শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্মগোপন করেছে। হঠাৎ যখন কুয়াশার চাদর কিছুটা সরে যায় তখন মনে হয় যেন গল্পগুলোকে মনে করতে পারবো। কিন্তু হঠাতই কোথা হতে একঝাক কুয়াশা এসে আবারও তার সাদা চাদর দিয়ে সকল কিছুকে গ্রাস করে নেয়।
স্মৃতির দুনিয়ায় ভোরের সূর্যের অপেক্ষা করা একরকম পাগলামো। এখানে কখনো সূর্যের উদয় হয় না। দিন যতো যায় ততোই সে অস্ত যেতে থাকে। সেই সূর্যের এতোটাও শক্তি নেই যাতে করে সে ঘন কুয়াশার চাঁদরকে ভেদ করতে পারবে। সময় যতোই অতিবাহিত হয় ততোই এই দুনিয়ায় কুয়াশার শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবতে থাকে। এক সময় হালকা আধার এবং তার পরে গভীর রাত। সেই গভীর রাতে টিকে থাকার জন্য যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে মানুষ হার মেনে নেয়। কনকনে ঠান্ডার সাথে গভীর অন্ধকারের যে মেলবন্ধন সেখানে মনুষ্য শরীর নিতান্তই অসহায়। স্মৃতিগুলো মনুষ্য শরীর থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে চলে। এক সময় সেই অসহ্য যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়ে যায়ও বটে।
আমি এখন জীবনের সূর্য ডোবার পূর্ব মুহুর্তে অবস্থান করছি। স্মৃতিগুলো এখনও কিছুটা স্পষ্ট কিন্তু বেশি সময় সেটুকুও রবে না। আজ থেকে পঁচিশ কি ত্রিশ বছর আগের ঘটনাগুলো খুব অল্পই মনে করতে পারি। তখন আকাশের ঐ সূর্যটি আমার নিকট রক্তের এক গোলকের মতো অনুভূত হতো। যে সূর্য সৃষ্টির অন্তিম পর্যন্ত মনুষ্য জাতির মধ্যে জীবনের সঞ্চালন করে চলবে।
কোন একদিন দুপুরের সূর্যটি মাথার ওপর উঠে অতিরিক্ত উষ্ণতা দেওয়ায় ব্যস্ত ছিল। সেদিন তার দিকে হাতের তালু উল্টিয়ে বলেছিলাম,
-"বাছা অনেক তো জ্বললে।এবার একটু রহম করো।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ হতে একটি মেয়েকে আসতে দেখছিলাম। কিছুটা অস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি যেন। পরিপূর্ণ রূপে তাকে কল্পনা করতে পারছি না। তার পরনে তাঁতের শাড়ি ছিল কি? হ্যা তাই হবে। কাঁধে একটি শান্তি নিকেতনের ব্যাগের মতো দেখতে একটি পাটের ব্যাগ। এটা বোঝা একেবারে কষ্টসাধ্য ছিল না যে মেয়েটি একটি খাঁটি বাঙাল বংশের মেয়ে। আমাদের মতো সুট টাই পড়া 'ডিফেকটিভ ব্যাঙ্গালী' নয়। মেয়েটির চেহারা মনে করতে পারছি না। উহু,কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।

আমার পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া নাতনি আমাকে 'ওয়াটার ট্রিটমেন্ট' শিখিয়েছে। তার পদ্ধতিটি এমন যে ,
"কখনো কোন কিছু মনে করতে না পারলে বা মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলে লম্বা একটি শ্বাস নিয়ে মাথা পানির মধ্যে ডুবিয়ে দাও। তিরিশ সেকেন্ড পর মাথা উঠিয়ে আবার লম্বা এক শ্বাস নিয়ে আবার ডুবিয়ে দাও। এভাবে বেশ কয়েকবার করতে থাকো।"

এই ছোট্ট মেয়েটি এই বুদ্ধি কোথা হতে পেলো এটাই একটি ভাবনার বিষয়। আমি বেশ কয়েকবার উক্ত পদ্ধতি চেষ্টা করে দেখেছি। কাজ যে একেবারেই হয় না তেমনটি বলা ভুল হবে। আমি অন্তত গল্প লেখার সময় এর সুফল পেয়েছি।

কোথায় যেন ছিলাম? ওহ হ্যা মনে পড়েছে। সেই রোদ্রোতপ্ত দুপুরে আমার দিকে মেয়েটি হেটে আসছিল। অতি সন্নিকটে এসে বলেছিল,
-"মাহি ভাই,বাংলা স্যার যে টিকাগুলো দিয়েছিল সেগুলো কি আছে?"
মেয়েটির প্রশ্নের উত্তরে আমি কিছু একটি বলেছিলাম হয়তো। কিন্তু তা আর মনে পড়ছে না।

আমি তো প্রায় মৃত্যুর দোয়ারে পৌঁছেই গিয়েছি। জীবনের এই সময়টাতে সূর্য অনেক জলদি ডুবতে থাকে। এই যেমন দেখলাম যে সূর্য পশ্চিম আকাশে গাছগুলোর ওপর চুপ করে বসে রয়েছে। কিন্তু একটু পরেই সে উধাও হয়ে যাবে। একেবারে "ভ্যানিশ"।
বর্তমানে অনেক মহান বক্তিত্বদের মুখে শুনে থাকি যে ,মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব? কিন্তু তা কিভাবে সেটা আমার এই শান দেয়া ক্ষয়ে যাওয়া মগজে কিছুতেই ঢুকে না। আমাদের যে এতো অর্জন সকল কিছুই তো একদিন অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। তাহলে আমরা সৃষ্টির সেরা কি করে হলাম?
সেগুন কাঠের তৈরি পুরোনো ভারী জানালাটি বাতাসের ধাক্কায় খুলে গেলো। অনেক দূর হতে হিমেল বাতাস অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে আমার শরীরে এসে লাগছে। ঠিক যেন মৃত্যু শীতল অনুভূতি। কালো চাদরটি ভালো মতো গায়ে জড়িয়ে নিলাম।

জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কুয়াশার চাদর কিছুটা সরে গিয়েছে। কে যেন চিৎকার করে উঠলো। হ্যা কে যেন পাহাড়ের ওপর হতে অনেক নীচে পরে যাচ্ছে। হ্যা একটি মেয়ে। এই মেয়েটির গায়েও তো বাসন্তী রঙের তাঁতের শাড়ি। তার কণ্ঠে বাঁচার আকুতি। তার সাথে কি যেন না পাওয়ার যন্ত্রণা। মেয়েটি চিৎকার করে বলছে,
-"মাহি ভাই আমি বাঁচতে চাই। আপনার হাত ধরে বাঁচতে চাই।"
পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি গগন বিদারী চিৎকার করে ওঠে।

'না,এ হতে পারে না। কে মারা গেলো? বাঁচাও মেয়েটিকে। কেও আছো?'
আমার শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছে। বাড়ির সকলে ছুটে আসছে আমার দিকে। কে যেন উৎকন্ঠার সাথে বলে উঠলো,
-"আব্বাজান আপনার কিচ্ছু হবে না। এখনই এম্বুলেন্স আসছে।"
এতো কোলাহল কিসের জন্য। সবাই কেন এভাবে কান্না কাটি করছে? হঠাৎ কপালে ছোট্ট একটি হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকাই। ছোট্ট একটি মেয়ে অশ্রু ভেজা চোখে বলে উঠলো,
--"দাদু আমি তোমার হিমাঙ্গিনী। আমায় ছেড়ে কোথাও যেও না প্লিজ।"
আমার চোখের কোণে পানি জমে ওঠার কারণ কি? হঠাৎ জানালার ধার থেকে মিষ্টি এক কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।
-"মাহি ভাই মনে আছে আমায়? আমিই হিমাঙ্গিনী।"
মেয়েটির পুরো শরীর দিয়ে হালকা এক রশ্মি বের হয়ে আসছে। মেয়েটিও আমার মাথার কাছে বসে পড়লো। আমার দুই পাশে দুই পাশে দুই হিমাঙ্গিনী বসে রয়েছে। একজন কান্না থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু তা পুরাটাই ব্যার্থ চেষ্টা। আর অন্যজনের ঠোঁটে হালকা এক চিলতে হাসি। যে হাসির সৃষ্টি এই পৃথিবীতে নয়।

আমাকে এম্বুলেন্স এ তড়িঘড়ি করে ওঠানো হচ্ছে। আচ্ছা, আকাশের সূর্যটি হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো? নাহ দেখতে পারছি না তো। এতো অন্ধকার কেন চারপাশে। তাহলে কি আজই আমার স্মৃতিগুলোর শেষ দিন? হ্যা, তাই হবে।
এতো ঠান্ডা কেন চারপাশ। আচ্ছা সেই মেয়েটি কে যে পাহাড় থেকে পড়ে যাচ্ছিল? তাকে কি আমি চিনি? 
অন্ধকার হতে সেই কণ্ঠটি আবার ভেসে আসছে।
-"মাহি ভাই চলো তবে আমার সাথে। স্মৃতিগুলো বিলীন হয়ে যাক মহামায়ার।"
আমি কিছু না বুঝেই মনে মনে উত্তর দিলাম,
-"তবে তাই হোক।"

ধন্যবাদ Jahidul Islam Jhonny দোস্ত।

Written by: SraNton Hossian

বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০

মন

কি মন মিয়া সেদিনের কথা মনে পরে?
পড়ন্ত বিকেলে,অনেক নীচে একটি বিশাল নদী।নানাভাই এর সাথে বসে আছি।মুখোমুখি সিমেন্টের দুইটা ব্রেঞ্চ তৈরি করা।নানাভাই তার বয়সই এক লোকের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।লোকটির সাথেও ছোট্ট একটি মেয়ে।
মেয়েটি ব্রেঞ্চের ওপর বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।আমিও তাকে অনুকরণ করে নদীর দিকে তাকিয়ে রয়েছি।কি সুন্দর নদী।এটাই বাংলা মায়ের আসল সৌন্দর্য হয়তো।কি পরিষ্কার পানি।শীতের দিন হওয়ায় মাঝে মাঝে বালির স্তর দেখা যাচ্ছে।তাতে মনটা আরো ভালো হয়ে গেলো।মাঝে মাঝে ট্রলারের ফট ফট শব্দ আসছে।সকল কিছু যেন একটির সাথে আরেকটি অদৃশ্য শেকলে বাধা।নৌকা ছাড়া যেন নদীর এই সৌন্দর্য ফিকে হয়ে আসে যেমনটি তাঁরা ছাড়া চাঁদের সৌন্দর্য।
মেয়েটির সাথে এই কিছুক্ষণ সময়ে বেশ ভাব হয়ে গিয়েছে।
ওদিকে নানাভাই লোকটির সাথে এখনও কথা বলেই যাচ্ছে।কি এতো কথা একটি অপরিচিত মানুষের সাথে এটাই আমার বুঝে আসে না।
সূর্যটা এখন রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।সূর্যটি নদীর ঐপারে গাছপালার মাঝে ডুবে যাচ্ছে যেন।কিন্তু নদীর অন্যপার অনেক দূরে।ছোট ছোট গাছ দেখা যায়।মেয়েটি আমার পাশে এসে বসলো।বলল,
-"আজ থেকে আমরা বন্ধু,ঠিক আছে?"
আমিও হিহি করে হেসে দিয়ে বললাম,
-"আচ্ছা।"
★আচ্ছা আমি তখন কোন ক্লাসে পড়ি?হ্যা এইতো মনে পড়েছে।তখন তো মাত্র প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছি।অনেকটা সময় বলা চলে।বারোটা বছর তো হবেই।আচ্ছা নানাভাইকে যদি সেই ঘটনার কথা বলি তাহলে সে কি মনে করতে পারবে?হয়তো পারবে, হয়তো নয়।
আচ্ছা সেই যে মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিলো তার সাথে কি পরে আবার দেখা হয়েছিল?মনে পরছে না।নাহ, কিছুই মনে করতে পারছি না।
আচ্ছা সেই নদীটি কি এখনও আগের মতোই সুন্দর আছে?আগের মতোই নৌকা চলে?আগের মতোই সূর্য দূরে গাছ গুলোর মাঝে ডুবে যায়?
আচ্ছা সেই সিমেন্টে বাঁধানো ব্রেঞ্চ দুইটা কি এখনও আছে নাকি ভেঙে ফেলা হয়েছে?

#দুঃখ_উড়াই_মনের_মাঝে★

বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

দিন শেষে মানুষ

দিন শেষে আমরা সবাই মানুষ।একদিকে সমাজে উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ব্যক্তিটি যেমন মানুষ তেমনি সকলের মাঝে মিশে থাকা খুনি ব্যক্তিটিও মানুষ।
আজকাল একটি কথা অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছে।কথাটি এমন,
--"তোমার জগতে আমি নিকৃষ্ট কিন্তু আমার জগতে আমিই শ্রেষ্ঠ।"
কথাটি আমার বেশ ভালো লেগেছে।উক্ত উক্তিটি নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম এর ওজন নিতান্তই কম নয়।বেশ শক্তি রয়েছে এর মাঝে।
ধরা যাক একদিকে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া এক ব্যক্তি আর অন্যদিকে মাতাল-নেশায় আসক্ত এক ব্যক্তি।আচ্ছা বলুন তো কোন ব্যক্তিটি ভালো?হয়তো আপনারা অনেকেই বলবেন,
--"অবশ্যই পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া ব্যক্তিটি।"
কিন্তু আমার উত্তর হবে কিছুটা ভিন্ন।আমি বলবো তারা দুজনেই তাদের নিজ নিজ জগতে শ্রেষ্ঠ মানব।
পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া ছেলেটি যদি তার দায়িত্ববোধকে অনুভব করতে না পারতো তাহলে সে কোনদিনই তার নিজের জগতে শ্রেষ্ঠ হতে পারতো না৷কারণ সে মনে করে পরিবারের দেখাশোনা করা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য, তাই সে শ্রেষ্ঠ।
তেমনই নেশাখোর ব্যক্তিটি যখন নেশার ঘোরে ডুবে থাকে তখন নিজেকে রাজা বলে ভাবতে শুরু করে হয়তো।নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তার ভাবনার জগৎটি কিন্তু মিথ্যে নয়।তার জগতে নেশার সামগ্রী হয়তো পবিত্র কোন জিনিসের সমতুল্য।অবশ্য এটি আমার নিজস্ব মতামত। 

এখন আসা যাক খুনি ও চাকরিজীবী এর বিষয়ে।আমি তাদের পারিবারিক জীবন নিয়ে বলার চেষ্টা করি।

একটি লোক বেশ ভালো বেতনের চাকরি করে।পরিবার বলতে মা,এক মেয়ে এবং তার স্ত্রী।যাকে বলে, "হ্যাপি ফ্যামিলি"।যখন লোকটি সারাদিন পর অফিসের কাজ শেষে বাড়ি ফিরে আসে তখন তার মেয়ের মতো খুশি কেউ হয়না।ঘুমাবে বাবার কাছে,খাবার খাবে বাবার কোলে বসে,বাবার কর্মকান্ড নকল করবে।এক কথায় বাবা অন্ত প্রাণ।আর লোকটির কাছেও পৃথিবী বলতে তার মেয়ে।

এতো বললাম সভ্য জগতের কথা।এবার আসা যাক মানুষের ভিড়ে মিশে থাকা খুনির জীবন সম্পর্কে।

এলাকার গুন্ডাদের একজন সম্মানিত সদস্য।সারাদিনের নানারকম অপকর্মের পর যখন বাড়িতে ফিরে আসে তখন নিজেকে যতোটা সম্ভব সভ্য হিসেবে পরিবারের সামনে প্রদর্শন করানোর চেষ্টা করে।চার বছরের নেঙটো ছেলেটি বাবার দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।বাবা যখন ছেলেটিকে কোলে তুলে নেয় তখন শুধু খিল খিল করে হাসির শব্দ পাওয়া যায়।তখন সেই বাবার মাঝে খুনি সত্তাটির কোন অংশ অবশিষ্ট থাকে কি?হয়তো নয়।

এখানে উভয় ব্যক্তিরই কিন্তু এক আলাদা জগৎ রয়েছে যেখানে তারা উভয়েই এক।তারা দুজনেই পিতা।তাই বলে এমন নয় যে, আমি খুনকে মহান পেশা হিসেবে দেখাতে চাচ্ছি।অবশ্যই খুন একটি অতোন্ত ঘৃণ্য কাজের অন্তর্ভুক্ত।কিন্তু আমি এখানে প্রতিটি ব্যাক্তির এক অভিন্ন জগতের খোজে রয়েছি।

আমরা প্রতিটি মানুষকে এক দিক থেকে বিবেচনা করি।কয়েকটি ভাগ রয়েছে আমাদের কাছে।যেমন ভালো,খারাপ,নির্বোধ,চালাক।আমরা এই কয়েকটি বৈশিষ্ঠ দিয়ে প্রতিটি মানুষকে বিবেচনায় এনে থাকি।কিন্তু মানুষের মনোজগৎটি বেশ জটিল যা আমি এর আগের কয়েকটি লিখায় বলেছি।
আমার মতে প্রতিটি মানুষের একটি সুন্দর মন রয়েছে।কিন্তু সম্পূর্ণ রুপে সকলে সেই মনকে অনুধাবন করতে পারেনা।
আমার এইসব কথা হয়তো ভিত্তিহীন, হয়তো পাগলের মতো উল্টোপাল্টা বলে যাচ্ছি।কিন্তু আমার দেখার ধরণ এরকমই।অনেকে বলতে পারেন যে আমি অন্যায়ের পক্ষে কথা বলছি।আমি এটুকু বলবো,
--"কোন খুনী যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পরে তাহলে তো হলোই।কিন্তু যদি ধরা না পরে তাহলে এটুকু আশা রাখতে পারি, হয়তো তার বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে তার ভেতরের অনুশোচনা বোধ জেগে উঠবে।"

শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২০

বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান

আমাদের দেশের নাম "গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ"।১৯৭১ সালের পর থেকেই আমাদের দেশ বাংলাদেশ।এখন সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।সকলেই সেটা জানি।এখন আমার মতো করে কিছু কথা বলি।
আমাদের বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দুই দেশের মাঝে সকল সময় একটি দন্ড থেকেই যায়৷ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের একই অবস্থা।পাকিস্তান ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের মানুষের ওপর এক নির্মম অত্যাচার চালায়।আর শোষণ তো অনেক আগে থেকেই করে আসছিলো।এই সকল কিছুই আমাদের জানা কথা।কিন্তু এখানে কিছু ভাবনার বিষয় আছে।একটি দেশ কিভাবে খারাপ হতে পারে।দেশের শাসনে যারা থাকে তারা খারাপ হতে পারে কিন্তু দেশ নয়।তখনকার পাকিস্তানী নেতাদের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের জন্য আপনা আপনি মুখ দিয়ে গালি চলে আসে।সকলের ক্ষেত্রেই সেটা একই বলা চলে।কিন্তু পাকিস্তান দেশটিকে কখনোই আমি ঘৃণা করতে পারিনা।
এবার আসা যাক মূল কথায়।আমার বোন পাকিস্তানের নাম শুনলেই দাত মুখ খিচে পাগলের মতো করতে শুরু করে।আমি যখন বলি, " আমি মানবধর্মে বিশ্বাসি" তখন বোন বলে, 
--"আমিও মানবধর্মে বিশ্বাসি কিন্তু পাকিস্তানি হচ্ছে পাকিস্তানি।"
এক পর্যায়ে বোন আমাকে রাজাকার বলে অপমান করতে শুরু করে।লাঠি দিয়ে মারতে আসে।কিন্তু আমি বাপু আমার জায়গা থেকে এক চুলও সরে যাওয়ার পাত্র নই।আমি বোনকে বোঝাতে শুরু করি,
--"দেখ বোন পাকিস্তানে আমাদের প্রজন্ম এবং আমাদের বাবা মায়ের প্রজন্মের যে মানুষগুলো রয়েছে তাদের ওপর তোর রাগ থাকার কথা নয়।তারা তো আমাদের কোন ক্ষতি করেনি।"
কিন্তু বোন তো বুঝতে নারাজ।সে বলে,
--"কিন্তু তাদের দাদার প্রজন্ম তো আমাদের দেশের নিরীহ মানুষদের খুন করেছে।"
--"তাতে তাদের কি দোষ।তারা কি কিছু করেছে?তারা হয়তো অনুশোচনা করছে তাদের দাদার প্রজন্মের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের জন্য।"
তার পরেও বোন তার গোয়ার্তূমি নিয়ে বসে রয়েছে।তখন আমি বললাম,
--"ধর তুই একটি বাচ্চাকে রাস্তায় পরে থাকতে দেখলি।ঘটনা ক্রমে জানতে পারলি বাচ্চাটি একটি পাকিস্তানি দম্পতির বাচ্চা।এখন তুই কি বাচ্চাটাকে ফেলে দিবি?নিশ্চই নয়।"
বোনকে দেখলাম চুপ হয়ে গেলো।
আমি বলবো পাকিস্তানের এখনকার মানুষ খারাপ নয়।এখন যদি ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশ মিলে পাকিস্তানিদের শত্রু বলে আক্রমন করে তাহলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ মারা যাবে যারা কোন অন্যায়ই করেনি।আমি বলবো,
--"আমি আমার দেশকে ভালোবাসি।তাই বলে পাকিস্তানকে ঘৃণা করিনা অথবা পাকিস্তানের মানুষদের।আমি সেসকল মানুষদের ঘৃণা করি যারা আমার দেশের নিরীহ মানুষদের নির্বীচারে হত্যা করেছে।তাই বলে তাদের অন্যায়ের ভাগিদার হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মকে চিহ্নিত করতে পারিনা।"
আমি বলবো আমি মানব ধর্মে বিশ্বাসি।

উল্লেখ্যঃপাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন যে অতীতে পাকিস্তানের নেতারা বাংলাদেশের সাথে অন্যায় করেছে।অন্যদিকে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে এসে বাঙালিদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছে সেটিও বলেছেন।
যেখানে তারা অতীতের কর্মকান্ডের জন্য লজ্জিত সেখানে কেন আমরা একটি দেশের ওপর আঙুল তুলছি।যেখানে বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ একেবারেই ভিন্ন।মনের ভেতরে ঘৃণার পালন করলে তার ফল কখনো ভালো হয়না।যেখানে হাদিসে বলা আছে যদি শত্রুরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ। যেখানে এই মানুষদের কোন দোষই নেই।

@SraNton Hossain 

শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০

সেমিনার রুম


(১)
হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সেমিনার রুম।জানালার পাশের খালি টেবিলটিতে বসে রয়েছি।জানালার বাইরে বিরাট একটি বটগাছ এবং ছোট্ট একটি পুকুর ছবির ফ্রেমের মতো শোভা পাচ্ছে।ভালো না লাগার কোন কারণ নেই যে।
জানালার পাশের ছবি রাখার ফ্রেমটিতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি।কতো পুরোনো এবং স্মৃতি মাখা ছবি দেখা যাচ্ছে।কয়েকটি ছবির ওপর আমার চোখ বারবার ঘুরছে ফিরছে।
একটি ছবি দেখে মনে হচ্ছে শীতকালে তোলা।পেছনের দিকের পাহাড়গুলো কুয়াশার চাদড়ে মোড়ানো।ছবিটা পুরোনো হওয়ায় অতোটা স্পষ্ট নয়।
বেশ কয়েকজন তরুণ ছেলে পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।একজনের হাতে গীটার আর বাকিদের ঠোঁটে মিষ্টি এক চিলতে হাসি।ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে রঙিন ক্যামেরার প্রচলন বা ঐ সময়কালের তোলা।
আরেকটি ছবির ওপর আমার চোখ আটকে গেলো।
সরু একটি নদী, দুই পাশে উচু ও সবুজ পাহাড়।নদীর পানিতে পাহাড়ের ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে।ওপরের নীল আকাশ সাথে সাদা সাদা মেঘ।
নদীর বুকে নৌকার মাঝে বেশ কয়েকজন ছেলে বসে রয়েছে।হাস্যোজ্জ্বল চেহারাগুলো দেখে মনের কোথায় যেন পুলক অনুভব করতে পারছিলাম।ছেলেগুলোর পোষাক দেখে একটি স্যারের কথা মনে পড়ছে।স্যার বলেছিলো,
--"আজ থেকে বিশ বছর অতীতে ছেলেদের কাছে একটি স্টাইল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলো।ঢোলা তৈরি করা প্যান্ট সাথে সার্ট বা গেঞ্জি যাই হোক না কেন প্যান্টের মাঝে গুজে পরিধান করা।সাথে চোখে কালো একটি চশমা।"
স্যারের কথার সাথে ছেলেগুলোর কাপড় পরিধান করার ধরন অনেকটা মিলে যাচ্ছে৷সামনের দিকে একটি ছেলে নৌকার পাটাতনে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছে।তার মাথায় এখনকার স্টাইলে একটি ক্যাপ শোভা পাচ্ছে।যা অনেকটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে বলা চলে।কোথায় যেন সকল কিছু ঠিক নেই।কিন্তু এই ছবির বয়স অনায়াসেই পনেরো বছর পার হয়ে যাবে।
আচ্ছা এই ছেলেগুলো এখন কোথায়?তারা সকলের হয়তো মধ্যবয়সী মানুষ।তারা কি তাদের সোনালী অতীত স্মৃতিতে অনুভব করতে পারে?তারা যদি কখনো কলেজের এই সেমিনার রুমে এসে এই ছবিগুলো দেখতে পায় তাহলে তাদের কেমন লাগবে?
কষ্টের অনুভূতি হবে হয়তো।
কিন্তু তারা কি কখনো এক সাথে হতে পারবে?সম্ভাবনা খুবই কম।মানুষগুলো হয়তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরেছে পুরো দেশে চাকরির সুবাদে।শিক্ষা জীবনের পর হয়তো সকলের একসাথে হওয়াই হয়নি।

(২)
নিচে পুকুর এর কিনার থেকে কয়েকজন ছেলে মেয়ের কণ্ঠ ভেসে আসছে।অনেকটা অস্পষ্ট কিন্তু গানের মতো শোনাচ্ছে।সকলে মিলে গান গাইছে হয়তো।
এমন সময় একটি নাম না জানা পাখি তার সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে তুলছে।তার মনে হয়তো অফুরন্ত আনন্দ।
এই পাখি একদিন অতীত হয়ে যাবে,তার আনন্দ ধ্বনিও অতীর হয়ে যাবে,ঐযে গান গাইছে যেই ছেলে-মেয়েগুলো তাদের গাওয়া গানও একদিন অতীত হয়ে যাবে।
শুধু স্মৃতিগুলো জঞ্জালের মতো আটকা পরে থাকবে এই গোলক ধাধায়।
@SraNton Hossain

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...