শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্মগোপন করেছে। হঠাৎ যখন কুয়াশার চাদর কিছুটা সরে যায় তখন মনে হয় যেন গল্পগুলোকে মনে করতে পারবো। কিন্তু হঠাতই কোথা হতে একঝাক কুয়াশা এসে আবারও তার সাদা চাদর দিয়ে সকল কিছুকে গ্রাস করে নেয়।
স্মৃতির দুনিয়ায় ভোরের সূর্যের অপেক্ষা করা একরকম পাগলামো। এখানে কখনো সূর্যের উদয় হয় না। দিন যতো যায় ততোই সে অস্ত যেতে থাকে। সেই সূর্যের এতোটাও শক্তি নেই যাতে করে সে ঘন কুয়াশার চাঁদরকে ভেদ করতে পারবে। সময় যতোই অতিবাহিত হয় ততোই এই দুনিয়ায় কুয়াশার শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবতে থাকে। এক সময় হালকা আধার এবং তার পরে গভীর রাত। সেই গভীর রাতে টিকে থাকার জন্য যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে মানুষ হার মেনে নেয়। কনকনে ঠান্ডার সাথে গভীর অন্ধকারের যে মেলবন্ধন সেখানে মনুষ্য শরীর নিতান্তই অসহায়। স্মৃতিগুলো মনুষ্য শরীর থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে চলে। এক সময় সেই অসহ্য যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়ে যায়ও বটে।
আমি এখন জীবনের সূর্য ডোবার পূর্ব মুহুর্তে অবস্থান করছি। স্মৃতিগুলো এখনও কিছুটা স্পষ্ট কিন্তু বেশি সময় সেটুকুও রবে না। আজ থেকে পঁচিশ কি ত্রিশ বছর আগের ঘটনাগুলো খুব অল্পই মনে করতে পারি। তখন আকাশের ঐ সূর্যটি আমার নিকট রক্তের এক গোলকের মতো অনুভূত হতো। যে সূর্য সৃষ্টির অন্তিম পর্যন্ত মনুষ্য জাতির মধ্যে জীবনের সঞ্চালন করে চলবে।
কোন একদিন দুপুরের সূর্যটি মাথার ওপর উঠে অতিরিক্ত উষ্ণতা দেওয়ায় ব্যস্ত ছিল। সেদিন তার দিকে হাতের তালু উল্টিয়ে বলেছিলাম,
-"বাছা অনেক তো জ্বললে।এবার একটু রহম করো।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ হতে একটি মেয়েকে আসতে দেখছিলাম। কিছুটা অস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি যেন। পরিপূর্ণ রূপে তাকে কল্পনা করতে পারছি না। তার পরনে তাঁতের শাড়ি ছিল কি? হ্যা তাই হবে। কাঁধে একটি শান্তি নিকেতনের ব্যাগের মতো দেখতে একটি পাটের ব্যাগ। এটা বোঝা একেবারে কষ্টসাধ্য ছিল না যে মেয়েটি একটি খাঁটি বাঙাল বংশের মেয়ে। আমাদের মতো সুট টাই পড়া 'ডিফেকটিভ ব্যাঙ্গালী' নয়। মেয়েটির চেহারা মনে করতে পারছি না। উহু,কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।

আমার পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া নাতনি আমাকে 'ওয়াটার ট্রিটমেন্ট' শিখিয়েছে। তার পদ্ধতিটি এমন যে ,
"কখনো কোন কিছু মনে করতে না পারলে বা মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলে লম্বা একটি শ্বাস নিয়ে মাথা পানির মধ্যে ডুবিয়ে দাও। তিরিশ সেকেন্ড পর মাথা উঠিয়ে আবার লম্বা এক শ্বাস নিয়ে আবার ডুবিয়ে দাও। এভাবে বেশ কয়েকবার করতে থাকো।"

এই ছোট্ট মেয়েটি এই বুদ্ধি কোথা হতে পেলো এটাই একটি ভাবনার বিষয়। আমি বেশ কয়েকবার উক্ত পদ্ধতি চেষ্টা করে দেখেছি। কাজ যে একেবারেই হয় না তেমনটি বলা ভুল হবে। আমি অন্তত গল্প লেখার সময় এর সুফল পেয়েছি।

কোথায় যেন ছিলাম? ওহ হ্যা মনে পড়েছে। সেই রোদ্রোতপ্ত দুপুরে আমার দিকে মেয়েটি হেটে আসছিল। অতি সন্নিকটে এসে বলেছিল,
-"মাহি ভাই,বাংলা স্যার যে টিকাগুলো দিয়েছিল সেগুলো কি আছে?"
মেয়েটির প্রশ্নের উত্তরে আমি কিছু একটি বলেছিলাম হয়তো। কিন্তু তা আর মনে পড়ছে না।

আমি তো প্রায় মৃত্যুর দোয়ারে পৌঁছেই গিয়েছি। জীবনের এই সময়টাতে সূর্য অনেক জলদি ডুবতে থাকে। এই যেমন দেখলাম যে সূর্য পশ্চিম আকাশে গাছগুলোর ওপর চুপ করে বসে রয়েছে। কিন্তু একটু পরেই সে উধাও হয়ে যাবে। একেবারে "ভ্যানিশ"।
বর্তমানে অনেক মহান বক্তিত্বদের মুখে শুনে থাকি যে ,মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব? কিন্তু তা কিভাবে সেটা আমার এই শান দেয়া ক্ষয়ে যাওয়া মগজে কিছুতেই ঢুকে না। আমাদের যে এতো অর্জন সকল কিছুই তো একদিন অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। তাহলে আমরা সৃষ্টির সেরা কি করে হলাম?
সেগুন কাঠের তৈরি পুরোনো ভারী জানালাটি বাতাসের ধাক্কায় খুলে গেলো। অনেক দূর হতে হিমেল বাতাস অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে আমার শরীরে এসে লাগছে। ঠিক যেন মৃত্যু শীতল অনুভূতি। কালো চাদরটি ভালো মতো গায়ে জড়িয়ে নিলাম।

জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কুয়াশার চাদর কিছুটা সরে গিয়েছে। কে যেন চিৎকার করে উঠলো। হ্যা কে যেন পাহাড়ের ওপর হতে অনেক নীচে পরে যাচ্ছে। হ্যা একটি মেয়ে। এই মেয়েটির গায়েও তো বাসন্তী রঙের তাঁতের শাড়ি। তার কণ্ঠে বাঁচার আকুতি। তার সাথে কি যেন না পাওয়ার যন্ত্রণা। মেয়েটি চিৎকার করে বলছে,
-"মাহি ভাই আমি বাঁচতে চাই। আপনার হাত ধরে বাঁচতে চাই।"
পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি গগন বিদারী চিৎকার করে ওঠে।

'না,এ হতে পারে না। কে মারা গেলো? বাঁচাও মেয়েটিকে। কেও আছো?'
আমার শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছে। বাড়ির সকলে ছুটে আসছে আমার দিকে। কে যেন উৎকন্ঠার সাথে বলে উঠলো,
-"আব্বাজান আপনার কিচ্ছু হবে না। এখনই এম্বুলেন্স আসছে।"
এতো কোলাহল কিসের জন্য। সবাই কেন এভাবে কান্না কাটি করছে? হঠাৎ কপালে ছোট্ট একটি হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকাই। ছোট্ট একটি মেয়ে অশ্রু ভেজা চোখে বলে উঠলো,
--"দাদু আমি তোমার হিমাঙ্গিনী। আমায় ছেড়ে কোথাও যেও না প্লিজ।"
আমার চোখের কোণে পানি জমে ওঠার কারণ কি? হঠাৎ জানালার ধার থেকে মিষ্টি এক কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।
-"মাহি ভাই মনে আছে আমায়? আমিই হিমাঙ্গিনী।"
মেয়েটির পুরো শরীর দিয়ে হালকা এক রশ্মি বের হয়ে আসছে। মেয়েটিও আমার মাথার কাছে বসে পড়লো। আমার দুই পাশে দুই পাশে দুই হিমাঙ্গিনী বসে রয়েছে। একজন কান্না থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু তা পুরাটাই ব্যার্থ চেষ্টা। আর অন্যজনের ঠোঁটে হালকা এক চিলতে হাসি। যে হাসির সৃষ্টি এই পৃথিবীতে নয়।

আমাকে এম্বুলেন্স এ তড়িঘড়ি করে ওঠানো হচ্ছে। আচ্ছা, আকাশের সূর্যটি হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো? নাহ দেখতে পারছি না তো। এতো অন্ধকার কেন চারপাশে। তাহলে কি আজই আমার স্মৃতিগুলোর শেষ দিন? হ্যা, তাই হবে।
এতো ঠান্ডা কেন চারপাশ। আচ্ছা সেই মেয়েটি কে যে পাহাড় থেকে পড়ে যাচ্ছিল? তাকে কি আমি চিনি? 
অন্ধকার হতে সেই কণ্ঠটি আবার ভেসে আসছে।
-"মাহি ভাই চলো তবে আমার সাথে। স্মৃতিগুলো বিলীন হয়ে যাক মহামায়ার।"
আমি কিছু না বুঝেই মনে মনে উত্তর দিলাম,
-"তবে তাই হোক।"

ধন্যবাদ Jahidul Islam Jhonny দোস্ত।

Written by: SraNton Hossian

বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০

মন

কি মন মিয়া সেদিনের কথা মনে পরে?
পড়ন্ত বিকেলে,অনেক নীচে একটি বিশাল নদী।নানাভাই এর সাথে বসে আছি।মুখোমুখি সিমেন্টের দুইটা ব্রেঞ্চ তৈরি করা।নানাভাই তার বয়সই এক লোকের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।লোকটির সাথেও ছোট্ট একটি মেয়ে।
মেয়েটি ব্রেঞ্চের ওপর বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।আমিও তাকে অনুকরণ করে নদীর দিকে তাকিয়ে রয়েছি।কি সুন্দর নদী।এটাই বাংলা মায়ের আসল সৌন্দর্য হয়তো।কি পরিষ্কার পানি।শীতের দিন হওয়ায় মাঝে মাঝে বালির স্তর দেখা যাচ্ছে।তাতে মনটা আরো ভালো হয়ে গেলো।মাঝে মাঝে ট্রলারের ফট ফট শব্দ আসছে।সকল কিছু যেন একটির সাথে আরেকটি অদৃশ্য শেকলে বাধা।নৌকা ছাড়া যেন নদীর এই সৌন্দর্য ফিকে হয়ে আসে যেমনটি তাঁরা ছাড়া চাঁদের সৌন্দর্য।
মেয়েটির সাথে এই কিছুক্ষণ সময়ে বেশ ভাব হয়ে গিয়েছে।
ওদিকে নানাভাই লোকটির সাথে এখনও কথা বলেই যাচ্ছে।কি এতো কথা একটি অপরিচিত মানুষের সাথে এটাই আমার বুঝে আসে না।
সূর্যটা এখন রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।সূর্যটি নদীর ঐপারে গাছপালার মাঝে ডুবে যাচ্ছে যেন।কিন্তু নদীর অন্যপার অনেক দূরে।ছোট ছোট গাছ দেখা যায়।মেয়েটি আমার পাশে এসে বসলো।বলল,
-"আজ থেকে আমরা বন্ধু,ঠিক আছে?"
আমিও হিহি করে হেসে দিয়ে বললাম,
-"আচ্ছা।"
★আচ্ছা আমি তখন কোন ক্লাসে পড়ি?হ্যা এইতো মনে পড়েছে।তখন তো মাত্র প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছি।অনেকটা সময় বলা চলে।বারোটা বছর তো হবেই।আচ্ছা নানাভাইকে যদি সেই ঘটনার কথা বলি তাহলে সে কি মনে করতে পারবে?হয়তো পারবে, হয়তো নয়।
আচ্ছা সেই যে মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিলো তার সাথে কি পরে আবার দেখা হয়েছিল?মনে পরছে না।নাহ, কিছুই মনে করতে পারছি না।
আচ্ছা সেই নদীটি কি এখনও আগের মতোই সুন্দর আছে?আগের মতোই নৌকা চলে?আগের মতোই সূর্য দূরে গাছ গুলোর মাঝে ডুবে যায়?
আচ্ছা সেই সিমেন্টে বাঁধানো ব্রেঞ্চ দুইটা কি এখনও আছে নাকি ভেঙে ফেলা হয়েছে?

#দুঃখ_উড়াই_মনের_মাঝে★

বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

দিন শেষে মানুষ

দিন শেষে আমরা সবাই মানুষ।একদিকে সমাজে উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ব্যক্তিটি যেমন মানুষ তেমনি সকলের মাঝে মিশে থাকা খুনি ব্যক্তিটিও মানুষ।
আজকাল একটি কথা অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছে।কথাটি এমন,
--"তোমার জগতে আমি নিকৃষ্ট কিন্তু আমার জগতে আমিই শ্রেষ্ঠ।"
কথাটি আমার বেশ ভালো লেগেছে।উক্ত উক্তিটি নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম এর ওজন নিতান্তই কম নয়।বেশ শক্তি রয়েছে এর মাঝে।
ধরা যাক একদিকে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া এক ব্যক্তি আর অন্যদিকে মাতাল-নেশায় আসক্ত এক ব্যক্তি।আচ্ছা বলুন তো কোন ব্যক্তিটি ভালো?হয়তো আপনারা অনেকেই বলবেন,
--"অবশ্যই পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া ব্যক্তিটি।"
কিন্তু আমার উত্তর হবে কিছুটা ভিন্ন।আমি বলবো তারা দুজনেই তাদের নিজ নিজ জগতে শ্রেষ্ঠ মানব।
পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া ছেলেটি যদি তার দায়িত্ববোধকে অনুভব করতে না পারতো তাহলে সে কোনদিনই তার নিজের জগতে শ্রেষ্ঠ হতে পারতো না৷কারণ সে মনে করে পরিবারের দেখাশোনা করা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য, তাই সে শ্রেষ্ঠ।
তেমনই নেশাখোর ব্যক্তিটি যখন নেশার ঘোরে ডুবে থাকে তখন নিজেকে রাজা বলে ভাবতে শুরু করে হয়তো।নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তার ভাবনার জগৎটি কিন্তু মিথ্যে নয়।তার জগতে নেশার সামগ্রী হয়তো পবিত্র কোন জিনিসের সমতুল্য।অবশ্য এটি আমার নিজস্ব মতামত। 

এখন আসা যাক খুনি ও চাকরিজীবী এর বিষয়ে।আমি তাদের পারিবারিক জীবন নিয়ে বলার চেষ্টা করি।

একটি লোক বেশ ভালো বেতনের চাকরি করে।পরিবার বলতে মা,এক মেয়ে এবং তার স্ত্রী।যাকে বলে, "হ্যাপি ফ্যামিলি"।যখন লোকটি সারাদিন পর অফিসের কাজ শেষে বাড়ি ফিরে আসে তখন তার মেয়ের মতো খুশি কেউ হয়না।ঘুমাবে বাবার কাছে,খাবার খাবে বাবার কোলে বসে,বাবার কর্মকান্ড নকল করবে।এক কথায় বাবা অন্ত প্রাণ।আর লোকটির কাছেও পৃথিবী বলতে তার মেয়ে।

এতো বললাম সভ্য জগতের কথা।এবার আসা যাক মানুষের ভিড়ে মিশে থাকা খুনির জীবন সম্পর্কে।

এলাকার গুন্ডাদের একজন সম্মানিত সদস্য।সারাদিনের নানারকম অপকর্মের পর যখন বাড়িতে ফিরে আসে তখন নিজেকে যতোটা সম্ভব সভ্য হিসেবে পরিবারের সামনে প্রদর্শন করানোর চেষ্টা করে।চার বছরের নেঙটো ছেলেটি বাবার দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।বাবা যখন ছেলেটিকে কোলে তুলে নেয় তখন শুধু খিল খিল করে হাসির শব্দ পাওয়া যায়।তখন সেই বাবার মাঝে খুনি সত্তাটির কোন অংশ অবশিষ্ট থাকে কি?হয়তো নয়।

এখানে উভয় ব্যক্তিরই কিন্তু এক আলাদা জগৎ রয়েছে যেখানে তারা উভয়েই এক।তারা দুজনেই পিতা।তাই বলে এমন নয় যে, আমি খুনকে মহান পেশা হিসেবে দেখাতে চাচ্ছি।অবশ্যই খুন একটি অতোন্ত ঘৃণ্য কাজের অন্তর্ভুক্ত।কিন্তু আমি এখানে প্রতিটি ব্যাক্তির এক অভিন্ন জগতের খোজে রয়েছি।

আমরা প্রতিটি মানুষকে এক দিক থেকে বিবেচনা করি।কয়েকটি ভাগ রয়েছে আমাদের কাছে।যেমন ভালো,খারাপ,নির্বোধ,চালাক।আমরা এই কয়েকটি বৈশিষ্ঠ দিয়ে প্রতিটি মানুষকে বিবেচনায় এনে থাকি।কিন্তু মানুষের মনোজগৎটি বেশ জটিল যা আমি এর আগের কয়েকটি লিখায় বলেছি।
আমার মতে প্রতিটি মানুষের একটি সুন্দর মন রয়েছে।কিন্তু সম্পূর্ণ রুপে সকলে সেই মনকে অনুধাবন করতে পারেনা।
আমার এইসব কথা হয়তো ভিত্তিহীন, হয়তো পাগলের মতো উল্টোপাল্টা বলে যাচ্ছি।কিন্তু আমার দেখার ধরণ এরকমই।অনেকে বলতে পারেন যে আমি অন্যায়ের পক্ষে কথা বলছি।আমি এটুকু বলবো,
--"কোন খুনী যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পরে তাহলে তো হলোই।কিন্তু যদি ধরা না পরে তাহলে এটুকু আশা রাখতে পারি, হয়তো তার বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে তার ভেতরের অনুশোচনা বোধ জেগে উঠবে।"

শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২০

বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান

আমাদের দেশের নাম "গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ"।১৯৭১ সালের পর থেকেই আমাদের দেশ বাংলাদেশ।এখন সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।সকলেই সেটা জানি।এখন আমার মতো করে কিছু কথা বলি।
আমাদের বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দুই দেশের মাঝে সকল সময় একটি দন্ড থেকেই যায়৷ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের একই অবস্থা।পাকিস্তান ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের মানুষের ওপর এক নির্মম অত্যাচার চালায়।আর শোষণ তো অনেক আগে থেকেই করে আসছিলো।এই সকল কিছুই আমাদের জানা কথা।কিন্তু এখানে কিছু ভাবনার বিষয় আছে।একটি দেশ কিভাবে খারাপ হতে পারে।দেশের শাসনে যারা থাকে তারা খারাপ হতে পারে কিন্তু দেশ নয়।তখনকার পাকিস্তানী নেতাদের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের জন্য আপনা আপনি মুখ দিয়ে গালি চলে আসে।সকলের ক্ষেত্রেই সেটা একই বলা চলে।কিন্তু পাকিস্তান দেশটিকে কখনোই আমি ঘৃণা করতে পারিনা।
এবার আসা যাক মূল কথায়।আমার বোন পাকিস্তানের নাম শুনলেই দাত মুখ খিচে পাগলের মতো করতে শুরু করে।আমি যখন বলি, " আমি মানবধর্মে বিশ্বাসি" তখন বোন বলে, 
--"আমিও মানবধর্মে বিশ্বাসি কিন্তু পাকিস্তানি হচ্ছে পাকিস্তানি।"
এক পর্যায়ে বোন আমাকে রাজাকার বলে অপমান করতে শুরু করে।লাঠি দিয়ে মারতে আসে।কিন্তু আমি বাপু আমার জায়গা থেকে এক চুলও সরে যাওয়ার পাত্র নই।আমি বোনকে বোঝাতে শুরু করি,
--"দেখ বোন পাকিস্তানে আমাদের প্রজন্ম এবং আমাদের বাবা মায়ের প্রজন্মের যে মানুষগুলো রয়েছে তাদের ওপর তোর রাগ থাকার কথা নয়।তারা তো আমাদের কোন ক্ষতি করেনি।"
কিন্তু বোন তো বুঝতে নারাজ।সে বলে,
--"কিন্তু তাদের দাদার প্রজন্ম তো আমাদের দেশের নিরীহ মানুষদের খুন করেছে।"
--"তাতে তাদের কি দোষ।তারা কি কিছু করেছে?তারা হয়তো অনুশোচনা করছে তাদের দাদার প্রজন্মের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের জন্য।"
তার পরেও বোন তার গোয়ার্তূমি নিয়ে বসে রয়েছে।তখন আমি বললাম,
--"ধর তুই একটি বাচ্চাকে রাস্তায় পরে থাকতে দেখলি।ঘটনা ক্রমে জানতে পারলি বাচ্চাটি একটি পাকিস্তানি দম্পতির বাচ্চা।এখন তুই কি বাচ্চাটাকে ফেলে দিবি?নিশ্চই নয়।"
বোনকে দেখলাম চুপ হয়ে গেলো।
আমি বলবো পাকিস্তানের এখনকার মানুষ খারাপ নয়।এখন যদি ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশ মিলে পাকিস্তানিদের শত্রু বলে আক্রমন করে তাহলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ মারা যাবে যারা কোন অন্যায়ই করেনি।আমি বলবো,
--"আমি আমার দেশকে ভালোবাসি।তাই বলে পাকিস্তানকে ঘৃণা করিনা অথবা পাকিস্তানের মানুষদের।আমি সেসকল মানুষদের ঘৃণা করি যারা আমার দেশের নিরীহ মানুষদের নির্বীচারে হত্যা করেছে।তাই বলে তাদের অন্যায়ের ভাগিদার হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মকে চিহ্নিত করতে পারিনা।"
আমি বলবো আমি মানব ধর্মে বিশ্বাসি।

উল্লেখ্যঃপাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন যে অতীতে পাকিস্তানের নেতারা বাংলাদেশের সাথে অন্যায় করেছে।অন্যদিকে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে এসে বাঙালিদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছে সেটিও বলেছেন।
যেখানে তারা অতীতের কর্মকান্ডের জন্য লজ্জিত সেখানে কেন আমরা একটি দেশের ওপর আঙুল তুলছি।যেখানে বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ একেবারেই ভিন্ন।মনের ভেতরে ঘৃণার পালন করলে তার ফল কখনো ভালো হয়না।যেখানে হাদিসে বলা আছে যদি শত্রুরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ। যেখানে এই মানুষদের কোন দোষই নেই।

@SraNton Hossain 

শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০

সেমিনার রুম


(১)
হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সেমিনার রুম।জানালার পাশের খালি টেবিলটিতে বসে রয়েছি।জানালার বাইরে বিরাট একটি বটগাছ এবং ছোট্ট একটি পুকুর ছবির ফ্রেমের মতো শোভা পাচ্ছে।ভালো না লাগার কোন কারণ নেই যে।
জানালার পাশের ছবি রাখার ফ্রেমটিতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি।কতো পুরোনো এবং স্মৃতি মাখা ছবি দেখা যাচ্ছে।কয়েকটি ছবির ওপর আমার চোখ বারবার ঘুরছে ফিরছে।
একটি ছবি দেখে মনে হচ্ছে শীতকালে তোলা।পেছনের দিকের পাহাড়গুলো কুয়াশার চাদড়ে মোড়ানো।ছবিটা পুরোনো হওয়ায় অতোটা স্পষ্ট নয়।
বেশ কয়েকজন তরুণ ছেলে পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।একজনের হাতে গীটার আর বাকিদের ঠোঁটে মিষ্টি এক চিলতে হাসি।ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে রঙিন ক্যামেরার প্রচলন বা ঐ সময়কালের তোলা।
আরেকটি ছবির ওপর আমার চোখ আটকে গেলো।
সরু একটি নদী, দুই পাশে উচু ও সবুজ পাহাড়।নদীর পানিতে পাহাড়ের ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে।ওপরের নীল আকাশ সাথে সাদা সাদা মেঘ।
নদীর বুকে নৌকার মাঝে বেশ কয়েকজন ছেলে বসে রয়েছে।হাস্যোজ্জ্বল চেহারাগুলো দেখে মনের কোথায় যেন পুলক অনুভব করতে পারছিলাম।ছেলেগুলোর পোষাক দেখে একটি স্যারের কথা মনে পড়ছে।স্যার বলেছিলো,
--"আজ থেকে বিশ বছর অতীতে ছেলেদের কাছে একটি স্টাইল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলো।ঢোলা তৈরি করা প্যান্ট সাথে সার্ট বা গেঞ্জি যাই হোক না কেন প্যান্টের মাঝে গুজে পরিধান করা।সাথে চোখে কালো একটি চশমা।"
স্যারের কথার সাথে ছেলেগুলোর কাপড় পরিধান করার ধরন অনেকটা মিলে যাচ্ছে৷সামনের দিকে একটি ছেলে নৌকার পাটাতনে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছে।তার মাথায় এখনকার স্টাইলে একটি ক্যাপ শোভা পাচ্ছে।যা অনেকটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে বলা চলে।কোথায় যেন সকল কিছু ঠিক নেই।কিন্তু এই ছবির বয়স অনায়াসেই পনেরো বছর পার হয়ে যাবে।
আচ্ছা এই ছেলেগুলো এখন কোথায়?তারা সকলের হয়তো মধ্যবয়সী মানুষ।তারা কি তাদের সোনালী অতীত স্মৃতিতে অনুভব করতে পারে?তারা যদি কখনো কলেজের এই সেমিনার রুমে এসে এই ছবিগুলো দেখতে পায় তাহলে তাদের কেমন লাগবে?
কষ্টের অনুভূতি হবে হয়তো।
কিন্তু তারা কি কখনো এক সাথে হতে পারবে?সম্ভাবনা খুবই কম।মানুষগুলো হয়তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরেছে পুরো দেশে চাকরির সুবাদে।শিক্ষা জীবনের পর হয়তো সকলের একসাথে হওয়াই হয়নি।

(২)
নিচে পুকুর এর কিনার থেকে কয়েকজন ছেলে মেয়ের কণ্ঠ ভেসে আসছে।অনেকটা অস্পষ্ট কিন্তু গানের মতো শোনাচ্ছে।সকলে মিলে গান গাইছে হয়তো।
এমন সময় একটি নাম না জানা পাখি তার সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে তুলছে।তার মনে হয়তো অফুরন্ত আনন্দ।
এই পাখি একদিন অতীত হয়ে যাবে,তার আনন্দ ধ্বনিও অতীর হয়ে যাবে,ঐযে গান গাইছে যেই ছেলে-মেয়েগুলো তাদের গাওয়া গানও একদিন অতীত হয়ে যাবে।
শুধু স্মৃতিগুলো জঞ্জালের মতো আটকা পরে থাকবে এই গোলক ধাধায়।
@SraNton Hossain

রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

অসমাপ্ত কথামালা


★উরমিলা
জন্মঃ১০ জুন ২০০৩
আমাদের মনোজগৎটি  বেশ জটিল।হয়তো এই জটিল হওয়াটিই স্বাভাবিক।
মেয়েটির নাম কি?জানিনা।তার জন্ম কতো সালে?তাও জানি না।এখন অনেকেই বলতে পারেন,
--"তাহলে বাপু নাম আর জন্ম তারিখ দিয়ে শুরু করার মানে কি?"
আমি বলবো,
--"জানিনা কিছুই জানিনা।"
আজ থেকে পাচ কি ছয়টি বছর যেমন তেমন ভাবে হয়েই যাবে।সময়টি একটি শীতের সকাল।বাস থেকে নেমেছি,কোচিং ক্লাস আছে যে।চারপাশ যেন কুয়াশার চাদরে ঢাকা।তাই বলে অতোটাও নয় যে দশ হাত সামনে কিছু দেখা যাবে না।বাসের হেল্পার এক কথায় চিৎকার শুরু করেছে,
--"আরে মামু গাড়ির সামনে থন হরেন।"

তাই তো, আমি তো বাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।বাসের সামনে থেকে সরে আসলাম।আর মিনিট পাচ হাটলেই কোচিং ক্লাসে পৌছে যাবো।হঠাৎ করে কোথা থেকে হিমেল হাওয়া এসে কাপুনি ধরিয়ে দিয়ে গেলো।এখন মনে হচ্ছে এই ভরা শীতে পাঞ্জাবি আর চাদর গায়ে দিয়ে আসা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

রাস্তার পাশে যে বড় একটি পুকুর রয়েছে সেটি এতোদিন আমার নজরেই আসেনি।কিন্তু কেন আসেনি?হয়তো প্রকৃতি চায়নি তাই আসেনি।পুকুরের পাশ একটি বসার জায়গা করা আছে।বেশ মানিয়েছে এই পুকুর আর বসার জায়গাটি। ভাবছি আজ আর কোচিং এ যাবো না।কখনো নিয়মের বাইরে করা যাবে না এটা কোন সাধক বাবা বলেছে?আমি তো শুনিনি।
পুকুরটির পাশে যেতেই দেখলাম ব্রেঞ্চটির মাঝে একটি মেয়ে বসে রয়েছে।মুখের দিকে তাকাতেই আমি বিদ্যুতে শক খাওয়ার মতো দু পা পিছিয়ে আসলাম।এই সৌন্দর্যের কোন বর্ণনা দেওয়া চলেনা হয়তো।তাই আমিও না দেই।
শরীরে একটি কালো চাদর জড়ানো।একেবারে নিরেট কালো।হয়তো বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়েছে।ঠিক বুঝতে পারছি না যে।তার ওপর কুয়াশা যেন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।মেয়েটির চুলগুলো বাচ্চাদের মতো একটি ঝুটি করা।অপরুপ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছি।সকল সৌন্দর্য যেন মেয়েটির জন্যই তৈরি।

হয়তো মেয়েটির আমার সম্পর্কে বাজে ধারণা তৈরি হবে।কি আর করার।সত্যি কিছুই করার নেই।মেয়েটি আমার দিকে একবার তাকালো।সেই চোখে রাজ্যের বিষন্নতা।কেন এরকম বিষন্নতা।এটা উচিৎ নয়,একেবারেই উচিৎ নয়।হঠাৎ করে সেই হিমেল হাওয়া কোথা থেকে আবার উদয় হলো।মনে হচ্ছে এই ঠান্ডার অনুভূতি যেন শরীরে বিধে যাচ্ছে।নিজেকে কোনমতে ঠিক রেখে হাতে হাত ডলতে ডলতে পুকুরের দিকে ঘুরে দাড়ালাম।
বেশ অনেক সময় মাঝে পার হয়ে গিয়েছে।দশ মিনিট তো হবেই।আমি ধারণা করলাম মেয়েটি আমার উপস্থিতিতে অস্বস্থি বোধ করে হয়তো চলে গিয়েছে।হঠাৎ করেই নুপুরের মতো হালকা কন্ঠে বলে উঠলো,
--"এই ঠান্ডার মাঝে এভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যে?অসুস্থ হয়ে যাবেন তো।"
আমি ঘুরে তাকিয়ে বললাম,
-"আপনিও তো একটি চাদর গায়ে দিয়ে বসে রয়েছেন।আপনার ঠান্ডা লাগে না?"
-মেয়েটি হয়তো কিছুটা দমে গেলো।দেখলাম মেয়েটি ব্রেঞ্চের এক পাশে সরে গিয়ে আমাকে বসার জন্য জায়গা করে দিলো।ব্রেঞ্চে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলাম,
--"এই সকালে কনকনে ঠান্ডার মাঝে বসে রয়েছেন কেন?"
মেয়েটি বলল,
--"আমার কথা আমাকেই ঘুরিয়ে দিলেন?"
বলেই খিলখিল করে হেসে দিলো।হয়তো সেই হাসির মাঝে আত্মার পরিশুদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে।আমিও নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম।কিন্তু সেই হাসিতে অসুস্থতা মিশে রয়েছে ভয়ানক ভাবে।নিজেকে বড় ক্লান্ত মনে হচ্ছে।এই কনকনে ঠান্ডা আর আমি যেন একই অস্তিত্ব।চোখে ঘোর লেগে রয়েছে কিন্তু মন যেন শরীরের বিরুদ্ধে চলছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম,
--"নাম কি আপনার?"
--"জানিনা।"
--"বলতে চাইছেন না তাই তো?"
--"ঠিক তেমনটি নয় আবার ঠিক তেমনই। "
মেয়েটি বেশ ঘুরিয়ে কথা বলতে পারে।কিন্তু কণ্ঠে তার বাচ্চাদের মতো সরলতা সকল সময়ই লক্ষ্য করছি।নাহ এভাবে মেয়েটি মেয়েটি করতে ভালো লাগছে না।নাম দিলাম উরমিলা।

উরমিলা হঠাৎ করে বলে উঠলো,
--"সাহিত্য বিষয়ে কতোটুকু জানেন?মানে সাহিত্য বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করেছেন কী?"
সেই অসুস্থতা মিশে থাকা হাসি দিয়ে বললাম,
--"সাহিত্য বিষয়ে জানতে হলে সেই বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করতে হয় বুঝি?"
--"তা কতোটুকু জানেন?"
--"চালিয়ে দেওয়ার মতো।"
--"হু।"

আসুস্থতা হাজার গুনে বেড়ে গেলো হয়তো।মাথার ভেতর সুই ফোটার মতো যন্ত্রনা হচ্ছে।মুখ দিয়ে নিজের অজান্তেই তীব্র চিৎকার বাহির হয়ে আসলো।পারছি না আর,একেবারেই পারছি না।উরমিলার কোলে ঢলে পড়ে গেলাম।কিছুক্ষণ পর উরমিলা বলল,
--"চিন্তা করবেন না।হাসপাতালে ফোন করে দিয়েছি।গাড়ি আসবে কিছুক্ষনের মাঝে।"
কি অদ্ভুত মেয়ে।গলায় কোন কম্পন অনুভব করতে পারছি না।সে যেন একটি পাথরের ন্যায় কঠিন।
আমি বললাম,
--"আপনার নাম কি?আপনার বাড়ি কোথায়?বেচে থাকলে অসম্পূর্ণ কথাগুলো সম্পূর্ণ করতে চাই।"
--"প্রকৃতিই হয়তো চায়না কথাগুলো সমাপ্ত হোক।আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারি না।"
--"তাহলে আমাদের আর দেখা হবে না?"
--"হয়তো না আবার হয়তো হ্যা।"
ভেতর থেকে ডুকরে কান্না আসতে চাইছে।কিন্তু কেন?উরমিলার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হতে পারেনা।কেননা ভালোবাসা প্রচন্ড জটিল একটি বিষয়।হয়তো উরমিলার মনের ভাব জানার প্রচন্ড আগ্রহ তৈরি হয়েছে তাই এমন কান্না আসছে।
এম্বুলেন্স এসে গিয়েছে।উরমিলা আমার কপালে হাত রেখে বলল,
--"সুস্থ হয়ে যাবেন।হয়তো দেখা হবে কোনদিন। "

★মাঝে পাচটি বছর কেটে গিয়েছে।অনেক সময় বলা চলে।সুস্থ হওয়ার পর অনেকবার গিয়েছি সেই পুকুর পারে কিন্তু উরমিলার দেখা পায়নি।অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সম্ভব হয়নি।এই পাচটি বছরে জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারি মাসে অনেকবার করে গিয়েছি সেই জায়গায়।মনে অনেক আশা ছিলো হয়তো দেখা হবে,হয়তো সেই তীব্র শীতে সেই ব্রেঞ্চটিতে উরমিলাকে দেখতে পাবো।হয়তো।যদিও ব্রেঞ্চটি আর আগের মতো নেই।তার শরীরে যেন ঘুন বাসা বেধেছে।অনেকটাই যেন মলিন বদনে বসে থাকে সে।   হয়তো উরমিলার কথাই ঠিক,
--"প্রকৃতির বিরুদ্ধে কিছুই করার ক্ষমতা নেই আমাদের।"

★আজ আবার বেড়িয়েছি উরমিলার খোজে।হয়তো দেখা হয়ে যাবে।এই টহল বন্ধ করা যাবেনা যে।যদি এমন হয় যে আমি উরমিলার খোজে যাইনি আর সেদিনই সে এসেছিলো।নাহ এটা করা যাবে না।
আজ অবশ্য আর পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে আসিনা কিন্তু চাদরটা তার জায়গায় ঠিকই থাকে।হেটে যাচ্ছি তো হেটেই যাচ্ছি।হাতে আধ পোড়া সিগারেটটি সে নিজেকে পুড়িয়ে যাচ্ছে অনবরত।
পুকুরটির সামনে কে যেন দাড়িয়ে রয়েছে।হ্যা তাই তো মনে হচ্ছে।এতো দূর থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না ঠিক।পুকুর ধারে যেতেই ঘুরে তাকালো সে।চোখে একটি হালকা ফ্রেম এর চশমা,গায়ে নিরেট কালো চাদর।হ্যা উরমিলাই তো।আমি তাকিয়ে রয়েছি অপলকভাবে ঠিক সেদিনের মতো।উরমিলার মাথায় বাচ্চাদের মতো ঝুটিটি আর পরিলক্ষিত হচ্ছে না।তাতে কি এক অন্যরকম মহিমা তাকে যেন ঘিরে রেখেছে।উরমিলা বলল,
-"সিগারেট খাচ্ছেন যে।শরীর খারাপ হয়ে যাবে তো।"
আগের ভাবেই যেন কথাগুলো বলল সে।আমি বললাম,
-"প্রকৃতির ইচ্ছাই তাহলে আবার দেখা হওয়া।
উরমিলার মুখে  স্নিগ্ধ হাসি লেগে রয়েছে যা সেই দিন ছিলো না।     

Written By:#SraNton_Hossain; #Nayma_Islam

বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯

নিশাচর

একটি বৃদ্ধ বটগাছের নিচে বসে রয়েছি।এখন লোকে যদি আমাকে পাগল ভাবে তাহলেও তাদের কোন দোষ দেওয়া চলে না।কেইবা এই পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের বটগাছের নিচে পা ছড়িয়ে বসে থাকবে শুধু পাগল ছাড়া।
আচ্ছা এই বটগাছের বয়স কতো হবে?হয়তো একশো বছর অথবা তার চেয়েও বেশি।বলতেই হবে অনেক অভিজ্ঞতা এই বৃদ্ধ গাছটির যা তার ঝুলন্ত শেকড় গুলো দেখেই বোঝা যায়।
সূর্য মামা পশ্চিম দিগন্তে অস্ত যাবে যাবে করছে।সে যেন খুব ক্লান্ত।তারও তো বিশ্রাম দরকার।হালকা এক টুকরো আলো চারপাশে অবশিষ্ট রয়েছে।সূর্য মামা ঘুমাবে আর চাঁদ মামা ঘুম থেকে জেগে উঠবে।
এমন সময় একটি লোক আমার পাশে এসে বসলো।পড়নে তার একটি লুঙ্গি আর একটি গামছা।লোকটি হয় কৃষক নাহয় দিন মজুর।লোকটি তার ঘর্মাক্ত শরীর গামছা দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,
-“বুঝলেননি ভাইসাব আইজকা খুব গরম পরছিল।“
আমি শুধু বললাম,
-“হুম।“
-“ভাইসাব আপনে এই জায়গায় এমনে বইসা রইছেন যে?মাইনসে তো পাগল কইবো।“
-“কি করবো বলেন?আমি তো গন্তব্যহীন পথিক।পুরো পৃথিবীটাই যে আমার ঘর।“
লোকটি কিছুক্ষণ ভেবে বলল “হ বুঝছি”।এখন লোকটি কি বুঝেছে সেটা সেই জানে।অবশ্য গ্রামের মানুষকে অতো জটিল প্যাচ নিয়ে ভাবতে হয় না।তারা যেটুকু জানে সেটুকু দিয়ে নিজের মতো করে বুঝে নেয়।সেটি হোক ঠিক বা ভুল তাতে তাদের জীবন ধারায় কোন পরিবর্তন আসেনা যে।
দিনের শেষ আলো টুকুও নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে।মন চাইছে এখানেই মাটির বুকে শান্তিতে শুয়ে পড়ি।খুব ক্লান্তি অনুভব করছি।কেন এতো ক্লান্ত আমি?জানিনা,আর জানার প্রয়োজনও নেই।এমন সময় লোকটিকে দেখলাম একটি গামছার গেরো খুলছে।ভেতর থেকে একটি ঢাউস আকারের প্লাস্টিকের বাটি আর তার ভেতর দলা পাকানো লাল লাল ভাত আর কয়েক টুকরো আলু।বুঝলাম এগুলোই লোকটির রাতের খাবার।
লোকটি বাটির ঢাকনায় করে ভাত দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিলো।আর বলল,
-“নেন ভাই খান।যা আছে দুইজনে মিলা খাই।“
ভাতের সাথে এক টুকরো আলুও পেলাম।খাবার হিসেবে খুবই নিম্নমানের খাবার কিন্তু ভালোবাসা আর অনুভূতির দিক থেকে পৃথিবীর সেরা খাবার এটি।ভাত খেয়ে একটি ছোট্ট ঢেকুর তুলে বললাম,
-“ভালোবাসার আহার সকলের যেন মিলে,ভিক্ষার আহার নয়।“
লোকটি কি বুঝল কে জানে।মুখে খাবার নিয়ে আমার কথায় ঘন ঘন মাথা নেড়ে গেলো শুধু।
দূরে কয়েকটি ক্ষুদ্র কুটির দেখা যাচ্ছে।কুটিরের ভেতর কুপী বাতির আলো এবং তার সামনে বাচ্চারা বই খাতা নিয়ে পড়তে বসেছে।
লোকটির খাওয়া মাত্র শেষ হল।লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম,
-“ভাই সাহেবের নাম কি?”
-“ইদ্রিস মিয়া”
-“বাড়ি না গিয়ে এখানে এসে খাবার খাচ্ছেন যে,বাড়ি যাবেন না?”
-“আপ্নের মতন পৃথিবীটা আমার ঘর।সারাদিন বাবুর ক্ষেতে কাম করি তারপর জেইহানে রাইত সেইহানেই কাইত।“
ইদ্রিস মিয়ার কথাটি বেশ লাগলো।কিছুক্ষণ কথাটি আওড়াতে থাকলাম,
-“যেখানে রাত সেখানেই কাত।“
ইদ্রিস মিয়াকে আবার প্রশ্ন করতে যাবো কিন্তু দেখি মহাশয় চার হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে।পাশে খাবারের বাটিটা পড়ে রয়েছে অযত্নে।
ইদ্রিস মিয়া আজকে আমার খাবারের যোগান দাতা সেদিক থেকে লোকটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।কিন্তু তাকে বিনময়ে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই।আমার এক মাত্র সম্পদ বলতে একটি আধ ছেড়া ডাইরি।ডাইরিটি ইদ্রিস মিয়ার মাথার পাশে রেখে দিয়ে হাটতে শুরু করলাম অজানার উদ্দেশ্যে।হয়তো ইদ্রিস মিয়ার কাছে আমার ডাইরিটি একটি জঞ্জাল ছাড়া কিছুই নয়।হয়তো ডাইরিটি ফেলে দেবে পাশের ডোবায়।তবুও মনে করি তাকে কিছু দেওয়া উচিৎ তাই দিয়েছি।
আচ্ছা সকল ঋণ কি পরিশোধ করা যায়?হয়তো নয়।
ইদ্রিস মিয়া সারা বছর এই মাটির সংস্পর্শে থাকে।সেদিক থেকে বলতে গেলে তার সাথে মাটির এক নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।আমার সাথেও কি মাটির এমন নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে?আমিও তো উনারই মতো।
একটি ক্ষুদ্র কুটিরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু কথা শুনতে পেলাম,
-“চার এক্কে চার।চার দুগুণে আট।“
-“কিরে আর কতক্ষণ ধইরা একই নামতা পড়বি?”
-“এইতো হইয়া গেছে মা।এখনই বাংলা কবিতা পড়ুম।“
-“হ হ পড়।তুই বড় হইয়া ডাক্তার হইয়া না মাইনসের সেবা করবি?ভালো কইরা পড়।“
-“হ মা পড়তাছি।“
সত্যি পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের একটি ইচ্ছা থাকে।এখানে মায়ের ইচ্ছা তার ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে,গরিব মানুষের চিকিৎসা করবে।ছেলের ইচ্ছা বড় হয়ে ডাক্তার হয়ে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করবে।আর আমি নিশাচর মানুষ যে কিনা দিনে বিশ্রাম করে আর রাতে ঘুরতে বের হয়।
আমার আব্বু আম্মু আমার কাছ থেকে যেন কি আশা করেছিলো ঠিক মনে করতে পারছি না।অনেকগুলো বছর মাঝে পার হয়ে গিয়েছে কিনা।না থাক সেসব না ভাবাই ভালো।
বেশ তো আছি যেমনটি আছি।
SraNton Hossain

বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৯

প্রজন্ম





আমি মৃত্যুবরণ করতে চাইনা।পৃথিবীর সাথে সম্পর্কের বাধন হতে মুক্তি পেতে চাইনা,চাইনা পরিবারের কেউ আমাকে ছেড়ে চলে যাক না ফেরার দেশে।কিন্তু তা যে কখনো সম্ভব নয়।
আমাদের দাদুভাই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন মেঘের ওপারে।আব্বু তাঁর ছোটবেলার গল্প করেন আমাদের সঙ্গে।আব্বু নাকি প্রতিদিন দাদুভাই এর হাত ধরে ঘুরতে যেত।এখন আমাদের মাঝে সেই দাদুভাই আর নেই।
মনে পরে যখন চাচাতো ভাইয়ার বিয়েতে দাদুভাই অনেক শখ করে তাঁর দুধের মতো সাদা দাড়িতে মেহেদী দিয়ে লাল করে ফেলেছিল,মনে পরে যখন ঈদের লুঙ্গী পছন্দ না হলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতো,মনে পরে যখন দাদুভাই নামাজ শেষে আমাদের সব ভাই বোনেদের জন্য জিলাপী কিনে আনত।
দাদুভাই এর ব্যাপারে আব্বুর সাথে কথা বলতে বলতে আমার চোখ চক চক করে ওঠে।
আজ থেকে চল্লিশ বছর পর হয়তো আব্বুও আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।তখন কি আমিও খুব কান্না করবো?এই কথা ভাবতেই গলার কাছে কি যেন একটি আটকে আসার অনুভূতি হচ্ছে।
তখন হয়তো আমিও আব্বুর মতো ছেলের ভূমিকা পালন করবো।আমার ছেলে-মেয়েদের কাছে আব্বুর সম্পর্কে অনেক গল্প করবো।হয়তো তখন আমার চোখের কোনে এক ফোটা পানি জমে উঠবে।
কিন্তু এখানে একটি ভাবনার বিষয় রয়েছে।চল্লিশ বছর পর যখন আব্বু মারা যাবে তখন আমিও মধ্য বয়স্ক হয়ে যাবো বলা চলে।তখন দাদুভাই এর খুব হালকা স্মৃতিই অবশিষ্ট থাকবে আমার কাছে।সেই অবশিষ্ট স্মৃতি টুকু আমার ছেলে-মেয়েদের মনে প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে হয়না।
যখন আমি বা আমাদের প্রজন্ম পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে তখন দাদুভাইকে মনে রাখার মতো কেউ থাকবে না।হয়তো তখন আমার ছেলে মেয়েরা বলবে,
-“আমার আব্বু মাঝে মাঝে তাঁর দাদু সম্পর্কে গল্প করতো।“
এতটুকুই।কিন্তু তাকে স্মৃতির পাতায় মনে রাখার মতো কেউ থাকবে না।আমার দাদু বলে যে কেউ ছিল সেটি যেন এই পৃথিবীই ভুলে যাবে।এমন ভাবে যতই প্রজন্ম পরিবর্তন হতে থাকবে ততোই আমরাও পৃথিবী থেকে মুছে যাবো।যেমনটি হয় যখন আমরা রাবার দিয়ে অপ্রয়োজনীয় লিখা গুলি মুছে ফেলি।
এসব চিন্তা করলে মনে হয় এই বেচে থাকার কোন মানে নেই।একদিন তো মারা যেতেই হবে,একদিন তো পৃথিবীর মানুষরা ভুলেই যাবে আমার কথা।
যদি ভবিষ্যতে আমার অনেক টাকা হয় তারপরও কি আমার কোন লাভ হবে?
হবে না।
কোন প্রতিপত্তিও আমাকে মানুষের মনে বাচিয়ে রাখতে পারবে না।
কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যারা তাদের সৃষ্টিকর্মের দ্বারা চিরো স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।তাদের প্রতিভা দিয়ে পৃথিবীর অনেক মানুষের মনে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গিয়েছে।কিন্তু সেরকম কোন গুণ তো আমার কাছে নেই।
সেরকম দুজনের নাম এখন মনে পড়ছে।
একজন হচ্ছে “রেবেকা শফি”।জন্ম ১৯৭৮ সালে।১৯৯৩-১৯৯৪ সালে তাঁর বয়স যখন ১৫ তখন বিদ্যালয়ের একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সে অংশগ্রহণ করে।দীর্ঘ ২৬ বছর পর কোন এক ব্যক্তি সেই ভিডিওটি অনলাইনে প্রকাশ করে দেয় যাতে করে সকলে তাঁর কথা শুনতে পারে।তাঁর বাচন ভঙ্গি এবং বাংলা উচ্চারণ শুনে আমি স্তব্ধ।এক কথায় আমি তাঁর কথা বলার প্রেমে পড়ে যাই।এতো সুন্দর করে কেউ বাংলা উচ্চারণ করতে পারে সেটি আমার জানা ছিলনা।
এই “রেবেকা” মানুষের মনে ঠিকই দাগ কাটতে পেড়েছে।
আর একজন হচ্ছে “তাহমিদা জান্নাত”।২০১৪ সালে ফেসবুকে একটি লিখা দেওয়া হয়।২০১৩ সালের ৭ মার্চ থেকে ২০১৪ সালের ২৫ মে হচ্ছে সেই লিখার আয়ুষ্কাল।এই সময়ে “তাহমিদা” এর ক্যান্সারের বিষাদময় জীবন কেমন কেটেছে তা লিখা হয়েছে।২০১৪ সালের ২৭ মার্চ লিউকোমিয়ার কাছে হার মানতে হয় তাহমিদার।কিন্তু সে কিন্তু মানুষের মন থেকে মারা যায়নি।তাঁর লিখার ভাষা দেখে কতো মানুষ যে কান্না করেছে তাঁর কোন ঠিক নেই।তাঁর অনুভূতিগুলো অনেক মানুষের মনে দাগ কেটে গিয়েছে।
হয়তো মৃত্যুর মুখোমুখি না হলে এমন ভাষায় লিখা সম্ভব নয়।
আমি আমার শেষ জীবনে কোন একটি বরফের দেশে থাকতে চাই যেখানে সারা বছর ধরে বরফ পড়বে।রাতে যখন কনকনে ঠাণ্ডা পড়বে তখন খোলা আকাশের নিচে চাদর মুরি দিয়ে পরিষ্কার তারা ভরা আকাশ দেখবো।অনুভব করবো তারাদের স্পর্শ,অনুভব করবো চাদের আলো।কল্পনা করতে থাকবো যখন আমি তারাদের দেশে চলে যাবো তখনটি কেমন হবে।
আমি অধিকার রাখিনা পৃথিবীর মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার।আমি এতো তুচ্ছ যার জায়গা পৃথিবীতে নয়।
আচ্ছা বরফের দেশে কি আমার প্রিয় ফুলগুলোর সুবাশ পাওয়া যাবে?হয়তো নয়।তবুও আমি সেই মৃত্যু শীতল করা অনুভূতির মধ্যে জীবন ত্যাগ করতে চাই যেখানে তারারা আমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে এবং খিল খিল করে হাসবে।
@SraNton Hossain

বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

অতীত দেখা

টাইম মেশিন বা এরকম কিছু যদি সত্যি আবিষ্কার হতো যা দিয়ে আমাদের অতীত দেখা যেতো কতো ভালো হতো তাই না।আমাদের ছোট বেলার কতো মজার মজার সময়গুলো হাড়িয়ে ফেলেছি চিরদিনের জন্য।যা হয়তো ফিরে পাওয়া সম্ভব না কিন্তু অনুভব করাও কি অসম্ভব।বিজ্ঞানীরা কি আবিষ্কার করতে পারেনা এমন কোন যন্ত্র? 

*সাল ২০৫০। পৃথিবীর মধ্যে যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী তইমুর।সে এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছে যার মাধ্যমে মানুষ তার পুরানো দিনে ঘুরে আসতে পারবে।ঘুরে আসতে পারবে তা ঠিক নয়,সে তার পুরানো দিন গুলো দেখতে পারবে। 
বিজ্ঞান একাডেমীর বিশেষ কিছু বিজ্ঞানী তার কথা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনা।এতো বছর ধরে যে আবিষ্কার এতো বড় বড় বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পারলো না তা নাকি বাংলাদেশের এই খুদে এক বিজ্ঞানী আবিষ্কার করে ফেলেছে। 
তইমুর পৃথিবীর নামি দামি সকল বিজ্ঞানীকে ডাকে তার এই আবিষ্কার দেখানোর জন্য।সে যে শুধু মাত্র বিজ্ঞান মহলে এসেছে শুধুমাত্র এই আবিষ্কারটি করার জন্য।সে তার অতীত দেখতে চায় শুধু।তারপর সে এই আবিষ্কার বিজ্ঞান একাডেমীর হাতে তুলে দিবে।সে তার পুরানো দিন গুলো দেখতে চায় যেখানে সে এবং তার বন্ধুরা মাঠে খেলা করছে।অনেকে তাকে এর জন্যে পাগল বলেও আখ্যা দিয়েছেন কিন্তু সে তার জায়গায় অনর ছিলো। 
সভায় পৃথিবীর বেশ কয়েকটি প্রতিভাবান বিজ্ঞানী এসেছেন।তইমুর সকলের সামনে তার সেই যন্ত্র প্রকাশ করলো।যেখানে মানুষের মাথায় পড়ার মতো একটি হেলমেট এবং নানারকম বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি।পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাবান বিজ্ঞানী টমাস বলে উঠলো 
-আমি দেখতে চাই এটি কাজ করে কিনা।আমি প্রথমে পড়বো এই হেলমেট। 
তইমুর খুশী হয়ে যায়।সে টমাসকে হেলমেটটি পড়িয়ে দেয় এবং নানারকম যন্ত্রপাতি ঘাটতে থাকে।এই হেলমেটের সাথে একটি মনিটর যুক্ত করা রয়েছে।টমাস যা দেখবে বাকি সবাই তাই দেখতে পাবে।কিছুক্ষণ পর মনিটরে একটি উজ্জ্বল আলো ফুটে উঠে।ধীরে ধীরে সেটা পরিষ্কার হতে থাকে।সেখানে দেখা যায় একটি ছেলে একটি ফাটা বল নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।ছেলেটির চুলগুলো একেবারে বোকাদের মতো আঁচড়ানো।সবাই ছেলেটিকে চিনে ফেলল।এটি বিজ্ঞানী টমাস।এলাকার ছেলে তার ফুটবল তা ফাটিয়ে দিয়েছে আর সে সেই ফাটা বল নিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করছে। 
সভার সকলে বিকট শব্দে হেসে উঠলো।তইমুর সময়টা কয়েক বছর এগিয়ে দিলো যেখানে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানী টমাস একটি বই পড়তে পড়তে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেটে যাচ্ছে।সেই বোকা ছেলেটি আজকে এতো বড় বিজ্ঞানী। 
বিজ্ঞানী টমাস তার হেলমেট খুলে ফেলল এবং বলল 
-সত্যি তুমি অসাধারণ আবিষ্কার করেছো তইমুর। 
তইমুরের তো গর্বে বুক ফুলে উঠছে।তইমুরকে বিজ্ঞানী টমাস কানে কানে বলল 
-এই ফুটেজের কোন রেকর্ড থাকলে ডিলিট করে দাও। 
তইমুর বলল 
-স্যার আপনাকে স্ক্যান করার সময়ই রেকর্ড বন্ধ করে দিয়েছি।আপনার মতো এতো বড় বিজ্ঞানীর অতীত রেকর্ড করার মতো সাহস আমার নেই। 
-ধন্যবাদ তইমুর। 

তইমুরের আবিষ্কারের পর পৃথিবীর অনেক বিজ্ঞানী তার সাথে দেখা করতে এসেছিলো।অনেকে তইমুরের আবিষ্কার কিনে নিতে চেয়েছে কিন্তু সে এটি বিক্রি করেনি।সে এটি বিজ্ঞান একাডেমীতে দিবে বলে ঠিক করেছে। 
এখন সন্ধ্যা সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।সে তার অতীত দেখার যন্ত্রটি নিয়ে পড়লেন।আজ সে তার পুরানো দিনে কাটানো সময়গুলো দেখবে।তইমুরের সহকারি জেসিকা তাকে সাহায্য করছে যন্ত্রগুলো ঠিক জায়গায় লাগাতে।যখন যন্ত্রগুলো চালু করা হলো তখন তইমুরের সামনে অন্ধকার হয়ে এলো।তারপর ধীরে ধীরে সব কিছু পরিষ্কার হতে থাকে।সে দেখতে পায় 
একটি ছেলে একটি ছোট ইটের টুকরো লাথি দিতে দিতে স্কুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।ইয়া বড় একটি ঢাউস সাইজের ব্যাগ তার পিঠে।ছেলেটি ক্লাসের সামনে গিয়ে দাড়ায়।দেখে স্যার এসে পড়েছে। 
স্যার তা খুব মজার।স্যার এর নাম ভানু ।কিন্তু সবাই মজা করে বলে বানো স্যার।স্যার বললেন 
-কিরে আজকেও দেরি করে আইলি দেখি। 
-হুম।দুঃখিত স্যার 
-যা সীটে যাইয়া বয় 
ছেলেটি সীটে গিয়ে বসে। 
ভানু স্যার কখনো কোন ছাত্রকে মারেন না।সকলের সাথে মজার সম্পর্ক তার।ছাত্রদের সাথে মজার মজার কথা বলেন। 
স্যার বিজ্ঞান ক্লাস করাচ্ছেন।এমন সময় স্যার পড়ানো বাদ দিয়ে বললেন  
-একটা কথা বলতে পারবি নি?পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তির জায়গা কোনডা।দাড়া ইসলামিক দৃষ্টিতে বলা যাইব না কিন্তু 
-ছেলেটি বলে উঠে পায়খানা 
সবাই হো হো করে হাঁসতে শুরু করে।স্যার সকলের হাসি থামার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।হাসি থামলে স্যার বলেন 
-এক্কেবারে ঠিক উত্তর দিছস।এবার বল ক্যারা কেম্নে পায়খানা করছ 
সবাই তো লজ্জায় শেষ।এই ধরনের স্যার হলো ভানু স্যার। 

তইমুর তার সহকারীকে বলে সময় পরিবর্তন করতে।সময় পরিবর্তন করে এক সপ্তাহ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।তখন তইমুর দেখে 
ছেলেটি ক্লাস করছে খুব মনোযোগ দিয়ে।হাবিব স্যার এর ক্লাস।এমন সময় একটি বই এর প্রকাশনি থেকে তাদের বই এর বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য বাচ্চাদের জন্য ছোট ছোট বই নিয়ে এসেছে।সকলের মাঝে স্যার বই বিতরন করে দিচ্ছে।বই এর নানা রকম রঙ।একটি লাল একটি সবুজ একটি হলুদ।ছেলেটি চাইছিলো যাতে করে তাকে লাল বইটি দেওয়া হয় কিন্তু দিলো সবুজ রঙের বই।সে মন খারাপ করে তার পাশের বন্ধুদের বলল 
-দেখলি আমাকে লাল রঙের বইটি দিলো না।স্যার কিরকম খারাপ। 
ক্লাসের শেষে ছেলেটির দুই বন্ধু মজা করার জন্য স্যার কে এই কথাটি বলে দেয়।স্যার বিষয়টি খুবই সেনসিটিভলি নেয়।তিনি এসে ছেলেটিকে অনেক কথা শোনায়।ছেলেটি খুবই কান্না করতে থাকে।কারন সে ভাবতে পারেনি এমন হবে।ছেলেটির বন্ধু দুজনও একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।তারা ভাবতে পারেনি বিষয়টি এমন হবে।স্যার ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে 
-এটি কি তোমার রাগের কান্না নাকি অনুতাপের কান্না। 
ছেলেটি হেচকি তুলতে তুলতে বলে 
-আমায় মাপ করে দিন স্যার।আমার ভুল হয়ে গেছে। 
হাবিব স্যার কোন কথা না বলে চলে যায়।সকলে ভয় পায় এই ভেবে যে এই কথাটি প্রধান শিক্ষিকার কানে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।তিনি খুবই কোমল মনের মানুষ কিন্তু কোন অন্যায় দেখতে পারেন না।সবাই শুধু প্রার্থনা করছিলো যেন প্রধান শিক্ষিকা না আসে।কিছুক্ষণ পড়েই ছুটির ঘণ্টা দিয়ে দেয়।সবাই হাফ ছেড়ে বাচে। 
কিন্তু কোন লাভ হয় না।সকলে দেখে প্রধান শিক্ষিকা দরজার সামনে দাড়িয়ে।তিনি অনেক কথা শোনায় ছেলেটিকে।ছেলেটি একটি কথাও বলে না।তার পর ছেলেটিকে বেশ কয়েক ঘা লাগিয়ে দেয়।কারন তা নাহলে হয়তো হাবিব স্যার অন্য কিছু মনে করবেন।ছেলেটি কোন শব্দ করে না।সব মার হজম করে নেয়।আর সে তো আসলেই একটি অন্যায় করে ফেলেছে।আর প্রধান শিক্ষিকা যে তার অনেক শ্রদ্ধার একজন মানুষ। 
মুখ বুজে বাড়িতে চলে যায়।বাড়ি গিয়েই মায়ের কোলে মুখ গুজে সে কান্না করতে শুরু করে।সমস্ত কথা সে তার মায়ের কাছে বলে।মায়ের মুখটাও অন্ধকার হয়ে যায়।ছেলে এভাবে কান্না করলে সহ্য করতে পারে না যে সে কিন্তু ছেলে তো তার অন্যায় করেছে অনেক।সে ছেলেকে অনেক ভাবে বোঝায় যেন কান্না না করে। 
পড়ের দিন ছেলেটি স্কুলে যায় মাথা নতো করে।সে যে অন্যায় করেছে তারপর মাথা উচু কীভাবে করবে।প্রথম ক্লাসেই প্রধান শিক্ষিকা আসেন।তিনি বেশ কিছুক্ষণ নিজেই ক্লাস নেন।যাওয়ার আগে প্রধান শিক্ষিকা ছেলেটিকে ডেকে আনেন কাছে।ছেলেটিও খুব ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়।যাওয়ার পর প্রধান শিক্ষিকা ছেলেটিকে ধরে অঝোর ধারায় কান্না করতে থাকে।তিনি যেভাবে মেরেছেন সেটা হয়তো তাকে খুব যন্ত্রণা দিয়েছে। 
প্রধান শিক্ষিকার কান্না দেখে ছেলেটিও কান্না করে দেয়।তার বাধ যেন আর মানেনা।পুরো ক্লাস এই দৃশ্য দেখে।সবার চোখেই হয়তো পানি জমে উঠেছে। 
তখন তইমুর বলে সময় পরিবর্তন করো। 
কয়েক মাস এগিয়ে নেয়ার পর সে দেখতে পায় একটি মেয়ের সাথে ছেলেটির খুব ঝগড়া হচ্ছে।মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দর।পরীর মতো দেখতে তার সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।এক পর্যায়ে ছেলেটি মেয়েটির হাত ধরে প্রধান শিক্ষিকার কাছে বিচার দিতে নিয়ে গেলো।প্রধান শিক্ষিকা কিছুক্ষণ মেয়েটিকে বকাবকি করলো। 
মেয়েটির একেবারে কাদো কাদো অবস্থা।মেয়েটির অবস্থা দেখে ছেলেটির খুব খারাপ লাগে।সেও তখন কান্না করতে থাকে। 
এই ব্যাপারটি চিরো স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো একটি ঘটনা। 
তখন তইমুর বলে বন্ধ করো।সহকারী বন্ধ করে দেয়।তার মাথা থেকে হেলমেট খোলার পর সহকারী দেখে যে পুরো গাল পানি দিয়ে ভেসে যাচ্ছে।এতক্ষন এইসব দেখে খুব কান্না করেছে তইমুর। 
তইমুর নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলে  
-যন্ত্রটি বিজ্ঞান একাডেমীতে পাঠানোর বন্দোবস্ত করো।আর আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবো। 
তিনি তার অতীত দেখতে চেয়েছিলেন বলে এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছে ।তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন এখন এটি পুরো পৃথিবীর কাজে আসুক।নাহয় কিছুদিন পর পর গিয়ে তইমুর তার অতীত দেখে আসবে।কেউ আপত্তি করার কথা নয়।কারন তিনি এটির আবিষ্কারক। 
সকলের কাছে তিনি এখন অনেক সম্মানের মানুষ হয়ে গিয়েছেন। 


#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...