শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০

সেমিনার রুম


(১)
হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সেমিনার রুম।জানালার পাশের খালি টেবিলটিতে বসে রয়েছি।জানালার বাইরে বিরাট একটি বটগাছ এবং ছোট্ট একটি পুকুর ছবির ফ্রেমের মতো শোভা পাচ্ছে।ভালো না লাগার কোন কারণ নেই যে।
জানালার পাশের ছবি রাখার ফ্রেমটিতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি।কতো পুরোনো এবং স্মৃতি মাখা ছবি দেখা যাচ্ছে।কয়েকটি ছবির ওপর আমার চোখ বারবার ঘুরছে ফিরছে।
একটি ছবি দেখে মনে হচ্ছে শীতকালে তোলা।পেছনের দিকের পাহাড়গুলো কুয়াশার চাদড়ে মোড়ানো।ছবিটা পুরোনো হওয়ায় অতোটা স্পষ্ট নয়।
বেশ কয়েকজন তরুণ ছেলে পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।একজনের হাতে গীটার আর বাকিদের ঠোঁটে মিষ্টি এক চিলতে হাসি।ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে রঙিন ক্যামেরার প্রচলন বা ঐ সময়কালের তোলা।
আরেকটি ছবির ওপর আমার চোখ আটকে গেলো।
সরু একটি নদী, দুই পাশে উচু ও সবুজ পাহাড়।নদীর পানিতে পাহাড়ের ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে।ওপরের নীল আকাশ সাথে সাদা সাদা মেঘ।
নদীর বুকে নৌকার মাঝে বেশ কয়েকজন ছেলে বসে রয়েছে।হাস্যোজ্জ্বল চেহারাগুলো দেখে মনের কোথায় যেন পুলক অনুভব করতে পারছিলাম।ছেলেগুলোর পোষাক দেখে একটি স্যারের কথা মনে পড়ছে।স্যার বলেছিলো,
--"আজ থেকে বিশ বছর অতীতে ছেলেদের কাছে একটি স্টাইল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলো।ঢোলা তৈরি করা প্যান্ট সাথে সার্ট বা গেঞ্জি যাই হোক না কেন প্যান্টের মাঝে গুজে পরিধান করা।সাথে চোখে কালো একটি চশমা।"
স্যারের কথার সাথে ছেলেগুলোর কাপড় পরিধান করার ধরন অনেকটা মিলে যাচ্ছে৷সামনের দিকে একটি ছেলে নৌকার পাটাতনে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছে।তার মাথায় এখনকার স্টাইলে একটি ক্যাপ শোভা পাচ্ছে।যা অনেকটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে বলা চলে।কোথায় যেন সকল কিছু ঠিক নেই।কিন্তু এই ছবির বয়স অনায়াসেই পনেরো বছর পার হয়ে যাবে।
আচ্ছা এই ছেলেগুলো এখন কোথায়?তারা সকলের হয়তো মধ্যবয়সী মানুষ।তারা কি তাদের সোনালী অতীত স্মৃতিতে অনুভব করতে পারে?তারা যদি কখনো কলেজের এই সেমিনার রুমে এসে এই ছবিগুলো দেখতে পায় তাহলে তাদের কেমন লাগবে?
কষ্টের অনুভূতি হবে হয়তো।
কিন্তু তারা কি কখনো এক সাথে হতে পারবে?সম্ভাবনা খুবই কম।মানুষগুলো হয়তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরেছে পুরো দেশে চাকরির সুবাদে।শিক্ষা জীবনের পর হয়তো সকলের একসাথে হওয়াই হয়নি।

(২)
নিচে পুকুর এর কিনার থেকে কয়েকজন ছেলে মেয়ের কণ্ঠ ভেসে আসছে।অনেকটা অস্পষ্ট কিন্তু গানের মতো শোনাচ্ছে।সকলে মিলে গান গাইছে হয়তো।
এমন সময় একটি নাম না জানা পাখি তার সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে তুলছে।তার মনে হয়তো অফুরন্ত আনন্দ।
এই পাখি একদিন অতীত হয়ে যাবে,তার আনন্দ ধ্বনিও অতীর হয়ে যাবে,ঐযে গান গাইছে যেই ছেলে-মেয়েগুলো তাদের গাওয়া গানও একদিন অতীত হয়ে যাবে।
শুধু স্মৃতিগুলো জঞ্জালের মতো আটকা পরে থাকবে এই গোলক ধাধায়।
@SraNton Hossain

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...