শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯

পবিত্র বন্ধুত্ব

রাস্তা দিয়ে একটি মেয়ের সাথে একটি ছেলেকে হেটে যেতে দেখলেই আমরা আর চোখে তাকাই।একটি মেয়ের সাথে একটি ছেলের কি পবিত্র বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে না নাকি।
আমাদের মানসিকতা এমন হয়ে গিয়েছে যে সব কিছুই খারাপ ভাবে বিবেচনা করি।
নীরবের আজকে কলেজে প্রথম দিন।সে তো ভয়েই শেষ।সারা জীবন মায়ের আচলের নিচে থেকেছে সে।বাইরের পৃথিবীটাকে বোঝার সুযোগই যে পায়নি।না,এখানে নীরবের মাকে আমি দোষ দিচ্ছি না।কিছু কিছু মা আছে যারা তাদের সন্তানকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশী আগলে রাখে।
নীরব ভাবতে থাকে যে কলেজের ছাত্র গুলো কেমন হবে?তারা নীরবকে কীভাবে দেখবে?গুটি গুটি পায় সে কলেজের ভেতর যায়।মাথার চুল আঁচড়ানো একেবারে সেপ্টে।জব জবে তেল দেওয়া শরীরে একটি ঢোলা ফতুয়া আর ঘারে একটি পাটের তৈরি ব্যাগ।একেবারে বোকা কবি।
ক্লাসে ঢোকার পর সকলে নীরবের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।তারা যেন ভিন গ্রহের প্রাণী দেখছে।ভিন গ্রহের প্রাণীই তো বলা চলে।ক্লাসের সব থেকে মিশুক ধরনের ছেলেটা এগিয়ে আসে নীরবের সাথে কথা বলার জন্য।সে বলে,
_নতুন ক্লাসে তোমাকে স্বাগতম।আমি নিলয়।
নীরবের মধ্যে থেকে জড়তা একটু কেটে গেছে।সে বলে
-আমি নীরব
-বাহ খুব ভালো নাম।আসো আমার পাশে এসে বসো।
নীরব খুব খুশি হয়।সে ভাবতে থাকে হয়তো এই ছেলেটিই তার কলেজ জীবনের প্রথম বন্ধু।সে হাসি মুখে নিলয়ের পাশের সীটে গিয়ে বসে।স্যার ক্লাস করিয়ে যায়।তখন ক্লাসের কিছু দুষ্টু টাইপ এর ছেলে নীরবকে জালানোর জন্য চলে আসে।কিন্তু নিলয় সব কিছু পাশ কাটিয়ে নিয়ে যায়।হয়তো সে নীরবকে প্রথম দেখাতেই বুঝতে পেড়েছিল নীরব যেমন বোকা ধরনের ছেলে হয়তো সকলে ওকে খুব জালাতন করবে।নিলয় তখন নীরবকে কলেজ ঘুড়িয়ে দেখানোর জন্য নিয়ে যায়।কলেজের সব জায়গা ঘুরে দেখার পর নিলয় নীরবকে বলে
-আগে এটা বলো তোমার এমন চুলের স্টাইল কে করে দিয়েছে ?
-আমার আম্মু,কেন?
-তুমি যদি কলেজে টিকে থাকতে চাও তাহলে এমন থাকলে চলবে না।তোমাকে দেখে যে কেউ বলদ বলে দিবে।আমার কথা কিন্তু খারাপ ভাবে নিয়ো না।
-আরে না ঠিকই তো বলেছ।
নিলয় নীরবকে নিয়ে বড় ভাইদের হোস্টেলে গিয়ে তার মাথা শ্যাম্পু করিয়ে চুলের ধরন একটু পাল্টে দেয়।এবং বলে
-এখন একটু ভালো দেখা যাচ্ছে।তোমার ফতুয়াটা পাল্টানো গেলে ভালো হতো।তোমার শরীরের মাপ আর আমার শরীরের মাপ তো প্রায় এক।
-তাতে কি হয়েছে?
-দাড়াও না দেখছি।আমার একটি এক্সট্রা গেঞ্জি আছে ব্যাগে।
কিছুক্ষণ পর নীরবের পুরো চেহারাই পাল্টে ফেলে।এখন অনায়াসেই কলেজের কয়েকটি মেয়ে নীরবের প্রেমে পরে যেতে পারে।
নীরবকে দেখে এখন অন্যরকম লাগছে।জিন্স এবং গেঞ্জির সাথে কাধে পাটের তৈরি ব্যাগ।অসাধারণ মানিয়েছে বলা চলে।
নিলয় নীরবের সাথে ফারহানার পরিচয় করিয়ে দেয়।কলেজের সবচেয়ে সুন্দর এবং নিষ্পাপ মনের মেয়ে হচ্ছে ফারহানা।সে কাউকে কষ্ট দিয়েছে বা খারাপ কোন কথা বলেছে এমন কোন রেকর্ড নেই বললেই চলে।
কিছুদিনের মধ্যে নীরবের সাথে নিলয় এবং ফারহানার অসাধারণ বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়।নীরব তার সব কথা নিলয় এবং ফারহানার সাথে আলোচনা করে।
এখন কলেজে নীরব এর ফ্যান বলতে অভাব নেই।সকলের ভালো লাগার মানুষ হয়ে উঠেছে নীরব।সকল স্যার রাও নীরবকে খুব স্নেহ করে।নীরব সবচেয়ে ভালো হচ্ছে কবিতা আবৃতি এবং বিতর্কতে।যখন সে কবিতা আবৃতি করে তখন সকলে হা করে থাকে।
কিন্তু একটি জিনিস ভেবে দেখুন যদি নীরব বোকা বোকা থাকতো,বোকাদের মতো চুলের স্টাইল থাকতো তাহলে সে যত ভালোই কবিতা আবৃতি করুক না কেন আমরা তাকে একটু অবজ্ঞার চোখে দেখতাম।দুনিয়াটাই এরকম।
আর এখনকার সময়ে সহজ সরল মানুষের দাম কোথায়।যারা একটু সাধারণ জীবন যাপন করে,কোন ঝামেলার মধ্যে থাকে না তাদেরকে তো আমরা দামই দেই না।এক কথায় বলে দেই
-সালা একটি আসতো গাইয়া টাইপ এর।
জীবনে কিছু কিছু সময়ে বন্ধুগুলো আমাদের জীবনের এমন পরিবর্তন আনে যা হয়তো আমাদের জীবন এর মোর ঘুরিয়ে দেয়।
যাই হোক নীরবরা তিন বন্ধু সব সময় একসাথে থাকে।কলেজে এক সাথে বসা রাস্তা দিয়ে এক সাথে যাওয়া।আমাদের সমাজের মুরব্বীরা বা বয়স্ক মানুষরা একটু কটূক্তি করে বসে।তারা শেষ পর্যন্ত কি বলে
-এতো বড় ঢেংরা মাইয়া মানুষ দুইডা জোয়ান পুলার লগে রঙ ঢং কইরা যাইতাছে।
কিন্তু তাতে নীরবদের কি।তারা ভালো বন্ধু সারাজীবন থাকবে যে যাই বলুক না কেন।তারা তো অন্যায় কিছু করছে না।
বন্ধুত্বের মধ্যে পবিত্রতা রক্ষা করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।


===SraNton Hossain

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...