রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৯

বাস্তবিক জীবন

বাস্তবিক অর্থে আমার জ্ঞান খুব সামান্যই।পৃথিবীর কিছুই আমি দেখতে পারিনি,পারিনি পৃথিবীকে অনুভব করতে।আর ভবিষ্যতেও যে পারবো তারও কোন সম্ভাবনা নেই।
ঘরের কোনায় বসে বসে রাজ্যের বই পড়াই আমার অভ্যাস।এমন দিনও গিয়েছে যখন টেবিল ফ্যানটি ঘুরেই চলেছে আর আমি বই পড়েই যাচ্ছি।আমার পড়া বইয়ের তালিকায় থাকে হিমু,মিসির আলী,বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী,শরত রচনাবলী,কিশোর থ্রিলার এই ধরনের বই।
আমার পড়া বইয়ের তালিকায় বা প্রিয় লেখকদের মধ্যে রবিন্দ্রনাথের কোন জায়গা নেই।এর জন্য আমাকে অনেক কটু কথাও শুনতে হয়েছে।আরে আমার কথা
-আমি তো জোর করে তার ওপর ভক্তি আনতে পারবো না।রবিন্দ্রনাথের বিষয়ে না আসাই ভালো।আমি যাদের লিখা বই পড়ি তাদের মতো ভাবতে চেষ্টা করি।তাদের পথ অনুসরণ করে কল্পনার জগৎ তৈরি করার চেষ্টা করি।আমার যে নিজের কোন ভাবনার জগৎ নেই তাও নয়।অবশ্য আমি দুনিয়ার কতোটুকুই বা দেখেছি।তার পরও আমার ভাবনার জগৎ বলতে আমার বাড়ি থেকে কলেজ এবং সেই পুরানো রাস্তাটি।এগুলোকেই আমি আমার ভাবনার মাঝে তুলে ধরতে চাই।
আমার নিজস্ব কিছু মতোবাদ আছে যদিও সেগুলো খুব সামান্যই।না থাক সেগুলো নাই বললাম।
আচ্ছা মৃত্যু জিনিসটা আসলে কি?
আমার মতে আমাদের আত্মাকে আমাদের শরীরটি বহন করতে খুব কষ্ট হয়।যখন সব কিছুরই স্বাধিনতা থাকতে পারে তাহলে আমাদের আত্মাও স্বাধিন হওয়ার অধিকার রাখে।সেই অধিকারের নামই কি মৃত্যু?
ধর্মীয় বিষয় নিয়ে খুচাখুচি না করাই ভালো।তা নাহলে মানুষ আমাকে নাস্তিক এর তকমা লাগিয়ে দেয় তার কোন ঠিক নেই।
আরেকটি কথা।পৃথবীতে কি মায়ার কোন জায়গা আছে?মানে মায়া কি পৃথিবীতে ভালো কিছু তৈরি করতে পারে?
সাহিত্যের দিক দিয়ে বলতে গেলে,না।কেনোনা যখন সাহিত্যিক কারও প্রতি মায়ার বাধনে আটকা পরে যায় তখন তাকে দিয়ে মহৎ কোন সৃষ্টি সম্ভব না।
আমার তো মনে হয় এই লিখালিখির দুনিয়াটি নিজেই একটি মায়া।না আমি এই মায়ার দুনিয়া পছন্দ করি না কিন্তু লিখালিখিকে পছন্দ করি।
সাহিত্যিকরা তাদের সৃষ্ট চরিত্রের মাঝে জীবন প্রদান করেন কি নিপুণভাবে কিন্তু আমি কেনো পারিনা?
কারন আমার ভেতর তেমন প্রতিভা নেই।
হ্যাঁ আমি জানি আমি হয়তো সাহিত্যিক নই কিন্তু সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা তো আছে,আমার মনের কথা ফুটিয়ে তোলার অধিকার তো আছে।
আজ আমি এসব কথা কেন বলছি সেটি আমি নিজেও জানি না।এগুলো লিখার দরকার কি কিছুই জানি না।
আমার কল্পনায় মাঝে মাঝে একটি নীল শাড়ি পরা মেয়েকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি কিন্তু মেয়েটির পরিপূর্ণ রুপ কল্পনা করতে পারিনা।সে যেন দূরে খুব দূরে অবস্থান করছে।যেদিন এই দূরত্ব ঘুচবে সেদিন আমি মায়ায় আটকে যাবো হয়তো।মায়ায় আটকা পরতে আমি চাই না কিন্তু মেয়েটিকে আমি পরিপূর্ণ রূপে দেখতে চাই।
আচ্ছা এই সাদা মেঘগুলোর অন্য দিকে কি আছে?
নিশ্চয়ই অন্য কোন দুনিয়া আছে যাকে আমরা কল্পনায় আনতে পারিনা।ধোঁয়াশার মতো থেকে যায়।এই মেঘগুলোকে আমরা ধরতে পারিনা দেখে এতো ভালো লাগছে কিন্তু যদি ছুতে পারতাম তাহলে হয়তো এতো ভালো লাগতো না।
হুমায়ন আহমেদ এই মেঘ নিয়ে কিছু একটি লিখেছেন হয়তো যা আমি এখন মনে করতে পারছি না।
খুব করে মনে করার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।

রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯

অপূর্ণ ইচ্ছা

একটি পাগল মহিলার মধ্যেও যে একটি মাতৃ হৃদয় রয়েছে সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা।সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পাগলামি করে বেড়ায় দেখে যে তার মধ্যে কোন অনুভূতি নেই তা তো নয়।তারও হাসি কান্না রয়েছে সেটা আমরা বুঝতে চাইনা।কেউ কি একজন পাগলের সাথে ভালো ব্যাবহার করে পরবর্তীতে খারাপ ব্যাবহার পেয়েছে।না তা কোনোদিনও সম্ভব নয়।সেটা আমি মনে করি।
তাহলে আসা যাক মুল ঘটনায়
রহিমা ঢাকা শহরের একটি পাগল।তার যে একটি নাম আছে তা কেউ মনে রাখেনি।তাকে সবাই জটা পাগলী বলে খেপায়।যারা তাকে জটা পাগলী বলে তাদের সে তেরে যায় মারার জন্য।কিন্তু শহরের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা রহিমাকে স্নেহ করে।তাকে দেখলে দোকান থেকে কিছু কিনে খেতে দেয়।রহিমা তাদের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে।
কেননা সে তো পাগলী।সে তো সকলের কাছে একটু ভালো ব্যাবহার চায়।
সারাদিন নানা যায়গায় ঘোরার পর লোকে যে যা দিয়েছে তাই নিয়ে সে তার পলিথিনের ফুটপাতের ঘরটাতে ফিরছে।তার এক হাতে একটা বন রুটি অন্য হাতে একটি আধ পচা কলা যা একটি চায়ের দোকানি তাকে দিয়েছে।সেগুলো নিয়ে বাড়িতে ফিরছে।রাতের খাবারের জন্য।
রহিমা যখন রাস্তার মাঝখান দিয়ে যাচ্ছে তখন ভালোই রাত হয়ে গেছে।তখন সে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়।সে তখন এদিক ওদিক তাকিয়ে একটি ল্যাম্প পোষ্টের নিচে একটি বাচ্চার দোলনা দেখতে পায়।কাছে গিয়ে দোলনায় বাচ্চাটিকে দেখে তার খুব ভালো লাগে।সে তখন ভাবে হয়তো বাচ্চাটির মা কোথাও খাবার আনতে গেছে।এখন যদি সে বাচ্চাটিকে একা ফেলে যায় তাহলে বাচ্চাটির কোন ক্ষতি হয়ে গেলে বা কেউ যদি বাচ্চাটিকে ধরে নিয়ে যায়।তাই সে দোলনাটির পাশে গিয়ে বসে।
এমনভাবে মানুষের উপকার করতে গিয়ে মানুষের কতো যে মার খেয়েছে তার কোন ঠিক নেই।কিন্তু রহিমা ঠিকই মানুষকে সাহায্য করতে যায়।অনেকক্ষণ বসে থাকার পর যখন রহিমা দেখল যে কেউ আসছে না তখন সে বাচ্চাটির কাছে গিয়ে তার গাল ছুয়ে দেখল।বাচ্চাটির বয়স এক বছরের কম হবে।বাচ্চাটি খুব কান্না করছে।
রহিমা তখন বাচ্চাটিকে বলে
খিদা পাইছে তর।রুটি কলা খাইবি
বাচ্চাটি যেন রহিমার কথা বুঝতে পারে।তখন সে কান্না বন্ধ করে দেয়।রহিমা তখন একটু একটু করে রুটি ছিরে ছিরে বাচ্চাটির মুখে দিতে থাকে এবং একটু একটু কলা খাওয়াতে থাকে।
বাচ্চাটিকে খাওয়ানোর পর যখন দেখে যে কেউ আসছে না তখন সে বাচ্চাটিকে কুলে তুলে নেয়।বাচ্চাটিকে নিয়ে সে হাটতে থাকে।রহিমা এটুকু বুঝতে পারে যে এলাকার মানুষ ওর কাছে এই বাচ্চাটিকে দেখলে ওকে বাচ্চা ছিনতাইকারী বলে পিটিয়েই মেরে ফেলবে।কিন্তু সে বাচ্চাটিকে রেখে তো আসতে পারেনা।
সে যখন ওর ফুটপাতের ঘরে যায় তখন ওর পাশে যারা থাকে সকলে জিজ্ঞেস করে যে সে বাচ্চাটিকে কোথা থেকে পেয়েছে।
তখন রহিমা সকলকে সকল কিছু বলে।এবং বলে যে কেউ যদি বাচ্চাটিকে নিতে না আসে তাহলে বাচ্চাটিকে রহিমাই রাখবে।
সকলে রহিমার কোথা শুনে অবাক হয়ে যায় কিন্তু কেউ কিছু বলে না।কারন বলারই বা কি থাকতে পারে।একটি বাচ্চা এতো রাতে রাস্তার ধারে আসবে কীভাবে।নিশ্চয়ই বাচ্চাটির বাবা মা বাচ্চাটিকে ফেলে দিয়েছে।
প্রথম কিছুদিন সকলের মনে সন্দেহ হলেও কিছুদিন পর সব কিছু ঠিক হয়ে যায়।রহিমা বাচ্চাটিকে খুব আদর করে পালতে থাকে।রহিমার আছেই বা কি ,কিন্তু যা আছে তা দিয়েই সে বাচ্চাটিকে পালন করে।সকলে বুঝতে পারেনা একটি পাগলী একটি বাচ্চার এতো যত্ন করে কীভাবে।নিজে না খেয়ে বাচ্চাটিকে খাওয়ায়।
বাচ্চাটির নাম দিয়েছে সে।তইমুর।সে রাস্তায় রাস্তায় তইমুরকে নিয়ে ঘুরে।কতো আদরই না রহিমার মধ্যে আছে।সে ভাবে তার যদি টাকা পয়সা থাকতো তাহলে তইমুরকে অনেক আদর যত্ন করে পালত ।
বাচ্চাটি অসুস্থ হলে রহিমার পাগলামি যেন আরও বেড়ে যায়।সে সকলের কাছে গিয়ে বাচ্চাটির জন্য সাহায্য চায়।যে যা পারে তাই দিয়ে সাহায্য করে রহিমাকে।এভাবেই যেন বেশ কয়েক বছর কেটে যায়..............................
তইমুরের এখন চার বছর বয়স।সে এখন রাস্তার ছেলেদের সাথে দৌড়ে বেড়ায় সারাদিন।কিন্তু ব্যাবহারে সে সকলের চেয়ে আলদা।হয়তো সকলের সাথে থাকতে থাকতে ভাষা একরকম কিন্তু সে কখনো কারও সাথে খারাপ ব্যাবহার করে না।হয়তো সে সভ্য জগতের ছেলে হয়তো তাকে পাগলী ছোটবেলা থেকে সকলের সাথে ভালো ব্যাবহার করতে শিখিয়েছে বলে।
তইমুরকে সব বাচ্চারা খেলায় নেয় না।তারা তইমুরকে পাগলীর ছেলে বলে খেপায়।কিন্তু সে কিছু মনে করে না।কারন সে তো যানে যে তার মা পাগলী।সেই পাগলী মা তার জন্যই তার কতো যেন ভালোবাসা।দিনের শেষে পাগলীর কাছে গিয়েই তার শান্তি।
রহিমা কয়দিন ধরে খুব অসুস্থ।শরীর দিয়ে কেমন ফোসকা ফোসকা উঠছে।বিছানা থেকে উঠতে পারেনা।তইমুর রহিমার যত্ন করে ।গলির ছোট ডাক্তারের কাছ থেকে একটা ফোসকার মলম নিয়ে এসেছিলো কিন্তু কোন কাজে আসছে না।দিন দিন যেন কেমন দুর্বল হয়ে পড়ছে।
সকাল বেলা রহিমাকে সব কিছু দিয়ে তইমুর খেলতে চলে যায়।সারাদিন খেলে ।বিকেলবেলা তইমুরের রহিমার কথা মনে পরে।দৌড়ে ছাউনির ভেতর গিয়ে দেখে রহিমা কেমনভাবে যেন শুয়ে আছে।সে রহিমার কাছে গিয়ে তাকে ধাক্কা দেয় কিন্তু সে উঠে না।শরীর একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।
আশেপাশের সকলকে ডেকে আনলে সকলে বলে যে রহিমা মারা গেছে।এ কথা শুনে তইমুরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।তার এই পাগলী মাটা আর বেচে নেই।তার এই পাগলী ছাড়া তো আর দুনিয়াতে কেউ নেই।সে এখন দিনের শেষে কার কাছে যাবে।
রহিমাকে এলাকার কবরে কবর দেওয়ার পরেরদিন সকালে তইমুরের কিচ্ছু ভালো লাগছে না।সে যখন তার ছাউনির ভেতর যায় তখন তার খুব কান্না পেতে থাকে।সে এখন একা।তাই এখন সে বেশীক্ষণ ছাউনির মধ্যে থাকতে পারেনা।সে শান্তভাবে ঘুরতে থাকে।তখন এক চায়ের দোকানি তাকে ডেকে বলে
কেমন আছো মিয়া ভাই?পাগলীর জন্নে কষ্ট হচ্ছি।কি আর করবা কউ
তইমুর বিরস মুখে দাড়িয়ে থাকে
দোকানি তখন একটি কলা দেয় তইমুরকে।বলে যে
একটা সত্যি কথা কই।ওই পাগলী তোমার মা না।ও তো তোমারে কুড়াইয়া পাইছিল।নিয়া আইছে সাথে কইরা।
এই কথা শুনে তইমুরের মাথায় যেমন আকাশ ভেঙে পরে তেমনি পাগলীর জন্য শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যায়।
সে তখন নদীর ধারে গিয়ে পাথরের উপর বসে থাকে।এই কয়েকদিনের মধ্যে তার জীবনটা ওলটপালট হয়ে গেলো।সে নানাজায়গায় ঘুরতে থাকে।তার তো এখন আর কোন মায়া টান নেই।এখন সে যেখানে থাকবে সেখানেই ঠিক আছে।সে ভাবতে থাকে কে তার বাবা মা।ওকে রাস্তায় ফেলেই বা কেন গিয়েছিল।তার এই চার বছরের জীবনে এইসব ভাবনা অনেক বেশী কঠিন কিন্তু পরিস্থিতি তাকে এগুলো ভাবতে শিখিয়েছে।
এইভাবে তইমুরের জীবনে আরও তিনটি বছর কেটে যায়।সে আর তার সেই পুরনো পাগলীর এলাকায় ফিরে যায়নি।কেননা সেখানে গেলেই তার খুব কষ্ট হয়।রাস্তায় রাস্তায় সে ঘুরে।ছোটখাটো যে কাজ পায় তাই করে দেয় সে।খাওয়ার খরচ উঠে না কিন্তু কোনোমতে চলে যায়।এখনো তার মনে একটাই প্রশ্ন
কারা তার বাবা মা?
সে তার এই সাত বছরের জীবনে অনেক কিছু দেখে ফেলেছে।সে মানুষের ব্যাবহার দেখেছে।কিছু মানুষ কিরকম খারাপ ব্যাবহার করে আবার কিছু মানুষ খুব ভালো ব্যাবহার করে।অনেক কিছু শিখেছে।
তার মনে এখনো একটি আশা রয়েছে যে সে তার বাবা মায়ের সাথে দেখা করবে কিন্তু তা কখনো সম্ভব নয়।
এক সকালে তইমুর একটি নতুন এলাকায় গিয়েছে।সেখানে খুব সুন্দর নদী রয়েছে।কিন্তু সে লক্ষ্য করলো সেই এলাকায় তার মতো কোন বাচ্চা নেই।সকলেই তার বাবা মায়ের সাথে সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে ঘুরতে এসেছে।সে কোন কথা না বলে নদীটার পাশে গিয়ে বসে।নদীর স্রোত দেখে সে অবাক হয়ে যায়।কি সুন্দর এই নদী।তখন একটি মেয়ে ওর বয়সই হবে তইমুরকে ডেকে বলছে
তুমি এখানে এভাবে বসে আছো কেন।নদীর পানিতে পরে যাবে তো।আর ছি তুমি এটা কি পোশাক পরে আছো।কি নোংরা আর ছেরা পোশাক।
সে মেয়েটির দিকে তাকায় এবং বুঝতে পারে তার কথার উত্তর দেওয়ার দরকার নেই।কিছুক্ষণ পর আরও কিছু বাচ্চা আসে তার সাথে কথা বলতে।তারা বলে দেখ কি সাহস ওর।তুমার কি ভয় করেনা
তন্ময় শুধু বলে
না
তুমার নাম কি?
তইমুর
বাবা কি সুন্দর নাম।আমাদের নাম কেমন ভাঙা ভাঙা উচ্চারণ করতে হয়।
তইমুরের বাচ্চাগুলোকে খুব পছন্দ হয় কিন্তু তাদের সাথে তইমুরের অনেক বড় পার্থক্য।সে একটা অনাথ পথের ছেলে।
তখন একটা মহিলা তার পিছনে দাড়ায়।কোন কথা না বলে তইমুরকে টান দিয়ে দাড়া করিয়ে ফেলে।মহিলাটির চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে।মহিলাটি বলে
এই ছেলে তুমি এখানে এভাবে বসে আছো কেন।চলো আমার সাথে
মহিলাটি তইমুরকে একটি মার্কেট এ নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে তার সাইজ এর নানারকম জামা কিনে নেয়।তারপর তইমুরকে তার বাসায় নিয়ে গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে ভালো জামাকাপড় পরিয়ে নানারকম খাবার খাইয়ে রাস্তায় নিয়ে ছেড়ে দেয়।এবং বলে
সব সময় পরিষ্কার থাকবে এবং নদীর পাশে কখনো বসবে না
তইমুর বলে
সবাই তো আপনার মতো হয় না।আর আমার তো এতো টাকাও নেই যে ...
মহিলাটি আর কিছু বলে না।হন হন করে হেটে যায়।
তইমুর ভাবতে থাকে তার যদি মা থাকতো তাহলে তাকে এভাবেই আদর করতো।রাগ দেখাতো ঠিকই কিন্তু গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে দিত।
আবার ভাবে
এই মহিলার মনে হয় মাথায় সমস্যা আছে।
সে তখন আবার নদীর ধারে গিয়ে বসে এবং লক্ষ্য করে তাকে এখন এই বাচ্চাদেরই মতো লাগছে।তাকে আলাদা করা যাচ্ছে না।বেশ কয়েকটা মেয়ে তার সাথে বন্ধুত্ব করতে এগিয়ে আসে যারা তার দিকে আগে তাকিয়েও দেখেনি।তইমুর সকলের সাথে অনেকক্ষণ খেলা করে।সব বাচ্চা তইমুরের খেলা দেখে অবাক হয়ে যায়।সকল খেলাতে সবার চেয়ে এগিয়ে তইমুর।তইমুরের ইচ্ছা করে সব সময় এদের সাথে খেলা করতে কিন্তু এটা যে সম্ভব নয়।তাকে আবার তার পুরানো রাস্তায় ফিরে যেতে হবে।
তখন পিছনে চিৎকারে শব্দ শুনতে পায়।সে দেখে একটি বাচ্চা নদীর পানিতে পরে গেছে।তখন সে কোনোকিছু না ভেবে পানির মধ্যে ঝাপিয়ে পরে।নদীর পানি কনকনে ঠাণ্ডা।সে তার জীবনে এতো ঠাণ্ডা পানি জীবনে দেখেনি।সে বাচ্চাটিকে অনেক কষ্ট করে তুলে আনে।
এটা হয়তো একটু অবাক করা বিষয় যে তইমুরের বয়সই তো সাত বছর।সে আরেকটি বাচ্চাকে নদীর পানি থেকে তুলে আনে।
বাচ্চাটির মা তো বাচ্চাটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।সকলে তখন তইমুরকে ঘিরে ধরে।বাচ্চারা সবাই চিৎকার করতে থাকে
আমাদের সুপার হিরো।
এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়ে তইমুরের চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।তখন সকলে মিলে তোয়ালে কাপর চোপর যোগার করে তাকে মুছে দেয়।সকলে যখন জানতে পারে যে সে একটি রাস্তার ছেলে তখনও তারা তাকে দেখে ঘেন্না বোধ করে না।সকলে মিলে বলে আজ আমরা তোমার গল্প শুনবো,বলো
কিছুক্ষনের মাঝে সমস্ত কিছুর বেবস্থা হয়ে যায়।তইমুর একটি চেয়ারে বসে আছে।তার সামনে দুইশ এর মতো মানুষ বসে আছে তার জীবন কাহিনী শোনার জন্য।
তইমুরের ভেতরে কেমন যেন ঠাণ্ডা লাগছে কিন্তু সে সবাইকে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলতে শুরু করে
আমি তইমুর।আমি এক পাগলীর কাছে ছোট থেকে বড় হয়েছি।পাগলীর কিচ্ছু ছিলোনা কিন্তু সে আমাকে তার ক্ষমতার বেশী আদর করতো এবং ভালোবাসতো।প্রত্যেকদিন সে ঘুরে ফিরে যা পেতো আমার জন্য নিয়ে আসত।
আমি তার কাছে ৪ বছর বয়স পর্যন্ত বড় হয়েছিলাম।পাগলী একদিন খুব অসুস্থ হয়ে পরে।আমি তাকে রেখে খেলতে গিয়েছিলাম।ফিরে এসে দেখি পাগলী মরে পরে আছে।খুব কান্না পেয়েছিলো।কারন দুনিয়াতে পাগলী ছাড়া তো আমার কেউ ছিল না।
পাগলী মারা যাওয়ার পরের দিন এক চা দোকানি বলল যে আমি নাকি পাগলীর ছেলে নই।সে নাকি রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছে।আমি তখন কি করবো।কিছুই করার ছিলোনা।কিন্তু পাগলীর ওপর আমার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গিয়েছিলো।
তইমুর একটু থামল।তার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।
সে আবার বলতে শুরু করলো
আমাকে নাকি রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছে।আমি তো এখনো আশায় আছি একদিন আমার বাবা মায়ের সাথে দেখা হবে।তোমাদের মতো তখন আমারও মা বাবা থাকবে।
আর কিছু বলেনা তইমুর।সে ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে।তার সাথে দুইশর মতো মানুষও কান্না করতে থাকে।তইমুরের ভেতরকার ঠাণ্ডা লাগা ভাবটা এখন যেন আরও বেড়ে গিয়েছে।
সকলে কোন কথা না বলে তইমুরের মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে চলে যায়।তইমুরের একদিকে খুব ভালো লাগতে থাকে যে এতো মানুষ এখন তাকে ভালোবাসে।অন্যদিকে তাকে এক ঠাণ্ডা গ্রাস করে নিতে চাইছে।
তখন সন্ধ্যা সন্ধ্যা হয়ে গেছে।সে গাছের নিচেই শুয়ে পরে।সে খুব আবছা আবছা ভাবে সপ্নে দেখতে পায় একটি মহিলা ছোট একটি বাচ্চাকে কোলে করে ঘুম পারাচ্ছে।
কে সেই মহিলা এবং বাচ্চাটি?
তার যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখতে পায় একটি বড় হাসপাতালের বিছনায় শুয়ে আছে।অনেক মানুষ তার জন্য অপেক্ষা করছে।
ডাক্তার বলে দিয়েছে তইমুরের খুবই খারাপভাবে নিউমোনিয়া হয়েছে।আগে থেকেই ছিল।এই ভিজে যাওয়ার পর আরও বেরেছে।ডাক্তাররা কোন কিছু বলতে পারছেনা।
সকলে তখন তইমুরের সাথে দেখা করতে যায়।সকলের চোখে পানি।তইমুর তখন আসতে করে বলে
আমার মাকে তোমরা খুজে দিও।তোমরা আমাকে খুব ভালোবেসেছো।
তইমুরের চোখের কোনা দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে।কিন্তু তার মুখে একটি মিষ্টি হাসি লেগেই রয়েছে।
তইমুর যদি বেচে থাকতো তাহলে দেখতে পেতো পৃথিবীর কতো মানুষ তার দুঃখে কান্না করেছে।তার কথা গুলো একজন ভিডিও করে নিয়ে ফেসবুক এ ছেড়ে দিয়েছিলো।
তইমুর ঠিকই সকলের ভালোবাসা পেয়েছে কিন্তু তার শেষ ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেলো।তার বাবা মা কোথায় সেটা আর জানা হলো না।
Written by: Md Hridoy Hasan
Edit: SraNton Hossain

নদীর কথা


কলেজের কাজ শেষ করতে করতে বিকেল হয়ে গিয়েছিলো।তার ওপর অতিরিক্ত কাজ।প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।সরকারী কলেজ হওয়াতে সারাদিনই টুকটাক কাজের জন্য কলেজ খোলা থাকে।
শীতের সন্ধ্যা।শরীরে কাপড় বলতে একটি চিকন কাপরের পাঞ্জাবী এবং একটি চাদর।ঠাণ্ডায় কাপতে কাপতে বের হলাম কলেজ থেকে।কাধে একটি শান্তিনিকেতন এর ব্যাগ।
বাড়িতে আর যেতে ইচ্ছা করছে না।কলেজের পিছনে একটি নদী আছে।অবশ্য শীত কাল হওয়াতে পানি শুকিয়ে গেছে।পাশের চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম।নদীর ঠাণ্ডা হাওয়া গায়ে এসে লাগছে।শরীরে চাদরটা জড়িয়ে নিতে নিতে দোকানদারকে বললাম,
_চাচা এক কাপ চা দিন।চিনি ছাড়া।
আমি যেন অন্যায় কোন কথা বলে ফেলেছি।হয়তো তার কাছে কোনদিন চিনি ছাড়া চা কেউ চায়নি।আর গ্রামের মানুষ প্রত্যেকটি বিষয়ে খুত খুতে।তারা চিনি ছাড়া চা খাবে এটা অস্বাভাবিক বলা চলে।
শুঁকনো মুখে চিনি ছাড়া চা বানাচ্ছে।এমন মনে হচ্ছে যেন সারা জীবনে এর চেয়ে বড় অপমান কেউ করেনি।
চায়ের কাপে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছি আর নদীর দিকে তাকিয়ে রয়েছি।ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে মাঝিরা বাড়ি ফিরছে।নৌকার মধ্যে কুপির আলো দেখা যাচ্ছে।তখন দোকানদার চাচা বলল
_বুঝলেননি স্যার এই নদীর কথা?বড়ই ভয়ঙ্কর হইয়া উঠে বন্যার কালে।
_হুম তা তো হবেই।
_কতো মাইনসেরে যে মরতে দেখছি এই নদীর বুকে তার ঠিক ঠাহর পাই না।
গ্রামের মানুষ।তাদের কথার ধরন খুব সহজ সরল হয়।তাছাড়া আমার মনেও একটু উত্তেজনা জেগে উঠলো।দুই মাস ধরে এখানকার কলেজে চাকরী পেয়েছি।এই কয়েক দিনেই যেন অনেক আপন মনে হয়েছে মানুষগুলোকে।আমি দোকানদার চাচাকে জিগ্যেস করলাম,
_প্রত্যেক বছরই কি মানুষ মারা যায় নাকি।
_তাইলে আবার কি কন?একজন দুইজন নি।
_তাহলে বলেন শুনি আপনার কথা।কীভাবে কি হয়।
_শুনেন তাইলে
“এই নদীডা আমার চোখে একটা পোড়া কপালি বুঝলেননি?গেলো বছর শহর থিকা একটা বাবু আইছিলো।আপনার মতনই ধলা শরিলের রঙ।তাও তার সাথে কয়েকজন পোলাপান আইছিলো।
আইছিলো কারেন্টের কাম করুনের লেইগা।তার মাঝখানে হগ্গলে মিলা নদীতে গোছল করতে নামলো।“
এইটুক বলে দোকানদার চাচা একটু পানি খাওয়ার জন্য থামল।বুঝতে পারলাম মানুষটি গল্প করতে ওস্তাদ বলা চলে।আমি বললাম,
_তার পর কি হলো বলেন
_তারপর কি হইলো শুনেন বাবু সাব
“নামছে তো।তাও ঘণ্টা খানেক ধইরা তারা নদীতে গোছল করলো।বাবু তো সেই রকম সাঁতার কাটতে পারে।হঠাৎ কি হইলো কে জানে বাবু দেহি এক চিক্কার দিয়া ডুইবা গেলো।কেউ কিছু বুঝনের আগেই সব শান্ত।হগ্গলে মনে করছিলো হয়তো বাবু মজা করতাছে কিন্তু না পাউন গেলো না।সগোলে মিলা অনেক খুজছে বাবুরে কিন্তু কোন লাভ হয় নাই।“
আমি বললাম,
_লোকটিকে কি আর পাওয়া যায়নি?
_পাউন যাইব না কেন?সাতদিন তো হইবই?হ সাতদিনই।
“সাতদিন পরে পাশের গ্রামের এক লোগ দেহে কি যে নদীর মধ্যে গাছ ভাইঙ্গা পইরা রইছে।তার মইদ্ধে উপ্তা হইয়া রইছে বাবু।হাত দুইডা ভাইসা রইছে।সগোলে যহন সিধা করলো তখন দেহি কি পুরা মুখটা পানিতে খায়া ফালায়ছে।ঘাউ ঘাউ অবস্থা।“
_চাচা এবার এই কথা বাদ দেন।এই ধরনের ঘটনা শুনতে ভালো লাগে না।মৃত্যুর এমন বিবরন দিবেন না?খুব কষ্ট লাগে।
_অহ বুঝছি, স্যার এর মনডা খুব নরম।যান বাদ দিলাম।
_তা এই নদী নিয়ে কি কোন ভালো ঘটনা নেই নাকি?
_আছে না স্যার।বহুত আছে।
_তা বলেন শুনি কি সেই ঘটনা?
_”এই নদীতে যহন বন্যা হয় না তহন সগোল জাইলারা কি আনন্দ কইরা মাছ মারে।সগোল দিকে মাছের ছড়াছড়ি।খালি মাছের নাচুন দেহি আমরা।আমার তো জাল নাই তাই কাপড় দিয়া নদীর কিনারে খালি পানি ছেচি।ছোড ছোড পুঁটি পাই তাই নিয়া বাড়ি যায়।“
দোকানদার চাচার কথা শুনে আমার মনটা খারাপ হয় গেলো।সত্যি তো হয়তো তারও জেলেদের মতো বড় জাল দিয়ে মাছ ধরতে মন চায় কিন্তু সামর্থ্য নেই যে।দোকানদার চাচা আবার বলতে শুরু করলো
_নদী এডা ভালো হউক মন্দ হউক আমরা এরে খুব আদর কইরা রাহি।মানুষ তো মরে তাগো নিজেগো দোষে।নদী তো কয় না তাগো নদীর বুকে যাউনের লাইগা
_হুম তা তো ঠিক।তা চাচা তোমার ছেলে মেয়ে কয়জন?
_ছিল একটা পুলা কিন্তু মাছ ধরতে যাইয়া ডুইবা মরছে ঝরের মধ্যে।এই পুরা কপালি নদী আমার পুলাডারে নিয়া গেছে।বাইচা থাকলে তোমার মতন হইতো।তাও নদিডা আমার খুব আদরের।
কথাটি আমার বুকের মধ্যে বিধলো।বাইচা থাকলে তোমার মতন হইতো।সত্যি খুব নিষ্ঠুর এই নদী কিন্তু সকলের খুব আদরের।
@SraNton Hossain

শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯

ভালোবাসায় মা

একটি মা তার সন্তানদের কতটা ভালোবাসতে পারে এটি জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দিবেন আপনি।এর কোন উত্তর হয়তো আপনার কাছে নেই,হয়তো আমার কাছেও নেই।
সেটি ছিল জুলাই মাস।নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে।গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি সবাই মিলে।নদীপথে যেতে হয়। গ্রামের বাড়ি নদী অঞ্চলে।বলতে গেলে নদীর ওপরে ভেসে রয়েছে।আর কোন রাস্তা নেই সেখানে যাওয়ার।
গ্রামের বাড়ি নদী অঞ্চলে হলে কি হবে?আমাদের এই নদীতেই সবচেয়ে বেশী ভয়।আমি আর আমার বোন কেউই সাঁতার জানিনা।তাই আম্মু সব সময়ে ভয়ে থাকে কখন কি হয়ে যায়।ছোট থেকে শহরে বড় হয়েছি তাই সাঁতার শেখা হয়ে ওঠেনি।এখন অনেকে বলতে পারেন শহরের মানুষ কি সাঁতার জানেনা?হ্যাঁ জানে ,কিন্তু আমাদের সাঁতার শেখা হয়নি।
আম্মুকে দেখতাম লঞ্চ দিয়ে যাওয়ার সময় নানারকম দোয়া পড়তে থাকতো। তার মনে সব সময় তো একটি ভয় কাজ করতো যদি নৌকা ডুবে যায় তাহলে কি হবে?
আমরা তখন মনে মনে হাসতাম।আর বলতাম,
_এই তো বসে আছি আমরা।কিছু তো হচ্ছে না আম্মু
যাই হোক আমরা দাদু বাসায় গিয়ে দেখি সব চাচাতো ভাইয়েরা এসেছে।আব্বু এবং তিন কাকা এবং দুই ফুফু।বিশাল বড় পরিবার বলা চলে।
আমরা চাচাতো ভাই বোনেরা নয় জন।সকলে যখন একসাথে হই তখন তো একেবারে আনন্দের শেষ থাকতো না।সেবার সকলে একসাথে হয়েছিলাম।সবাই মিলে গান গাওয়া, নাচানাচি করা।বড় কাকাকে দেখতাম রক্ত বর্ণ চোখে তাকিয়ে থাকতো।তাতে যেন আমাদের বয়েই গেছে।সবচেয়ে মজা হতো যখন সকলে একসাথে খেতে বসতাম।নয়জন গোল হয়ে বসা অসাধারণ সেই মুহূর্ত। এখন আর একসাথে হওয়া হয় না।
আসল কথায় আসি তাহলে।
আমরা দাদু বাড়ি থেকে ফিরে আসছি।নদীর ঘাটে দাড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ ধরে।প্রায় আধা ঘণ্টা তো হবেই।তখন দেখি একটি নৌকা ঘাটে আসলো।নৌকা দেখেই তো আমার কলজের পানি শুকিয়ে গিয়েছে বলা চলে।নিজের মনেই একটু গোঙানির শব্দ করে আম্মুকে বললাম,
_আম্মু গো যে নৌকা এসেছে মাঝ নদীতে আমরা ভেসে না যাই।
সাথে সাথে আমার গালে রাম চর।কাকা চর মেরেছি আর বলছে
_নদীর পথ এর মইদ্ধে তুই একটা অলুক্ষুইনা কথা কইলি।
আমরা কোনোভাবে নৌকায় চড়েছি।আর যেভাবে মাঝি নৌকার মধ্যে মানুষ উঠাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে মাঝ নদীতেই আমাদের হয়ে যাবে।আম্মু আমাদের দুজনের হাত ধরে রেখেছে।
এক কোনায় দেখলাম এক মহিলা তার কোলের বাচ্চাটিকে জড়িয়ে ধরে বসে রয়েছে।বুঝতে পারলাম তার মনেও একটু ভয় কাজ করছে।ভয় করাটাই স্বাভাবিক।একটি বাচ্চা নিয়ে নদী পথে যাওয়া তার ওপর এরকম অবস্থা নদীর।
মাঝ নদীতে নৌকা যেতেই দেখি একবার এই কাত তো আরেকবার ঐ কাত হচ্ছে নৌকাটি।একটু পর এমনভাবে নৌকাটি কাত হলো যে পানি উঠে গেলো অনেকখানি।নৌকা ডুবতে শুরু করেছে।আর তারচেয়েও তারাতারি ডুবছে সবার লাফালাফিতে।মহিলাটিকে দেখলাম অসহায় দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।আর এদিকে আম্মু আমাদের দুজনকে ধরে চিৎকার শুরু করে দিয়েছে।আমরা তো সাঁতার জানিনা।আম্মু যদিও সাঁতার জানে তবুও আমাদের ছেড়ে তো উঠতে পারবে না।
এমন সময় নৌকা পুরো ডুবে যায়।আম্মু তো আমাদের ভাসিয়ে রাখার খুব চেষ্টা করছে।আর কতক্ষন এভাবে রাখতে পারবে তার ঠিক নেই।এমন সময় দেখি একটি লঞ্চ তার সর্ব শক্তি দিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।প্রায় সকলেই তো সাঁতার জানে।শুধু আমরাই জানি না।আমরা অনেক কষ্টে লঞ্চে উঠলাম।আম্মু ওঠার সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে গেলো।
আমি আব্বু ডাক্তার আনতে যাই।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার নিয়ে এসে দেখি আম্মু কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে।
আমার কথাটা তাহলে ফলেই গেলো।নৌকা ঠিকই ডুবল।তখনই আমার সেই মহিলাটির কথা মনে পড়লো যার কোলে বাচ্চা ছিলো।অনেক খোজা খুজির পরেও তাকে এই ভীরের মধ্যে পেলাম না।
সত্যি আম্মু কতটা ঝুকি নিয়েছে আমাদের বাচিয়ে রাখার জন্য।
পরে খবর নিয়ে জানতে পারি দুইদিন পরে সেই মহিলাটি এবং বাচ্চাটির লাশ পাওয়া গিয়েছিলো।বাচ্চাটিকে মহিলা নাকি জড়িয়ে ধরে ছিলো।সত্যি হয়তো বাচ্চাটিকে বাচাতে গিয়ে মাও মারা গিয়েছে।কতটা ভালোবাসা থাকলে এমন করা যায়।
এতদিন পর এই কথাটি মনে পরে আমার আবার কেমন যেন লাগছে।মাঝখানে পাঁচটি বছর কেটে গেছে।বাচ্চাটি যদি বেচে থাকতো আর মহিলাটিও যদি বেচে থাকতো তাহলে কেমন হতো?মা বাচ্চাটিকে নিয়ে বাহিরে যেতো খেলতে।খাইয়ে দেওয়া,স্কুলে নিয়ে যাওয়া।
এখন আর কোনটাই সম্ভব না।কারন দুজনই তো এখন পরপারে চলে গিয়েছে।

@
SraNton Hossain

পবিত্র বন্ধুত্ব

রাস্তা দিয়ে একটি মেয়ের সাথে একটি ছেলেকে হেটে যেতে দেখলেই আমরা আর চোখে তাকাই।একটি মেয়ের সাথে একটি ছেলের কি পবিত্র বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে না নাকি।
আমাদের মানসিকতা এমন হয়ে গিয়েছে যে সব কিছুই খারাপ ভাবে বিবেচনা করি।
নীরবের আজকে কলেজে প্রথম দিন।সে তো ভয়েই শেষ।সারা জীবন মায়ের আচলের নিচে থেকেছে সে।বাইরের পৃথিবীটাকে বোঝার সুযোগই যে পায়নি।না,এখানে নীরবের মাকে আমি দোষ দিচ্ছি না।কিছু কিছু মা আছে যারা তাদের সন্তানকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশী আগলে রাখে।
নীরব ভাবতে থাকে যে কলেজের ছাত্র গুলো কেমন হবে?তারা নীরবকে কীভাবে দেখবে?গুটি গুটি পায় সে কলেজের ভেতর যায়।মাথার চুল আঁচড়ানো একেবারে সেপ্টে।জব জবে তেল দেওয়া শরীরে একটি ঢোলা ফতুয়া আর ঘারে একটি পাটের তৈরি ব্যাগ।একেবারে বোকা কবি।
ক্লাসে ঢোকার পর সকলে নীরবের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।তারা যেন ভিন গ্রহের প্রাণী দেখছে।ভিন গ্রহের প্রাণীই তো বলা চলে।ক্লাসের সব থেকে মিশুক ধরনের ছেলেটা এগিয়ে আসে নীরবের সাথে কথা বলার জন্য।সে বলে,
_নতুন ক্লাসে তোমাকে স্বাগতম।আমি নিলয়।
নীরবের মধ্যে থেকে জড়তা একটু কেটে গেছে।সে বলে
-আমি নীরব
-বাহ খুব ভালো নাম।আসো আমার পাশে এসে বসো।
নীরব খুব খুশি হয়।সে ভাবতে থাকে হয়তো এই ছেলেটিই তার কলেজ জীবনের প্রথম বন্ধু।সে হাসি মুখে নিলয়ের পাশের সীটে গিয়ে বসে।স্যার ক্লাস করিয়ে যায়।তখন ক্লাসের কিছু দুষ্টু টাইপ এর ছেলে নীরবকে জালানোর জন্য চলে আসে।কিন্তু নিলয় সব কিছু পাশ কাটিয়ে নিয়ে যায়।হয়তো সে নীরবকে প্রথম দেখাতেই বুঝতে পেড়েছিল নীরব যেমন বোকা ধরনের ছেলে হয়তো সকলে ওকে খুব জালাতন করবে।নিলয় তখন নীরবকে কলেজ ঘুড়িয়ে দেখানোর জন্য নিয়ে যায়।কলেজের সব জায়গা ঘুরে দেখার পর নিলয় নীরবকে বলে
-আগে এটা বলো তোমার এমন চুলের স্টাইল কে করে দিয়েছে ?
-আমার আম্মু,কেন?
-তুমি যদি কলেজে টিকে থাকতে চাও তাহলে এমন থাকলে চলবে না।তোমাকে দেখে যে কেউ বলদ বলে দিবে।আমার কথা কিন্তু খারাপ ভাবে নিয়ো না।
-আরে না ঠিকই তো বলেছ।
নিলয় নীরবকে নিয়ে বড় ভাইদের হোস্টেলে গিয়ে তার মাথা শ্যাম্পু করিয়ে চুলের ধরন একটু পাল্টে দেয়।এবং বলে
-এখন একটু ভালো দেখা যাচ্ছে।তোমার ফতুয়াটা পাল্টানো গেলে ভালো হতো।তোমার শরীরের মাপ আর আমার শরীরের মাপ তো প্রায় এক।
-তাতে কি হয়েছে?
-দাড়াও না দেখছি।আমার একটি এক্সট্রা গেঞ্জি আছে ব্যাগে।
কিছুক্ষণ পর নীরবের পুরো চেহারাই পাল্টে ফেলে।এখন অনায়াসেই কলেজের কয়েকটি মেয়ে নীরবের প্রেমে পরে যেতে পারে।
নীরবকে দেখে এখন অন্যরকম লাগছে।জিন্স এবং গেঞ্জির সাথে কাধে পাটের তৈরি ব্যাগ।অসাধারণ মানিয়েছে বলা চলে।
নিলয় নীরবের সাথে ফারহানার পরিচয় করিয়ে দেয়।কলেজের সবচেয়ে সুন্দর এবং নিষ্পাপ মনের মেয়ে হচ্ছে ফারহানা।সে কাউকে কষ্ট দিয়েছে বা খারাপ কোন কথা বলেছে এমন কোন রেকর্ড নেই বললেই চলে।
কিছুদিনের মধ্যে নীরবের সাথে নিলয় এবং ফারহানার অসাধারণ বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়।নীরব তার সব কথা নিলয় এবং ফারহানার সাথে আলোচনা করে।
এখন কলেজে নীরব এর ফ্যান বলতে অভাব নেই।সকলের ভালো লাগার মানুষ হয়ে উঠেছে নীরব।সকল স্যার রাও নীরবকে খুব স্নেহ করে।নীরব সবচেয়ে ভালো হচ্ছে কবিতা আবৃতি এবং বিতর্কতে।যখন সে কবিতা আবৃতি করে তখন সকলে হা করে থাকে।
কিন্তু একটি জিনিস ভেবে দেখুন যদি নীরব বোকা বোকা থাকতো,বোকাদের মতো চুলের স্টাইল থাকতো তাহলে সে যত ভালোই কবিতা আবৃতি করুক না কেন আমরা তাকে একটু অবজ্ঞার চোখে দেখতাম।দুনিয়াটাই এরকম।
আর এখনকার সময়ে সহজ সরল মানুষের দাম কোথায়।যারা একটু সাধারণ জীবন যাপন করে,কোন ঝামেলার মধ্যে থাকে না তাদেরকে তো আমরা দামই দেই না।এক কথায় বলে দেই
-সালা একটি আসতো গাইয়া টাইপ এর।
জীবনে কিছু কিছু সময়ে বন্ধুগুলো আমাদের জীবনের এমন পরিবর্তন আনে যা হয়তো আমাদের জীবন এর মোর ঘুরিয়ে দেয়।
যাই হোক নীরবরা তিন বন্ধু সব সময় একসাথে থাকে।কলেজে এক সাথে বসা রাস্তা দিয়ে এক সাথে যাওয়া।আমাদের সমাজের মুরব্বীরা বা বয়স্ক মানুষরা একটু কটূক্তি করে বসে।তারা শেষ পর্যন্ত কি বলে
-এতো বড় ঢেংরা মাইয়া মানুষ দুইডা জোয়ান পুলার লগে রঙ ঢং কইরা যাইতাছে।
কিন্তু তাতে নীরবদের কি।তারা ভালো বন্ধু সারাজীবন থাকবে যে যাই বলুক না কেন।তারা তো অন্যায় কিছু করছে না।
বন্ধুত্বের মধ্যে পবিত্রতা রক্ষা করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।


===SraNton Hossain

পুরনো স্মৃতি

বেশ অনেক বছর পর এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে পারলাম।তাও সাত বছর তো হবেই।
সাত বছর হলো আমরা কুষ্টিয়া থেকে চলে এসেছি আব্বুর সাথে।তারপর আর কুষ্টিয়ার পুরানো বন্ধুগুলোর সাথে আর যোগাযোগ করা হয়নি।সব সময়ই বন্ধুগুলোর কথা মনে পড়ে সেখানে কাটানো সময়গুলোর কথা মনে পড়ে।
আজকে আমি ফেসবুকে পুরনো এক বন্ধুর নাম দিয়ে সার্চ দিলাম।মনে করেছিলাম পাবো না।কিন্তু এক বন্ধুকে পেয়ে যাই।তারপর তাকে মেসেজ করি
-শ্রাবণ তুমি কি অন্তর নামে কাওকে চেনো।
কারন শ্রাবণ নামে তো অনেকেই থাকতে পারে তার ওপর এই সাত বছরে চেহারা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে।বেশ কয়েক দিন কেটে গেছে কিন্তু কোন সারা শব্দ নেই।
এক সকালে চোখ ডলতে ডলতে ঘুম থেকে উঠলাম।ল্যাপটপ খুলে দেখি একটি মেসেজ এসে রয়েছে।মনে করেছিলাম হয়তো কোন বন্ধু বান্ধব মেসেজ করেছে কিন্তু দেখি শ্রাবণের মেসেজ
-চিনবো না কেন বন্ধু।তুমি তো অন্তর(কাউসার)।তোমাকে জীবনেও ভুলতে পারবো না।
আমার হৃদয়ের ভেতরে ছলাত করে উঠেছে।এতো বছর পরও আমাকে মনে রেখেছে।আর তাও অন্য নামটিও মনে রেখেছে।শ্রাবণর সাথে পুরানো দিনের অনেক কথা বললাম।আমার কান্না আসতে চাইছিলো কিন্তু নিজেকে সামলে নেই।
শ্রাবণকে বললাম
-দোস্ত অন্যান্য বন্ধুগুলোর ফেসবুক দিবা।আর তাদের নাম গুলো বলবা।সবার সাথে কথা বলার ইচ্ছা হচ্ছে।
শ্রাবণ যখন সকলের ছবি পাঠাচ্ছিল এবং তাদের নাম বলছিলো তখন এক অজানা কষ্ট মনের ভেতর দানা বাধছিলো।এই বন্ধুগুলোর কাওকে আমার মনে নেই আর সকল নামগুলোও ভুলে গেছি।একেই বুঝি বলে স্মৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়া।তখন আমি ফেসবুক বন্ধ করে জলদি একটি ডাইরি নিয়ে বসলাম।দেখতে হবে আমার কয়টি পুরনো বন্ধুর নাম মনে আছে আর তাদের নামই বা কি।কিন্তু ডাইরি নিয়ে বসার কিছুক্ষণ পড়েই আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না।এটা আমার সাথে কি হলো।
হাতে গোনা কয়েকজনকে ছাড়া আমি যে কাউকেই মনে করতে পারছিনা।তার মধ্যে আর একজন ছিলো মৃন্ময়।কিন্তু আমার পুরনো বন্ধুগুলোকে কীভাবে ভুলে গেলাম।হয়তো তাদের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছি অনেক খেলাধুলা করেছি কিন্তু কিছুই আমি মনে করতে পারছি না।
সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমাদের কল্পনাকে আমার মনে রাখার ক্ষমতাকে এভাবেই বানিয়েছেন।কয়েকজন বিশেষ মানুষগুলোকে ছাড়া বাকি সবাইকে ভুলে যেতে হয়।অথবা ভুলিয়ে দেয়া হয়।কিন্তু এর যন্ত্রণা যে কি তিব্র সেটা যার সাথে ঘটে সেই শুধু বুঝতে পারে।
নিজের চোখ মুছে ল্যাপটপ আবার খুললাম।শ্রাবণকে বললাম যে মৃন্ময়ের ফেসবুক নাম বলতে।মৃন্ময়কে মেসেজ করে তার সাথে অনেক কথা বললাম।দেখলাম মৃন্ময় আমার ওপর অভিমান করে রয়েছে।এই সাত বছরে কেন একটিবার তার সাথে যোগাযোগ করিনি।ঐ এলাকায় আব্বুর যে অফিস ছিলো সেখানে নাকি সে আমাদের সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি।আমি তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
এক কথায় দু কথায় অনেকটা সময় কেটে গেছে।একদিন একটি মেয়ের মুখ আমার সামনে ভেসে উঠলো।আমরা তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তাম।মেয়েটির সাজ গোঁজ সকলের চেয়ে অন্য রকম ছিলো।একেবারে চুপচাপ ধরনের।সে যেন নিরব দর্শক।কিন্তু মেয়েটির নাম মনে পড়ছিল না।এটা আরও কষ্টকর।
শ্রাবণকে মেয়েটির অনেক বর্ণনা দিলাম আর বললাম
-আমার কিছু চাই না।শুধু তুমি মেয়েটির নাম কি এটা কোনোভাবে ভাবে যোগার করো।মাথায় খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।খুব কষ্ট।
শ্রাবণ বলল
-এটি তো প্রায় অসম্ভব।এমন বর্ণনা দিয়ে একজনকে খোজা অসম্ভব নয় কি?তবুও আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবো।
সত্যি তো আমি যেটা করতে বলছি সেটা তো প্রায় অসম্ভব।আমার চোখে এই মেয়েটিকে খুবই ভদ্র কিউট লাগছে কিন্তু শ্রাবণর চোখে তো অন্য কাউকে ভদ্র মনে হতে পারে।সত্যি এটি প্রায় অসম্ভব।
কিছুদিন পর মৃন্ময়কে একই বিষয় নিয়ে বললাম।সে কি আমাকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারবে।যখন মৃন্ময়কে এই বিষয়টি সম্পর্কে বললাম তখন মৃন্ময় বলল
-মেয়েটির বর্ণনা দাও আমি চেষ্টা করে দেখছি।
আমি পুরো বর্ণনা দেওয়ার পর শ্রাবণ একটি মেয়ের ছবি মেসেজ করলো।মেসেজ দেখে আমি কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলাম।যার কথা বলছি সেই মেয়ের ছবি স্ক্রিনে ভেসে রয়েছে।
আমি শ্রাবণকে বললাম
-এই সেই মেয়ে।
মেয়েটির নাম জানার পর আমার শান্তি হলো।
যাক আমার কল্পনা তাহলে ভুল নয়।আমি যেই মেয়েটিকে দেখেছি সেটি এই মেয়েই।শ্রাবণ ভেবেছিলো আমি হয়তো মেয়েটিকে পছন্দ করি কিন্তু এটি সত্যি নয়।হয়তো কোন অনুভূতি আছে মেয়েটির সাথে জুড়িয়ে কিন্তু তা ভালো লাগা নয়।
একটু হলেও মাথার যন্ত্রণা কমলো।

====SraNton Hossain

তিলোত্তমা

চারপাশ অন্ধকার হয়ে এসেছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।কেমন হালকা একটি আলো চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে।কেমন একটি প্রশান্তি অনুভব করতে পারছি।
আমি একটি বাসে বসে আছি।ফাকা রাস্তা।হু হু করে ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।ক্লান্ত শহরটা যেন দিনের শেষে ঝিমিয়ে পড়েছে।অন্যান্য দিনের মতো কোন ভিড় নেই।কিছু কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে যারা অফিস এর কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছে।
আমার কোলের ওপর একটি ডাইরি।প্রত্যেকদিনের অভ্যাস আমার যে গাড়িতে বসে কিছু লিখা কিন্তু আজ কিছু ভালো লাগছে না।হয়তো এই কোলাহল পরিবেশ হঠাৎ করে এমন চুপ হয়ে গেছে তার জন্য।চোখ বন্ধ করে আছি।
এমন সময় বাস পড়ের স্টপেজে থামল।অনেক মানুষ উঠলো জোরাজোরি করে।সবার শেষে দেখলাম একটি মেয়ে উঠছে।তার কোলে তিন কি চার বছরের একটি বাচ্চা।বাস এর পিছনের দিকে একটি সীট খালি আছে।একটি বাচ্চাকে নিয়ে পিছনে বসা খুব কষ্ট সেটা আমরা জানি।আমার পাশের সীট টাও খালি আছে।হয়তো মেয়েটি বসতে সঙ্কোচ বোধ করছে।তখন আমি মেয়েটিকে বললাম
-তুমি এখানে বোসো।আমি পিছনের সীটে গিয়ে বসছি
মেয়েটি দেখলাম লজ্জা পেলো।সে বলল
-না আঙ্কেল আপনি পিছনে যাবেন কেন।আর আপনি তো আমার বাবার সমান।বাবার পাশে তো মেয়ে বসেই তাইনা।
মেয়েটি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে পাশে বসল।মেয়েটি দেখলাম খুবই হাসি খুশি।আমার কোলের ওপর ডাইরি দেখে ও যেন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো।মেয়েটির মনের ভাব আমি বুঝতে পারলাম।হয়তো আমার ডাইরি সম্পর্কে ওর আগ্রহ জন্মেছে।আমি বললাম
-ডাইরি লিখার অভ্যাস আমার অনেক দিন থেকেই।পড়তে চাইলে পড়তে পারো ।
মেয়েটি দেখলাম খুশি হয়ে উঠলো।কিন্তু কোলের বাচ্চাটির জন্য সমস্যা হচ্ছে।আমি বললাম
-দাও তোমার বাচ্চাটিকে আমার কাছে দাও।তোমার মেয়েটি কিন্তু খুব সুন্দর
বলতে যতটুকু দেরি আমার কোলে এক লাফ দিয়ে চলে আসলো।
-দেখলেন আঙ্কেল কতটা দুষ্টু।একটু সময়ের মধ্যে আপনাকে পাগল বানিয়ে ফেলবে।
বাচ্চাটি দেখলাম ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো।আমি মেয়েটির হাতে ডাইরিটি ধরিয়ে দিলাম।আমি বসে বসে বাচ্চাটির সাথে অনেকক্ষণ কথা বলছি।মেয়েটির দেখি এদিকে কোন হুশ নেই।ডাইরির পাতায় হারিয়ে গেছে।
বাচ্চাটিকে জিজ্ঞেস করলাম
-তোমার নাম কি বাবু?
-রুহি।আমি কিন্তু বাবু না।আমি এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছি
-ও তাই তো।তুমি তো এখন অনেক বড় হয়ে গেছ।তাহলে আমি তোমাকে রুহি বলেই ডাকবো।
-হুম
-এই বুড়ো দাদুটাকে তোমার কেমন লাগলো?
-কে বুড়ো?
-কেন আমি বুড়ো
-কি বোলো তুমি।তুমি দেখতে কতো সুন্দর।আর তুমি দেখতে একেবারেই বুড়ো নও।
আমি রুহির কথা শুনে হাঁসতে থাকলাম।রুহি এখন আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে আমার বুকের ওপর শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
আকাশটা এখন অন্যরকম লাগছে।চারপাশে অন্ধকার হয়ে এসেছে।রাত হয়ে গেছে যে।আটটা বাজে এখন।আকাশে আজকে কোন মেঘের ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না।তারাগুলো ঝিকমিক করছে।মাঝখানে চাঁদ উঠে রয়েছে।অর্ধেক রুটির মতো দেখতে লাগছে।
রুহির দিকে তাকিয়ে দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে।বুকের ওপর মাথা দিয়ে এক হাতের বুড়ো আঙুল মুখে দিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে।কি নিষ্পাপ এই বাচ্চা।পাশে তাকিয়ে দেখি মেয়েটিও ঘুমিয়ে গিয়েছে।কোলের ওপর ডাইরিটি উল্টো হয়ে রয়েছে।মেয়েটির বয়সই বা কতো হবে।সর্বচ্চ হলে বাইশ বছর।আমার কাছে বাচ্চাটিকে দিয়ে কি নিশ্চিন্ত ঘুম দিয়েছে।আমি তো এদের কিছু লাগিনা তাহলে এতো বিশ্বাস কেন।
তখনই মাথার মধ্যে কথাটি বাজতে শুরু করলো
- আপনি তো আমার বাবার সমান।বাবার পাশে তো মেয়ে বসেই তাইনা।
আমি ডাইরিটিকে কোলের ওপর থেকে সরিয়ে নেই খুব সাবধানে।যাতে মেয়েটির ঘুম ভেঙে না যায়।কিছুদুর যাওয়ার পর মেয়েটির ঘুম একাই ভেঙে যায়।তখন মেয়েটি লজ্জা মাখা মুখে বলে
-এমা আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম দেখি।আর বাবুটাও দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে।
-হুম
-আমার কাছে দিন
-না থাক এখন নিতে গেলে হয়তো ঘুম ভেঙে যাবে।
-হুম।আপনার ডাইরিটি পড়ে মনে হচ্ছিল আমি যেন আপনার যায়গায় আছি।খুব ভালো মতো উপস্থাপন করেছেন নিজেকে
-এইতো সখের বসে লিখা আরকি
-ডাইরিটি গেলো কোথায়?নিচে পড়ে গেলো নাকি
-না আমিই সরিয়ে রেখেছি।তোমার ঘুমের সমস্যা হবে বলে।পড়তে চাইলে নিতে পারো।
-থাক একটু পড়েই নেমে যাবো।
বাস থেকে নামার সময় রুহিকে আমার কোল থেকে নেয়ার সময় ওর ঘুম ভেঙে যায়।তখন আমাকে ধরে কান্না করে কিছুক্ষণ।কি আজব এই পৃথিবী।একটু পরিচয়েই এতো আপন।
বাস থেকে নামার সময় মেয়েটি বলে
-তিলোত্তমা এখনো আপনাকে ভুলে যায়নি।আমার মায়ের নাম তিলোত্তমা।
আমি যেন কিছুক্ষণের জন্য থেমে যাই।কি শুনলাম আমি।মেয়েটি হন হন করে নেমে যাচ্ছে।পিছন ফিরে একবারও তাকালো না।রুহি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে কান্না করেই যাচ্ছে।

@SraNton Hossain

ডাইরির পাতা


====== SraNton Hossain
আমি ছোট বলে আমাকে কতো কিছু করতে দেওয়া হয়না।আম্মু আব্বু বোঝেই না যে আমি কাজটি করতে পারবো।তাদের কাছে বললে তারা বলে
-তুই তো এখন খুব ছোট।একটু বড় হ তারপর নাহলে করিস।
খুব রাগ হয় তখন।তখন আমি লুকিয়ে লুকিয়ে করতে গিয়ে সমস্যা তৈরি করে ফেলি।আম্মুকে বললাম
-আম্মু আমি আপেল কাটতে সাহায্য করি?
কিন্তু আম্মু আমার কথা শুনল না।তখন ছুড়ি দিয়ে একটি আপেল কেটে দেখানোর জন্য রান্নাঘরের কোনায় চলে গেলাম।আমি কাটছি আপেলটি।একটু ছোট বলে আকা বাকা হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কাটতে পারছি তো।একটু পর ঘার ঘুরিয়ে দেখি আম্মু পেছনে দাড়িয়ে আছে।
আউচ হাতটা কেটে গেলো।সব কিছু আম্মুর জন্যে হলো।আম্মু আমার কাছে এসে রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে ছিলো।যেই দেখলো আমার হাত কেটে গেছে ওমনি ঘর থেকে ঔষধ এনে লাগিয়ে দিলো।আম্মু আমার বলছে
-বলেছিলাম না তুই এখনো ছোট।একটু বড় হ তারপর সব কাজ করতে পারবি
আমি ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে বললাম
-আমি এখনি সব কাজ করতে পারি।কিন্তু তোমার জন্য সব কিছু হলো।তুমি আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছ বলেই তো হাতটা কেটে গেলো।
আম্মু আমার দিকে মমতাময়ী দৃষ্টিতে তাকিয়ে কোলে তুলে নিলো।...
*আজকে বিছানা থেকে উঠতে মন চাচ্ছে না।মন চাচ্ছে স্বপ্নটা আবার দেখতে।আমাদের জীবনে কতো স্বপ্ন দেখি কিন্তু কয়টা মনে রাখি।আমি ভাবছি প্রত্যেকদিন রাতে যে স্বপ্নগুলো দেখি সেগুলো যদি সকালে নোট করে রাখি তাহলে খারাপ হয় না।তাহলে আজকে থেকেই শুরু কেন নয়?
তাই করলাম।একটি ডাইরিতে লিখে রাখলাম।এমন সময় মোবাইল টা বেজে উঠলো।নাম্বার এর দিকে তাকিয়েই আমার ঘুম উড়ে যাওয়ার অবস্থা।হায় হায় আজকে সকাল সাত টায় না বন্ধুদের সাথে যাওয়ার কথা পাহাড়ে।এখন বাজে সারে ছয়টা।মোবাইল ধরেই বললাম
আমি আসছি
বলেই শরীরে একটি ঢুলা গেঞ্জি জড়িয়ে দিয়ে ব্রাশের মধ্যে পেস্ট ভরিয়ে ব্যাগের মধ্যে সব কিছু ভরে আম্মুকে সালাম করে দে দৌড়।গাড়িতে উঠে ইচ্ছা মতো ব্রাশ করে নিচ্ছি।ড্রাইভার মামার কাছ থেকে পানি নিয়ে কুলি করে জলদি বন্ধুর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি সবাই গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।যাক বাচা গেলো।কথা হয়েছিলো আমি যদি এক মিনিটও দেরি করি তাহলে আমাকে ছেড়েই চলে যাবে।এক বন্ধু বলে উঠলো
-নে এবারের মতো বেচে গেলি।গাড়িতে উঠ এবার।সাতটা তো বেজে গেলো।
আমরা একটি মাইক্রো ভাড়া করেছি চার বন্ধু সিলেট যাওয়ার জন্য।আমার তো গাড়িতে বমি হয় এটা বন্ধুরা জানেনা।আমিও ঘুরতে যাবো এই আনন্দেই সব ভুলে গিয়েছিলাম।আধ ঘণ্টা পার হওয়ার পর আমার গা গুলানি শুরু হয়ে যায়।ব্যাগ থেকে পলিথিন বাহির করতে করতেই আমার হয়ে যায়।আর কে দেখে, আমার পাশে বসা মায়সার পুরো কাপড় শেষ।
মায়সা তো চিৎকার শুরু করে দিলো।
হায় হায় কি করলি তুই।আমার এতো দামি ড্রেসটার বারোটা বাজিয়ে দিলি।আমি ফিক করে একটা হাসি উপহার দিলাম।যাক কোনোভাবে সিলেট গিয়ে নামলাম।
নামার পর সকলে মিলে একটা হোটেলে গিয়ে উঠলাম।আমরা তিন বন্ধু এক রুম নিলাম আর মায়সার জন্য এক রুম।রাত হয়ে গেছে তার ওপর সারাদিনের গাড়ির ধকল সকলে হোটেলে ওঠার পরই শুয়ে পড়লাম।
পড়ের দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই ঘুমে কাদা হয়ে রয়েছে।থাক না ঘুমিয়ে তাতে আমার কি।আমি যাবো ঘুরতে।গেঞ্জি এবং প্যান্ট পালটিয়ে হাটা ধরলাম গ্রামের রাস্তা ধরে।কি সুন্দর রাস্তা ,দুই পাশে বিশাল বড় বড় গাছ মাঝখানে মাটির রাস্তা।রাস্তার ওপর গাছের পাতা পড়ে যেন চাদর হয়ে রয়েছে।হেটে যাচ্ছি আমি এর ওপর দিয়েই।এমন সময় আম্মুর কল এসে পড়েছে।ধরতেই আম্মু বলছে
-কিরে কি খবর তোদের।গিয়ে তো একবার ফোনও দিলি না।বাদ দে কি করছিস এখন?
-আরে মা আমি একটু ঘুরতে বেড়িয়েছি।
-ও তাই।তাহলে ঘুর।দুপুরের দিকে একটু ফোন দিস।মোবাইল ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছে।
হাটতে থাকলাম মনের আনন্দে।কিছুদুর যাওয়ার পর একটি মেয়েকে দেখলাম রাস্তার পাশের গাছের গুড়ির ওপর বসে আছে।ঝিলের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে।পিছনে থেকে চুল ছেড়ে দেওয়া আন্দাজ করতে পারলাম কম করে হলেও পিঠ ছাড়িয়ে গেছে এই চুল।আকাশী রঙের একটি কাপড় পড়েছে।
পেছন থেকে দেখেই আমি মেয়েটির নাম দিলাম কঙ্কাবতী।কিন্তু কঙ্কাবতীর মানে কি জানিনা।পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।কি বলে সম্বোধন করবো বুঝতে পারছি না।তাই ছোট্ট করে একটু কাশী দিলাম।মেয়েটি ঘুরে তাকালো আমার দিকে।আমি তো মনে হয় ঘুরে পড়ে যাবো ঝিলের পানিতে।এতো সুন্দর মানুষ হতে পারে কখনো।রঙ টা একটু শ্যামলা কিন্তু তাতেই তাকে সুন্দর লাগছে।মনে হচ্ছে এ মেয়ে যদি গৌর বর্ণ হতো তাহলে ভালো লাগতো না।
মেয়েটির কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম
-কিছু কি বলবেন?এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?
-না কিছু বলবো না।তুমি এমনভাবে বসে আছো।পানিতে পড়ে যাবেন তো।
মেয়েটি খিল খিল করে হেসে দিলো।আমি মেয়েটির হাসি মুগ্ধ চোখে দেখছি।মেয়েটির সাথে কথা বলার পর মেয়েটি বলে যে সেও নাকি তার বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছে।মেয়েটির সাথে কথা বলতে বলতে দেখি মায়সা আর বাকি বন্ধুরা হেটে হেটে আসছে।কাছে এসেই আমার দিকে আর চোখে তাকাল।এমন ভাব করছে যেন বলতে চাচ্ছে
-শুরু করে দিলি তো তোর ছ্যাঁচড়ামো?
আমি আবার ফিক করে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম।আমার বন্ধুদের অবস্থা আরও খারাপ।ওরা দুই জনই চেষ্টা করছে কার আগে কে মেয়েটিকে পটাতে পারে।আমি মায়সার দিকে আর চোখে তাকিয়ে বললাম
-কিরে এখন বল কি বলবি
মায়সার মুখটা দেখলাম ভার হয়ে গেলো।কারন তার প্রাণপ্রিয় সোহেলও যে মেয়েটিকে পটানোর চেষ্টা করছে।আমি জলদি সোহেলের কাছে গিয়ে বললাম
-ভাই তুই ছেড়ে দে।নাহলে কখন মায়সা অগ্নি মূর্তি ধারণ করে তার ঠিক নেই।দিপুকেই লাইন মারতে দে।
আমাদের দেশের এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে সুন্দরি মেয়ে দেখলেই হয়ে গেলো।তাকে চিনো বা না চিনো তার পিছনে জোকের মতো লেগে থাকবে।কিন্তু সোহেল আমার কথা শুনল।একটু পর দেখছি সোহেল মায়সার কাছে গিয়ে কান ধরে ক্ষমা চাচ্ছে।যাক মিটমাট হয়েই গেলো।এরা থাক এদের মতো আমি আমার কাজ করে যাই।
হাটতে হাটতে পাহাড়ের একেবারে কিনারে চলে এসেছি।কি সুন্দর লাগছে দেখতে।কতো উচুতে এখন আমি।নিচের গাছগুলো দেখতে কতো ছোট লাগছে।
আমি এক মামার কাছ থেকে দশ টাকার বাদাম কিনে খাদের ধারে পা ঝুলিয়ে বসে বাদাম খাচ্ছি।এমন সময় এক বয়স্ক দাদু এসে আমাকে গলা ধরে ওখান থেকে দাড়া করালো এবং বলে
এই ছেলে তুমি এখানে এভাবে বসে আছো কেন।পড়ে গেলে তো একেবারে শেষ হয়ে যাবে এটা বুঝো না।
আমি দাদুর কথায় কোন দাম না দিয়ে তার পিছনের ছোট বাচ্চাটিকে দেখতে থাকি।দেখি বয়স্ক আঙ্কেলের প্যান্টের ফাক দিয়ে ফুচি দিচ্ছে।আমি আঙ্কেলকে বললাম
-কি সুন্দর বাচ্চা।দেখতে কি কিউট।
দাদু তখন বলল
-এটা আমার নাতি।বায়না ধরেছে যে আমার সাথে পাহাড়ে ঘুরতে আসবে তাই নিয়ে আসলাম।
আমি চুপ করে থাকলাম।কিছুক্ষণ পর পিচ্চিটি বলছে
-ভাইয়া আমি তোমার মতো ওখানে বসে থাকবো।
এই সেরেছে।আমি বললাম
-তুমি তো খুব ছোট।একটু বড় হও তারপর করবা
-আমাকে ছোট বললে খুব খারাপ লাগে।আমি করতে পারবো
তখন আমি চমকে যাই।কালকে সকালেও না এমন একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।কথা বাত্রা এতোটা মিলে গেলো কীভাবে।পৃথিবী বড়ই রহস্যময়।
যাক দাদুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম।তারপর দাদু চলে গেলো।আমি আবার পা ঝুলিয়ে বসে পড়লাম।আমার বন্ধুরা দেখছি আবার আমার পিছনে পিছনে এসে পড়েছে।দিপুকে দেখলাম মেয়েটিকে পটিয়ে ফেলেছে।দুইজন হাতে হাত দিয়ে আসছে।তার পাশে মায়সা এবং সোহেল হাত ধরে ধরে আসছে।আমি এই দৃশ্যটি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম একেবারে।মানিয়েছে কতো এদের চারজনকে।জলদি ক্যামেরা বাহির করে ছবি তুলে রাখলাম।অসাধারণ একটি ছবি এসেছে।সবচেয়ে সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে।খোলা চুলগুলো উড়ছে।বাহ অসাধারণ একটি ছবি হয়েছে।
কাছে এসে সবাই মিলে আমাকে খোঁচাতে শুরু করলো।বারে বারে এক কথা
-কেন আমি এভাবে একা একা ঘুরছি।
আমি মোক্ষম একটি উত্তর পেয়ে গেলাম
-তাহলে কি করবো।তোমরা এখন জোড়ায় জোড়ায় রয়েছো।তোমাদের সাথে থেকে কি করবো।তার চেয়ে একা একা ঘুরাই ভালো
চারজনের মুখ দেখি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।আমি উঠে গিয়ে সকল কিছু দেখতে শুরু করলাম যেমন গ্রাম্য বাজার ব্লা ব্লা ব্লা।ভাবছি এই ছবিটা ওঁদের চারজনকে উপহার দেবো।বাদ দেই এইসব।
দুপুর বেলা হোটেলে ফিরে গেলাম।তারপর গোছল করে ডাইরি নিয়ে বসলাম।আজকের সমস্ত বৃত্তান্ত দেওয়ার পর ডাইরিটি রাখলাম।কিছুক্ষণঘুমানোর পর উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে।তার মানে কিছুক্ষণ নয়।কম করে হলেও চার ঘণ্টা ঘুমিয়েছি।খাইছে আমারে।জলদি কাপড় চোপর পড়ে আবার বেড়িয়ে গেলাম।আবার ঐ একই যায়গায় গিয়ে উপস্থিত হলাম।এখান থেকে সূর্য ডোবার দৃশ্যটি দেখতে কি সুন্দর লাগছে।পাশে এসে আমাদের বন্ধুরাও দাঁড়ালো।অপরূপ মহিমা আমাদের এই প্রকৃতির।
অন্ধকার হওয়ার সময় সেই দাদুর সাথে দেখা।তিনি আমাদের সাথে কথা বললেন।আমার নাম্বার রেখে দিলেন।হোটেলে গিয়ে আর ঘুম আসে না।খেয়ে দেয়ে আবার ডাইরি নিয়ে বসলাম ।বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর একটি মেসেজ আসলো আমার মোবাইল এ ।আমি মেসেজ দেখে তো হতবাক।দাদু একটি এমএমএস পাঠিয়েছে।আমরা সব বন্ধুরা মিলে সূর্য ডোবার দৃশ্য দেখছি।পিছন থেকে তোলা হয়েছে ছবিটি।এটিও একটি আউটস্ট্যান্ডিং ছবি।চোখ দিয়ে পানি পড়তে চাইছে ।
দাদুকেও আমার ডাইরিতে যায়গা দিয়ে দিলাম।তার সম্পর্ক অনেক কিছু লিখলাম।আমরা দুইজন দুই প্রান্তের মানুষ কিন্তু কতটা আপন হয়ে গিয়েছি।আমরা মানুষ বলেই এটা সম্ভব।......
দশ বছর পর।...
আমার ছেলে সোহান
আজকে আমার চার বছর বয়সী ছেলেটি আমাদের পুরানো এ্যালবাম বাহির করে নিয়েছে দেখার জন্য।এবং আমার পুরানো ডাইরিটিও তার কব্জায়।একটি ছবির কাছে গিয়ে সোহান থেমে গেলো।এই সেই ছবি যেটা আমি তুলেছিলাম।চারজন হাত ধরে এগিয়ে আসছে।কিছুক্ষণ ছবিটি দেখে সোহান বলল
-এই মেয়েতি দেখতে কি চুন্দল তাই না ববা।মেয়েতিল নাম কি?
-কঙ্কাবতী
আমার মনের ডুপ্লিকেট কপি আমার ছেলে।চুপ করে থাকলাম।এখন জানি সোহান এখন সকল বন্ধু দাড়িয়ে থাকা ছবিটি বাহির করে কিছুক্ষণ দেখবে তারপর অ্যালবাম টা আবার যায়গা মতো রেখে দেবে।এটি ওর নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর আমার ডাইরিটি নেরে চেরে দেখে।একটি দুইটি শব্দ পড়তে পারে এখন।ডাইরির একটি পাতায় শিরোনামে লিখা কঙ্কাবতী কিন্তু পুরো পাতা খালি।আর কিছু লিখা নেই সেই পাতায়।এই লিখাটিই আমার ছেলেটি পড়ার চেষ্টা করছে।
কোথায় গেলো বন্ধুগুলো।সবাই সবার নিজের জীবন নিয়ে রয়েছে।এখন হয়তো মাসে এক কি দুইবার মোবাইল এ কথা হয় কিন্তু তাদের সাথে আর এক সাথে ঘুরতে যাওয়া হয়না।
আমি আছি আমার মতো।আজও যেসব স্বপ্ন দেখি সেগুলো লিখে রাখি ডাইরির পাতায়।

====== SraNton Hossain

জীবনের মানে



কিছুদিন ধরে একটি জিনিষ আমাকে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে।
আমাদের দেশের ধনী মানুষগুলো এমন হয় কেন।তাদের কি কখনো আমাদের এই সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশকে অনুভব করার ইচ্ছা হয়না।তাদের কি এই কৃত্রিম জগত ছাড়া অন্য কোন জগত নেই।
আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি।একটু অন্ধকার হয়ে এসেছে চারপাশ।দোকানে যাচ্ছি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনতে।রাস্তায় হালকা পানি জমেছে।তার মধ্যে একটি পাজেরো গাড়ি আসছে তার উজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে।আমি একটু পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।পানি এসে লাগবে নাহলে।আমি মনে করেছিলাম পানি দেখে হয়তো গাড়ির স্পীড কমাবে কিন্তু কিসের কি।একটি মানুষ যে দাড়িয়ে রয়েছে সেটিও যেন গাড়ির ড্রাইভার দেখতে পায়নি।ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলো।আমার কাপর ভিজে একেবারে শেষ হয়ে গেছে।গাড়ির ভেতর দেখলাম একটি মেয়ে এবং একটি মহিলা বসে রয়েছে।মহিলাটি হয়তো মেয়েটির মা।দুজনেই মোবাইল এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
মেয়েটির মুখে মোবাইল এর আলো পড়ে কেমন নিষ্পাপ একটি বাচ্চার মতো লাগছে।
এই মানুষগুলো কি কখনো রাতের আকাশ দেখে না।আজ যে এতো সুন্দর একটি চাঁদ উঠেছে, চার পাশে আলো ছড়াচ্ছে এগুলো কি এই মানুষগুলোকে আকৃষ্ট করতে পারেনা।মাঝে মাঝে মনে হয় এই মানুষগুলোর গাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে দেই।তারপর তাদেরকে আমার মহামূল্যবান ভাষণ দিয়ে দেই।হয়তো গাড়ি থামাবেই না।আমার ওপর দিয়ে চালিয়ে দেবে।দিক চালিয়ে।আমিও দেখতে চাই এদের মন বলে কিছু আছে নাকি।
কি আর করার।এই ভেজা কাপড় নিয়েই দোকান থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে আসলাম।
আমাদের মতো সাধারন মানুষগুলো এই প্রকৃতিকে অনুভব করতে পারছে।হয়তোবা অসাধারণ হয়ে গেলে এইরকম হয়ে যায় মানুষগুলো।তারা তাদের বাড়ি গাড়ি ছাড়া কিছুই বুঝেনা।তারা এর বাইরে কিছু দেখতেই পায়না যে।
মাঝে মাঝে মনে হয় যদি আমার বয়সই কোন কোটিপতির ছেলে অথবা মেয়েকে যদি সামনে পেতাম তাহলে তাকে প্রশ্ন করতাম
তুমি কি কখনো রবীন্দ্রনাথ এর লেখা পড়েছ?কখনো কি তুমি কাজী নজরুল এর কবিতা পড়েছ?তুমি কি কখনো শরৎ চন্দ্রের লেখা পড়েছ?
এই ছেলেমেয়ে গুলো তো সারাদিন কানের মধ্যে হেডফোন গুজে ডিজে স্নেক ,হানি সিংহ এর গান শুনতে থাকে।তারা বাংলা সাহিত্যের কি বুঝবে।এই ছেলেমেয়েগুলোর বাবা মা কি করে।তারা তাদের ছেলেমেয়েগুলোকে হয় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়তে পাঠায় নাহলে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়।
ছেলে তাদের শিক্ষিত হয়ে দেশে ফিরে আসে।দেশে ফেরার পর তারা কি বলে
-ছি কি নোংরা রাস্তা।এখানে কোন ভদ্র মানুষ থাকতে পারে।
আর হ্যাঁ তারা এই কথাগুলো বলে ইংলিশে।তারা তো বাংলা ভাষা গুলিয়ে খেয়ে এসেছে বিদেশ থেকে তাই না।
আমার দরকার নেই এতো শিক্ষা।আমি আমার পড়ালেখা শেষ করে একটি ছোট চাকরী করবো।কোন ঝামেলা নেই এই জীবনে।হয়তো একটু কষ্ট হবে কিন্তু যখন পরিবারের সাথে পূর্ণিমা রাতের চাঁদ দেখতে বসবো কতোই না শান্তি থাকবে আমাদের জীবনে।ঠিক তখন আমাদের পাশের বাসার বন্ধুটি টাকা গুনতে গুনতে জীবন তামা তামা করে ফেলবে।টাকার কুমির হয়ে যাবে একটা।কিন্তু সে তো জীবন মানে কিছুই বুঝবেনা।শুধু চিনবে টাকা।
হয়তো সেদিন আমার ছেলেটি বন্ধুটির মেয়েকে জীবনের মানে বোঝাবে।রাতের আকাশ দেখা শেখাবে।

===========SraNton Hossain; MD Hridoy Hasan

রাতের আকাশ


-অ বৌমা পুলাডার চেহারা অমন লাগে ক্যান।শুকাইয়া দেহি একেবারে কাঠ হইয়া গেছে।
-না আম্মা কোথায় শুকিয়ে গেছে। হয়তো গাড়ির ধকলের কারনে এমন লাগছে ।ঠিক হয়ে যাবে।
-অ তাই হইবো হয়তো।
দাদির মুখটা দেখলাম ভার হয়ে রয়েছে।দাদির মনে কি চলছে সেটা দাদিই বলতে পারবে।
পড়ের দিন সকালবেলা দাত ব্রাশ করছি এমন সময় দাদি একটি চিকন পাট কাঠির মতন দেখতে একটি লোককে কোথা থেকে ধরে নিয়ে এসেছে।
শুনলাম দাদি মাকে বলছে
-অ বৌমা ইনি হইতাছে আমাগো অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ফকির।ঝার ফুক করে।
-তাতে কি হয়েছে আম্মা।উনাকে এখানে নিয়ে এসেছেন যে।
-না এমনি নিয়া আইলাম।কাইলকা দেখলাম পুলাডার চেহারা ক্যামন শুকাইয়া গেছে।চাইরপাশে আমাগো তো শত্রুর অভাব নাই।কেউ পুলাডারে তাবিচ কবচ করছে নাকি।
দাদির কথা শুনে আমার হাসি পেয়ে যায় কিন্তু হাঁসতে পারিনা।
মা বলেন
-এগুলো কি বলছেন।এইসবে কেউ বিশ্বাস করে নাকি।এগুলো সব ভণ্ডামি
-তুমি যা খুশি ভাবো কিন্তু পুলাডারে সামনে নিয়া আসো।ফকির বাবারে দিয়া দেখাইতে দাও।সমস্যা তো নাই কোন।
আমি ঘরের মধ্যে থেকে এক লাফে বাহির হয়ে আসি।কারন মা কখন চিকনা লোকটাকে তাড়িয়ে দেয় তার ঠিক নেই।তাহলে আমার মজা করাই হবেনা।
আমি বলি
এইযে আমি।দেখুন আমার কিছু হয়েছে নাকি
-এইতো আমার ভালো দাদুভাই।আসো সামনে আসো
লোকটাকে দেখি কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আমি মনে মনে বলছি
এই লোকটা যে এক নাম্বার ভণ্ড সেটা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে।তাহলে দাদি কেন বুঝছে না।
লোকটা বলল
-সন্ধ্যার সময় বাবুডারে ফকির বাড়ি নিয়া আইয়েন।বড় ফকির দেইখা কইবো নে কি হইছে।
মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি রাগে শুধু গজ গজ করছে কিন্তু দাদির জন্য কিচ্ছু বলতে পারছেনা।আর আমার রাগ হচ্ছে কারন আমাকে ঐ চিকনা লোকটা বাবু বলেছে।আমি অতটাও ছোট না।আমি এখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি।
কিন্তু ভেবেই মজা লাগছে আজ রাতে বড় রকমের ইন্টারেস্টিং কিছু দেখা যাবে।মাও কিছু বলতে পারবেনা কারন দাদি যেখানে বলেছেন সেখানে মা কিচ্ছু বলতে পারবেন না।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।বাবা মেজো কাকা আর আমি যাচ্ছি ফকির বাড়ি।দাদি যখন বলেছেন তখন তো যেতেই হতো।মা বার বার আমাকে আটকানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু কোন সুবিধা করতে পারছেন না।
নদীপথ।ছোট একটা ডিঙ্গি নৌকা আর দুইটা দার এই যা সম্বল।আমরা নৌকায় উঠে পড়লাম।নৌকায় উঠার সাথে সাথে আমি তো ভয়ে শেষ।যেভাবে নৌকা কাপছে আমি পড়ে না যাই।মেজো কাকা আমাকে টান দিয়ে বসিয়ে দিলেন আর বললেন
-এইসব নৌকায় যত কম নড়াচড়া করবে ততই ভালো।দেখো এখন আর কাপবেনা।
সত্যিই আমি লক্ষ্য করলাম আর নৌকা কাপছে না।
আমরা রউনা দিয়ে দিলাম।বাবা এবং কাকা দুজনে সব শক্তি দিয়ে দার টানছে কিন্তু আমি কিচ্ছু করতে পারছি না।আর কোন দারও নেই যে আমি হাত লাগাবো।নৌকার মধ্যে দেখলাম যে এক টুকরো কাঠ রয়েছে।তাই দিয়েই আমি পানির মধ্যে আগু পিছু করতে থাকলাম।এমন সময় আমার পা পিছলে গেলো।পানির মধ্যে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম এমন সময় আব্বু আমার প্যান্ট ধরে ফেলল।আমার প্যান্ট অর্ধেক খুলে গেলো কিন্তু পানিতে পড়ার হাত থেকে তো বেচে গেলাম।কিন্তু কাকার সামনে খুব সরম পেয়েছি।প্যান্ট প্রায় খুলা অবস্থায় বসে আছি।
এমন সময় কাকা আমার প্যান্ট উপরে উঠিয়ে দেয়।আমি নৌকার পাটাতনের উপর শুয়ে পড়ি।নদীর শব্দ ভালোই লাগতে থাকে।
যখন ফকির বাড়িতে আমাদের নৌকা থামে তখন অনেক রাত হয়ে গেছে।মেজো কাকা তো অপেক্ষায় আছে কখন এই ভণ্ড ফকিরের পর্দা ফাস করবে।আমিও মজা দেখার অপেক্ষায় আছি।
বড় ফকির যাকে বলে সে দেখতে অতটাও খারাপ না।আমাদের খুব আদর যত্ন করলো।ফকির বাড়িতে দেখি অনেক লোক এসেছে তাদের অসুখ সারানোর জন্য।আমি অবাক হয়ে যাই এতো মানুষকে দেখে।মানুষগুলো ডাক্তার এর কাছে না গিয়ে এখানে এসেছে ঝার ফুক করার জন্য।যখন আমাকে দেখার সময় আসলো তখন আমাকে বড় ফকিরের সামনে বসিয়ে দেওয়া হলো।ফকির আমার হাতে কতো কি ঘসে পরীক্ষা করে দেখলো।আমিও মজা দেখছি।
কিছুক্ষণ পর ফকির ঘরের কোনা থেকে এক ধরনের লতা জাতীয় গাছ বের করলো কিন্তু কোন ফাক নেই যেখান থেকে সেই গাছ আসতে পারে।আমি তো অবাক।ইনি আবার কোন ম্যাজিক দেখাচ্ছেন।মেজো কাকা চুপি চুপি ঘরের পিছনে গিয়ে দেখছেন কিছু আছে নাকি।কোন লোক পিছন থেকে গাছ গুলো দিচ্ছে নাকি।কিন্তু কাকা কিছুই পেলো না।কিন্তু এদিক থেকে ফকির একের পর এক গাছ বের করেই যাচ্ছে।আরও নানারকম জাদুর কাজ দেখালেন এবং নানারকম গাছ দিলেন বেটে খাওয়ানোর জন্য।
আমি জানি মা এগুলো সব ফেলে দিবে ।কিন্তু ভালোই হলো মজা করতে পারলাম।
কাকার মুখ দেখলাম বাংলার পাচের মতো হয়ে আছে।হয়তো ফকিরের ভণ্ডামি ধরতে পারেনি তাই।কিন্তু এই ফকিরের ধূর্ততা আমাকে মুগ্ধ করেছে।এতো মানুষের সামনে এমন চালাকি করা তো সহজ ব্যাপার নয়।
আকাশে অসংখ্য তারা উঠেছে তার মাঝে একটি চাঁদ জল জল করছে।দেখতে ভালোই লাগছে।এই সুন্দর রাতের আকাশের নিচে আমরা নৌকায় করে নদীর বুকে ভেসে যাচ্ছি।
এই সুন্দর পৃথিবীতে অনেক রহস্যময়তা আছে যা আমরা বুঝতে পারিনা।যা আমরা বুঝতে পারিনা তা আমরা এড়িয়ে যাই।
ধুর এসব আমি কি ভাবছি।আমি এগুলো ভেবে কি করবো।তারাগুলো দেখতে থাকি।সত্যি অপুরুপ সুন্দর এই জোছনা রাত এবং এই তারা ভরা আকাশ।মাকে সাথে করে নিয়ে আসলে ভালো হতো।আমার সাথে তারা দেখতো।
শহরের জীবনে সময় কোথায় এভাবে রাতের আকাশ দেখার।আর শান্তিই বা কোথায়।চারপাশে প্যাঁ পু শব্দ গাড়ি ঘোড়ার।
Written by: SraNton Hossain; MD Hridoy Hasan

মৃত্যু

-কি চাও তুমি?
-মৃত্যু
-কিন্তু কেন?
-আমার দিকে তাকিয়ে দেখো আমার কি অবস্থা।
-কেন কি হয়েছে?ডাক্তার যে বলছেন তোমার কোন অসুখ নেই,জবরদস্ত আছো তুমি।তাহলে মৃত্যু কামনা করছো কেন?
-ও তাই নাকি,আমি কীভাবে জবরদস্ত আছি?এই জীবনের কোন মানে হয়?
-কেন এই কথা বলছো?
-দেখো আমার এতো সময় নেই তোমার সাথে ফাউ পেচাল পারার।তুমি আমার কাছে পাঁচ মিনিট সময় চেয়েছিলে।কখন সময় পার হয়ে গেছে। এখন তুমি আসতে পারো
_কিন্তু
_কোন কিন্তু না।তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছেনা।
-ঠিক আছে আমি যাচ্ছি
-হুম যাও
সৈকত সাহেব চোখ বন্ধ করলেন।তার খুব ঘুম পাচ্ছে।একটি নার্স এসে তাকে নানারকম ঔষধ খেতে দিলেন।প্রত্যেকদিন তাকে একরকম জোর করেই ঔষধ খাওয়াচ্ছে।
সৈকত সাহেব একটি কলেজের বাংলার প্রোফেসর ছিলেন।তার টাকাপয়সার কোন অভাব নেই।কিন্তু তিনি এই অসহায় জীবন মেনে নিতে পারছেন না।বয়সের কারনে তাকে সারাদিন বিছনায় শুয়ে থাকতে হয়।হাটা চলা করতে পারেন না।তার এই জীবন পছন্দ না।তিনি এই জীবন থেকে মুক্তি চান কিন্তু তার ছেলেমেয়েরাই আসল সমস্যা করছে।তা নাহলে কোনদিন তিনি ইদুর মারার বিষ খেয়ে শুয়ে পড়তেন।
সৈকত সাহেবের ছেলে অনেকক্ষণ ধরে তার সাথে কথা বলার জন্য পাশে বসে আছে কিন্তু সৈকত সাহেব তার দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছেনা।সকলের প্রতি তার রাগ হয়েছে।
তার মতে কেন সকলে তার স্বাধীনতা হরন করছে।সে কি নিজের ইচ্ছায় মরতেও পারবে না।
-বাবা তুমি আমার সাথে কথা না বললে আমি থাকতে পারিনা তুমি সেটা বুঝো না
-চুপ কর বলছি।কথা বলবিনা আমার সাথে।একটু বুঝার চেষ্টা কর আমার কতটা কষ্ট হচ্ছে।তুই তো জানিস আমি কেমন মানুষ।আমি কি কোনদিন ঘরে বসে থেকেছি?তুই বল
-তাই বলে তুমাকে আমি কখনোই আত্মহত্যা করতে দেবোনা।তুমি আমার লক্ষি বাবা না বলো।
-হইছে হইছে ঢং কমা।এতো বড় হয়ে গেলি কিন্তু এখনো তোর ঢং যায় নাই।দাদুভাই কই গেছে?
-বাইরে খেলতে গেছে
-এবার বল কি বলতে এসেছিস?আমি তো এখন একটা বোঝা।আমাকে দিয়া কোন কাজ হবেনা।
-রাখো তুমার কথা।তুমাকে দেখে এখনো যে কোন মেয়ে পাগল হয়ে যাবে
সৈকত সাহেব তার দুইপাটি দাত ছাড়া মারি বের করে বলল
-এগুলা দেইখা পাগল হবে নাকি?হুম তাই হবে ভুত ভেবে মাথা নষ্ট হয়ে না যায়।
তখন দুজনে মিলেই খিল খিল করে হাঁসতে থাকে।
সৈকত সাহেবের মনে হয় “এইতো কিছুদিন আগে তিনি হাতে কলেজ এর কাগজপত্র সাথে করে নিয়ে ক্লাস করাতে যেতেন।কতো আনন্দ করে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন।তার পড়ানোর ধরনই অন্যরকম ছিলো।ক্লাস এর বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রীর প্রিয় শিক্ষক ছিলেন তিনি।এগুলো ভাবতে গেলেই তার কান্না এসে পড়ে।
এখন সেই সব প্রিয় শিক্ষার্থীগুলোই তার সাথে দেখা করতে আসে।তারা এখন অনেক বড় হয়েছে ঠিক তার ছেলে মেয়ের মতো।
সৈকত সাহেব আর এসব মনে করতে চাননা।কি হবে তার এসব মনে করে।
-দাদুভাই ও দাদুভাই কি ভাবছো এতো?আসো আমরা খেলি
-আমার সাথে কি খেলবে বলো?আমি তো বিছনা থেকে উঠতে পারিনা।
-তুমি না অনেক ভালো দাবা খেলতে পারো।আমাকে শেখাবে
-ও তাই নাকি।দাবার কোট নিয়ে আসো।তুমাকে আজকে দাবা খেলা শিখীয়ে দেই।
সৈকত সাহেবের মেয়ে তার স্বামী সংসার নিয়ে বিদেশে থাকে।
পাঁচ বছর পর..................
অয়ন তাদের বাড়ি পরিষ্কার করার সময় ধুলো মাখা একটি ডাইরি পায়।সে তখন সেই ডাইরিটি উল্টেপাল্টে দেখতে থাকে।তখন সে দেখে যে এটি তার দাদু সৈকত সাহেবের ডাইরি।অয়ন ডাইরিটির প্রত্যেকটি পাতা মনোযোগ সহকারে পড়ে এবং তার দাদুর জীবন কাহিনী পড়ে প্রায় কান্না করে দিতে চায়।
তার দাদু হয়তো নেই কিন্তু তার কথাগুলো ঠিকই রয়ে গেছে।
মৃত্যু মানুষকে মারতে পারে কিন্তু তার অস্তিত্বকে নয়।

=== SraNton Hossain; MD Hridoy Hasan

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...