এই দৃশ্য দেখে।সবার চোখেই হয়তো পানি জমে উঠেছে। 
তখন তইমুর বলে সময় পরিবর্তন করো। 
কয়েক মাস এগিয়ে নেয়ার পর সে দেখতে পায় একটি মেয়ের সাথে ছেলেটির খুব ঝগড়া হচ্ছে।মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দর।পরীর মতো দেখতে তার সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।এক পর্যায়ে ছেলেটি মেয়েটির হাত ধরে প্রধান শিক্ষিকার কাছে বিচার দিতে নিয়ে গেলো।প্রধান শিক্ষিকা কিছুক্ষণ মেয়েটিকে বকাবকি করলো। 
মেয়েটির একেবারে কাদো কাদো অবস্থা।মেয়েটির অবস্থা দেখে ছেলেটির খুব খারাপ লাগে।সেও তখন কান্না করতে থাকে। 
এই ব্যাপারটি চিরো স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো একটি ঘটনা। 
তখন তইমুর বলে বন্ধ করো।সহকারী বন্ধ করে দেয়।তার মাথা থেকে হেলমেট খোলার পর সহকারী দেখে যে পুরো গাল পানি দিয়ে ভেসে যাচ্ছে।এতক্ষন এইসব দেখে খুব কান্না করেছে তইমুর। 
তইমুর নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলে  
-যন্ত্রটি বিজ্ঞান একাডেমীতে পাঠানোর বন্দোবস্ত করো।আর আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবো। 
তিনি তার অতীত দেখতে চেয়েছিলেন বলে এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছে ।তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন এখন এটি পুরো পৃথিবীর কাজে আসুক।নাহয় কিছুদিন পর পর গিয়ে তইমুর তার অতীত দেখে আসবে।কেউ আপত্তি করার কথা নয়।কারন তিনি এটির আবিষ্কারক। 
সকলের কাছে তিনি এখন অনেক সম্মানের মানুষ হয়ে গিয়েছেন। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...