বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৯

প্রজন্ম





আমি মৃত্যুবরণ করতে চাইনা।পৃথিবীর সাথে সম্পর্কের বাধন হতে মুক্তি পেতে চাইনা,চাইনা পরিবারের কেউ আমাকে ছেড়ে চলে যাক না ফেরার দেশে।কিন্তু তা যে কখনো সম্ভব নয়।
আমাদের দাদুভাই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন মেঘের ওপারে।আব্বু তাঁর ছোটবেলার গল্প করেন আমাদের সঙ্গে।আব্বু নাকি প্রতিদিন দাদুভাই এর হাত ধরে ঘুরতে যেত।এখন আমাদের মাঝে সেই দাদুভাই আর নেই।
মনে পরে যখন চাচাতো ভাইয়ার বিয়েতে দাদুভাই অনেক শখ করে তাঁর দুধের মতো সাদা দাড়িতে মেহেদী দিয়ে লাল করে ফেলেছিল,মনে পরে যখন ঈদের লুঙ্গী পছন্দ না হলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতো,মনে পরে যখন দাদুভাই নামাজ শেষে আমাদের সব ভাই বোনেদের জন্য জিলাপী কিনে আনত।
দাদুভাই এর ব্যাপারে আব্বুর সাথে কথা বলতে বলতে আমার চোখ চক চক করে ওঠে।
আজ থেকে চল্লিশ বছর পর হয়তো আব্বুও আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।তখন কি আমিও খুব কান্না করবো?এই কথা ভাবতেই গলার কাছে কি যেন একটি আটকে আসার অনুভূতি হচ্ছে।
তখন হয়তো আমিও আব্বুর মতো ছেলের ভূমিকা পালন করবো।আমার ছেলে-মেয়েদের কাছে আব্বুর সম্পর্কে অনেক গল্প করবো।হয়তো তখন আমার চোখের কোনে এক ফোটা পানি জমে উঠবে।
কিন্তু এখানে একটি ভাবনার বিষয় রয়েছে।চল্লিশ বছর পর যখন আব্বু মারা যাবে তখন আমিও মধ্য বয়স্ক হয়ে যাবো বলা চলে।তখন দাদুভাই এর খুব হালকা স্মৃতিই অবশিষ্ট থাকবে আমার কাছে।সেই অবশিষ্ট স্মৃতি টুকু আমার ছেলে-মেয়েদের মনে প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে হয়না।
যখন আমি বা আমাদের প্রজন্ম পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে তখন দাদুভাইকে মনে রাখার মতো কেউ থাকবে না।হয়তো তখন আমার ছেলে মেয়েরা বলবে,
-“আমার আব্বু মাঝে মাঝে তাঁর দাদু সম্পর্কে গল্প করতো।“
এতটুকুই।কিন্তু তাকে স্মৃতির পাতায় মনে রাখার মতো কেউ থাকবে না।আমার দাদু বলে যে কেউ ছিল সেটি যেন এই পৃথিবীই ভুলে যাবে।এমন ভাবে যতই প্রজন্ম পরিবর্তন হতে থাকবে ততোই আমরাও পৃথিবী থেকে মুছে যাবো।যেমনটি হয় যখন আমরা রাবার দিয়ে অপ্রয়োজনীয় লিখা গুলি মুছে ফেলি।
এসব চিন্তা করলে মনে হয় এই বেচে থাকার কোন মানে নেই।একদিন তো মারা যেতেই হবে,একদিন তো পৃথিবীর মানুষরা ভুলেই যাবে আমার কথা।
যদি ভবিষ্যতে আমার অনেক টাকা হয় তারপরও কি আমার কোন লাভ হবে?
হবে না।
কোন প্রতিপত্তিও আমাকে মানুষের মনে বাচিয়ে রাখতে পারবে না।
কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যারা তাদের সৃষ্টিকর্মের দ্বারা চিরো স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।তাদের প্রতিভা দিয়ে পৃথিবীর অনেক মানুষের মনে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গিয়েছে।কিন্তু সেরকম কোন গুণ তো আমার কাছে নেই।
সেরকম দুজনের নাম এখন মনে পড়ছে।
একজন হচ্ছে “রেবেকা শফি”।জন্ম ১৯৭৮ সালে।১৯৯৩-১৯৯৪ সালে তাঁর বয়স যখন ১৫ তখন বিদ্যালয়ের একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সে অংশগ্রহণ করে।দীর্ঘ ২৬ বছর পর কোন এক ব্যক্তি সেই ভিডিওটি অনলাইনে প্রকাশ করে দেয় যাতে করে সকলে তাঁর কথা শুনতে পারে।তাঁর বাচন ভঙ্গি এবং বাংলা উচ্চারণ শুনে আমি স্তব্ধ।এক কথায় আমি তাঁর কথা বলার প্রেমে পড়ে যাই।এতো সুন্দর করে কেউ বাংলা উচ্চারণ করতে পারে সেটি আমার জানা ছিলনা।
এই “রেবেকা” মানুষের মনে ঠিকই দাগ কাটতে পেড়েছে।
আর একজন হচ্ছে “তাহমিদা জান্নাত”।২০১৪ সালে ফেসবুকে একটি লিখা দেওয়া হয়।২০১৩ সালের ৭ মার্চ থেকে ২০১৪ সালের ২৫ মে হচ্ছে সেই লিখার আয়ুষ্কাল।এই সময়ে “তাহমিদা” এর ক্যান্সারের বিষাদময় জীবন কেমন কেটেছে তা লিখা হয়েছে।২০১৪ সালের ২৭ মার্চ লিউকোমিয়ার কাছে হার মানতে হয় তাহমিদার।কিন্তু সে কিন্তু মানুষের মন থেকে মারা যায়নি।তাঁর লিখার ভাষা দেখে কতো মানুষ যে কান্না করেছে তাঁর কোন ঠিক নেই।তাঁর অনুভূতিগুলো অনেক মানুষের মনে দাগ কেটে গিয়েছে।
হয়তো মৃত্যুর মুখোমুখি না হলে এমন ভাষায় লিখা সম্ভব নয়।
আমি আমার শেষ জীবনে কোন একটি বরফের দেশে থাকতে চাই যেখানে সারা বছর ধরে বরফ পড়বে।রাতে যখন কনকনে ঠাণ্ডা পড়বে তখন খোলা আকাশের নিচে চাদর মুরি দিয়ে পরিষ্কার তারা ভরা আকাশ দেখবো।অনুভব করবো তারাদের স্পর্শ,অনুভব করবো চাদের আলো।কল্পনা করতে থাকবো যখন আমি তারাদের দেশে চলে যাবো তখনটি কেমন হবে।
আমি অধিকার রাখিনা পৃথিবীর মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার।আমি এতো তুচ্ছ যার জায়গা পৃথিবীতে নয়।
আচ্ছা বরফের দেশে কি আমার প্রিয় ফুলগুলোর সুবাশ পাওয়া যাবে?হয়তো নয়।তবুও আমি সেই মৃত্যু শীতল করা অনুভূতির মধ্যে জীবন ত্যাগ করতে চাই যেখানে তারারা আমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে এবং খিল খিল করে হাসবে।
@SraNton Hossain

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...