শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯

জীবনের মানে



কিছুদিন ধরে একটি জিনিষ আমাকে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে।
আমাদের দেশের ধনী মানুষগুলো এমন হয় কেন।তাদের কি কখনো আমাদের এই সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশকে অনুভব করার ইচ্ছা হয়না।তাদের কি এই কৃত্রিম জগত ছাড়া অন্য কোন জগত নেই।
আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি।একটু অন্ধকার হয়ে এসেছে চারপাশ।দোকানে যাচ্ছি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনতে।রাস্তায় হালকা পানি জমেছে।তার মধ্যে একটি পাজেরো গাড়ি আসছে তার উজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে।আমি একটু পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।পানি এসে লাগবে নাহলে।আমি মনে করেছিলাম পানি দেখে হয়তো গাড়ির স্পীড কমাবে কিন্তু কিসের কি।একটি মানুষ যে দাড়িয়ে রয়েছে সেটিও যেন গাড়ির ড্রাইভার দেখতে পায়নি।ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলো।আমার কাপর ভিজে একেবারে শেষ হয়ে গেছে।গাড়ির ভেতর দেখলাম একটি মেয়ে এবং একটি মহিলা বসে রয়েছে।মহিলাটি হয়তো মেয়েটির মা।দুজনেই মোবাইল এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
মেয়েটির মুখে মোবাইল এর আলো পড়ে কেমন নিষ্পাপ একটি বাচ্চার মতো লাগছে।
এই মানুষগুলো কি কখনো রাতের আকাশ দেখে না।আজ যে এতো সুন্দর একটি চাঁদ উঠেছে, চার পাশে আলো ছড়াচ্ছে এগুলো কি এই মানুষগুলোকে আকৃষ্ট করতে পারেনা।মাঝে মাঝে মনে হয় এই মানুষগুলোর গাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে দেই।তারপর তাদেরকে আমার মহামূল্যবান ভাষণ দিয়ে দেই।হয়তো গাড়ি থামাবেই না।আমার ওপর দিয়ে চালিয়ে দেবে।দিক চালিয়ে।আমিও দেখতে চাই এদের মন বলে কিছু আছে নাকি।
কি আর করার।এই ভেজা কাপড় নিয়েই দোকান থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে আসলাম।
আমাদের মতো সাধারন মানুষগুলো এই প্রকৃতিকে অনুভব করতে পারছে।হয়তোবা অসাধারণ হয়ে গেলে এইরকম হয়ে যায় মানুষগুলো।তারা তাদের বাড়ি গাড়ি ছাড়া কিছুই বুঝেনা।তারা এর বাইরে কিছু দেখতেই পায়না যে।
মাঝে মাঝে মনে হয় যদি আমার বয়সই কোন কোটিপতির ছেলে অথবা মেয়েকে যদি সামনে পেতাম তাহলে তাকে প্রশ্ন করতাম
তুমি কি কখনো রবীন্দ্রনাথ এর লেখা পড়েছ?কখনো কি তুমি কাজী নজরুল এর কবিতা পড়েছ?তুমি কি কখনো শরৎ চন্দ্রের লেখা পড়েছ?
এই ছেলেমেয়ে গুলো তো সারাদিন কানের মধ্যে হেডফোন গুজে ডিজে স্নেক ,হানি সিংহ এর গান শুনতে থাকে।তারা বাংলা সাহিত্যের কি বুঝবে।এই ছেলেমেয়েগুলোর বাবা মা কি করে।তারা তাদের ছেলেমেয়েগুলোকে হয় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়তে পাঠায় নাহলে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়।
ছেলে তাদের শিক্ষিত হয়ে দেশে ফিরে আসে।দেশে ফেরার পর তারা কি বলে
-ছি কি নোংরা রাস্তা।এখানে কোন ভদ্র মানুষ থাকতে পারে।
আর হ্যাঁ তারা এই কথাগুলো বলে ইংলিশে।তারা তো বাংলা ভাষা গুলিয়ে খেয়ে এসেছে বিদেশ থেকে তাই না।
আমার দরকার নেই এতো শিক্ষা।আমি আমার পড়ালেখা শেষ করে একটি ছোট চাকরী করবো।কোন ঝামেলা নেই এই জীবনে।হয়তো একটু কষ্ট হবে কিন্তু যখন পরিবারের সাথে পূর্ণিমা রাতের চাঁদ দেখতে বসবো কতোই না শান্তি থাকবে আমাদের জীবনে।ঠিক তখন আমাদের পাশের বাসার বন্ধুটি টাকা গুনতে গুনতে জীবন তামা তামা করে ফেলবে।টাকার কুমির হয়ে যাবে একটা।কিন্তু সে তো জীবন মানে কিছুই বুঝবেনা।শুধু চিনবে টাকা।
হয়তো সেদিন আমার ছেলেটি বন্ধুটির মেয়েকে জীবনের মানে বোঝাবে।রাতের আকাশ দেখা শেখাবে।

===========SraNton Hossain; MD Hridoy Hasan

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...