রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

অসমাপ্ত কথামালা


★উরমিলা
জন্মঃ১০ জুন ২০০৩
আমাদের মনোজগৎটি  বেশ জটিল।হয়তো এই জটিল হওয়াটিই স্বাভাবিক।
মেয়েটির নাম কি?জানিনা।তার জন্ম কতো সালে?তাও জানি না।এখন অনেকেই বলতে পারেন,
--"তাহলে বাপু নাম আর জন্ম তারিখ দিয়ে শুরু করার মানে কি?"
আমি বলবো,
--"জানিনা কিছুই জানিনা।"
আজ থেকে পাচ কি ছয়টি বছর যেমন তেমন ভাবে হয়েই যাবে।সময়টি একটি শীতের সকাল।বাস থেকে নেমেছি,কোচিং ক্লাস আছে যে।চারপাশ যেন কুয়াশার চাদরে ঢাকা।তাই বলে অতোটাও নয় যে দশ হাত সামনে কিছু দেখা যাবে না।বাসের হেল্পার এক কথায় চিৎকার শুরু করেছে,
--"আরে মামু গাড়ির সামনে থন হরেন।"

তাই তো, আমি তো বাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।বাসের সামনে থেকে সরে আসলাম।আর মিনিট পাচ হাটলেই কোচিং ক্লাসে পৌছে যাবো।হঠাৎ করে কোথা থেকে হিমেল হাওয়া এসে কাপুনি ধরিয়ে দিয়ে গেলো।এখন মনে হচ্ছে এই ভরা শীতে পাঞ্জাবি আর চাদর গায়ে দিয়ে আসা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

রাস্তার পাশে যে বড় একটি পুকুর রয়েছে সেটি এতোদিন আমার নজরেই আসেনি।কিন্তু কেন আসেনি?হয়তো প্রকৃতি চায়নি তাই আসেনি।পুকুরের পাশ একটি বসার জায়গা করা আছে।বেশ মানিয়েছে এই পুকুর আর বসার জায়গাটি। ভাবছি আজ আর কোচিং এ যাবো না।কখনো নিয়মের বাইরে করা যাবে না এটা কোন সাধক বাবা বলেছে?আমি তো শুনিনি।
পুকুরটির পাশে যেতেই দেখলাম ব্রেঞ্চটির মাঝে একটি মেয়ে বসে রয়েছে।মুখের দিকে তাকাতেই আমি বিদ্যুতে শক খাওয়ার মতো দু পা পিছিয়ে আসলাম।এই সৌন্দর্যের কোন বর্ণনা দেওয়া চলেনা হয়তো।তাই আমিও না দেই।
শরীরে একটি কালো চাদর জড়ানো।একেবারে নিরেট কালো।হয়তো বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়েছে।ঠিক বুঝতে পারছি না যে।তার ওপর কুয়াশা যেন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।মেয়েটির চুলগুলো বাচ্চাদের মতো একটি ঝুটি করা।অপরুপ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছি।সকল সৌন্দর্য যেন মেয়েটির জন্যই তৈরি।

হয়তো মেয়েটির আমার সম্পর্কে বাজে ধারণা তৈরি হবে।কি আর করার।সত্যি কিছুই করার নেই।মেয়েটি আমার দিকে একবার তাকালো।সেই চোখে রাজ্যের বিষন্নতা।কেন এরকম বিষন্নতা।এটা উচিৎ নয়,একেবারেই উচিৎ নয়।হঠাৎ করে সেই হিমেল হাওয়া কোথা থেকে আবার উদয় হলো।মনে হচ্ছে এই ঠান্ডার অনুভূতি যেন শরীরে বিধে যাচ্ছে।নিজেকে কোনমতে ঠিক রেখে হাতে হাত ডলতে ডলতে পুকুরের দিকে ঘুরে দাড়ালাম।
বেশ অনেক সময় মাঝে পার হয়ে গিয়েছে।দশ মিনিট তো হবেই।আমি ধারণা করলাম মেয়েটি আমার উপস্থিতিতে অস্বস্থি বোধ করে হয়তো চলে গিয়েছে।হঠাৎ করেই নুপুরের মতো হালকা কন্ঠে বলে উঠলো,
--"এই ঠান্ডার মাঝে এভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যে?অসুস্থ হয়ে যাবেন তো।"
আমি ঘুরে তাকিয়ে বললাম,
-"আপনিও তো একটি চাদর গায়ে দিয়ে বসে রয়েছেন।আপনার ঠান্ডা লাগে না?"
-মেয়েটি হয়তো কিছুটা দমে গেলো।দেখলাম মেয়েটি ব্রেঞ্চের এক পাশে সরে গিয়ে আমাকে বসার জন্য জায়গা করে দিলো।ব্রেঞ্চে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলাম,
--"এই সকালে কনকনে ঠান্ডার মাঝে বসে রয়েছেন কেন?"
মেয়েটি বলল,
--"আমার কথা আমাকেই ঘুরিয়ে দিলেন?"
বলেই খিলখিল করে হেসে দিলো।হয়তো সেই হাসির মাঝে আত্মার পরিশুদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে।আমিও নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম।কিন্তু সেই হাসিতে অসুস্থতা মিশে রয়েছে ভয়ানক ভাবে।নিজেকে বড় ক্লান্ত মনে হচ্ছে।এই কনকনে ঠান্ডা আর আমি যেন একই অস্তিত্ব।চোখে ঘোর লেগে রয়েছে কিন্তু মন যেন শরীরের বিরুদ্ধে চলছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম,
--"নাম কি আপনার?"
--"জানিনা।"
--"বলতে চাইছেন না তাই তো?"
--"ঠিক তেমনটি নয় আবার ঠিক তেমনই। "
মেয়েটি বেশ ঘুরিয়ে কথা বলতে পারে।কিন্তু কণ্ঠে তার বাচ্চাদের মতো সরলতা সকল সময়ই লক্ষ্য করছি।নাহ এভাবে মেয়েটি মেয়েটি করতে ভালো লাগছে না।নাম দিলাম উরমিলা।

উরমিলা হঠাৎ করে বলে উঠলো,
--"সাহিত্য বিষয়ে কতোটুকু জানেন?মানে সাহিত্য বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করেছেন কী?"
সেই অসুস্থতা মিশে থাকা হাসি দিয়ে বললাম,
--"সাহিত্য বিষয়ে জানতে হলে সেই বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করতে হয় বুঝি?"
--"তা কতোটুকু জানেন?"
--"চালিয়ে দেওয়ার মতো।"
--"হু।"

আসুস্থতা হাজার গুনে বেড়ে গেলো হয়তো।মাথার ভেতর সুই ফোটার মতো যন্ত্রনা হচ্ছে।মুখ দিয়ে নিজের অজান্তেই তীব্র চিৎকার বাহির হয়ে আসলো।পারছি না আর,একেবারেই পারছি না।উরমিলার কোলে ঢলে পড়ে গেলাম।কিছুক্ষণ পর উরমিলা বলল,
--"চিন্তা করবেন না।হাসপাতালে ফোন করে দিয়েছি।গাড়ি আসবে কিছুক্ষনের মাঝে।"
কি অদ্ভুত মেয়ে।গলায় কোন কম্পন অনুভব করতে পারছি না।সে যেন একটি পাথরের ন্যায় কঠিন।
আমি বললাম,
--"আপনার নাম কি?আপনার বাড়ি কোথায়?বেচে থাকলে অসম্পূর্ণ কথাগুলো সম্পূর্ণ করতে চাই।"
--"প্রকৃতিই হয়তো চায়না কথাগুলো সমাপ্ত হোক।আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারি না।"
--"তাহলে আমাদের আর দেখা হবে না?"
--"হয়তো না আবার হয়তো হ্যা।"
ভেতর থেকে ডুকরে কান্না আসতে চাইছে।কিন্তু কেন?উরমিলার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হতে পারেনা।কেননা ভালোবাসা প্রচন্ড জটিল একটি বিষয়।হয়তো উরমিলার মনের ভাব জানার প্রচন্ড আগ্রহ তৈরি হয়েছে তাই এমন কান্না আসছে।
এম্বুলেন্স এসে গিয়েছে।উরমিলা আমার কপালে হাত রেখে বলল,
--"সুস্থ হয়ে যাবেন।হয়তো দেখা হবে কোনদিন। "

★মাঝে পাচটি বছর কেটে গিয়েছে।অনেক সময় বলা চলে।সুস্থ হওয়ার পর অনেকবার গিয়েছি সেই পুকুর পারে কিন্তু উরমিলার দেখা পায়নি।অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সম্ভব হয়নি।এই পাচটি বছরে জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারি মাসে অনেকবার করে গিয়েছি সেই জায়গায়।মনে অনেক আশা ছিলো হয়তো দেখা হবে,হয়তো সেই তীব্র শীতে সেই ব্রেঞ্চটিতে উরমিলাকে দেখতে পাবো।হয়তো।যদিও ব্রেঞ্চটি আর আগের মতো নেই।তার শরীরে যেন ঘুন বাসা বেধেছে।অনেকটাই যেন মলিন বদনে বসে থাকে সে।   হয়তো উরমিলার কথাই ঠিক,
--"প্রকৃতির বিরুদ্ধে কিছুই করার ক্ষমতা নেই আমাদের।"

★আজ আবার বেড়িয়েছি উরমিলার খোজে।হয়তো দেখা হয়ে যাবে।এই টহল বন্ধ করা যাবেনা যে।যদি এমন হয় যে আমি উরমিলার খোজে যাইনি আর সেদিনই সে এসেছিলো।নাহ এটা করা যাবে না।
আজ অবশ্য আর পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে আসিনা কিন্তু চাদরটা তার জায়গায় ঠিকই থাকে।হেটে যাচ্ছি তো হেটেই যাচ্ছি।হাতে আধ পোড়া সিগারেটটি সে নিজেকে পুড়িয়ে যাচ্ছে অনবরত।
পুকুরটির সামনে কে যেন দাড়িয়ে রয়েছে।হ্যা তাই তো মনে হচ্ছে।এতো দূর থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না ঠিক।পুকুর ধারে যেতেই ঘুরে তাকালো সে।চোখে একটি হালকা ফ্রেম এর চশমা,গায়ে নিরেট কালো চাদর।হ্যা উরমিলাই তো।আমি তাকিয়ে রয়েছি অপলকভাবে ঠিক সেদিনের মতো।উরমিলার মাথায় বাচ্চাদের মতো ঝুটিটি আর পরিলক্ষিত হচ্ছে না।তাতে কি এক অন্যরকম মহিমা তাকে যেন ঘিরে রেখেছে।উরমিলা বলল,
-"সিগারেট খাচ্ছেন যে।শরীর খারাপ হয়ে যাবে তো।"
আগের ভাবেই যেন কথাগুলো বলল সে।আমি বললাম,
-"প্রকৃতির ইচ্ছাই তাহলে আবার দেখা হওয়া।
উরমিলার মুখে  স্নিগ্ধ হাসি লেগে রয়েছে যা সেই দিন ছিলো না।     

Written By:#SraNton_Hossain; #Nayma_Islam

বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯

নিশাচর

একটি বৃদ্ধ বটগাছের নিচে বসে রয়েছি।এখন লোকে যদি আমাকে পাগল ভাবে তাহলেও তাদের কোন দোষ দেওয়া চলে না।কেইবা এই পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের বটগাছের নিচে পা ছড়িয়ে বসে থাকবে শুধু পাগল ছাড়া।
আচ্ছা এই বটগাছের বয়স কতো হবে?হয়তো একশো বছর অথবা তার চেয়েও বেশি।বলতেই হবে অনেক অভিজ্ঞতা এই বৃদ্ধ গাছটির যা তার ঝুলন্ত শেকড় গুলো দেখেই বোঝা যায়।
সূর্য মামা পশ্চিম দিগন্তে অস্ত যাবে যাবে করছে।সে যেন খুব ক্লান্ত।তারও তো বিশ্রাম দরকার।হালকা এক টুকরো আলো চারপাশে অবশিষ্ট রয়েছে।সূর্য মামা ঘুমাবে আর চাঁদ মামা ঘুম থেকে জেগে উঠবে।
এমন সময় একটি লোক আমার পাশে এসে বসলো।পড়নে তার একটি লুঙ্গি আর একটি গামছা।লোকটি হয় কৃষক নাহয় দিন মজুর।লোকটি তার ঘর্মাক্ত শরীর গামছা দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,
-“বুঝলেননি ভাইসাব আইজকা খুব গরম পরছিল।“
আমি শুধু বললাম,
-“হুম।“
-“ভাইসাব আপনে এই জায়গায় এমনে বইসা রইছেন যে?মাইনসে তো পাগল কইবো।“
-“কি করবো বলেন?আমি তো গন্তব্যহীন পথিক।পুরো পৃথিবীটাই যে আমার ঘর।“
লোকটি কিছুক্ষণ ভেবে বলল “হ বুঝছি”।এখন লোকটি কি বুঝেছে সেটা সেই জানে।অবশ্য গ্রামের মানুষকে অতো জটিল প্যাচ নিয়ে ভাবতে হয় না।তারা যেটুকু জানে সেটুকু দিয়ে নিজের মতো করে বুঝে নেয়।সেটি হোক ঠিক বা ভুল তাতে তাদের জীবন ধারায় কোন পরিবর্তন আসেনা যে।
দিনের শেষ আলো টুকুও নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে।মন চাইছে এখানেই মাটির বুকে শান্তিতে শুয়ে পড়ি।খুব ক্লান্তি অনুভব করছি।কেন এতো ক্লান্ত আমি?জানিনা,আর জানার প্রয়োজনও নেই।এমন সময় লোকটিকে দেখলাম একটি গামছার গেরো খুলছে।ভেতর থেকে একটি ঢাউস আকারের প্লাস্টিকের বাটি আর তার ভেতর দলা পাকানো লাল লাল ভাত আর কয়েক টুকরো আলু।বুঝলাম এগুলোই লোকটির রাতের খাবার।
লোকটি বাটির ঢাকনায় করে ভাত দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিলো।আর বলল,
-“নেন ভাই খান।যা আছে দুইজনে মিলা খাই।“
ভাতের সাথে এক টুকরো আলুও পেলাম।খাবার হিসেবে খুবই নিম্নমানের খাবার কিন্তু ভালোবাসা আর অনুভূতির দিক থেকে পৃথিবীর সেরা খাবার এটি।ভাত খেয়ে একটি ছোট্ট ঢেকুর তুলে বললাম,
-“ভালোবাসার আহার সকলের যেন মিলে,ভিক্ষার আহার নয়।“
লোকটি কি বুঝল কে জানে।মুখে খাবার নিয়ে আমার কথায় ঘন ঘন মাথা নেড়ে গেলো শুধু।
দূরে কয়েকটি ক্ষুদ্র কুটির দেখা যাচ্ছে।কুটিরের ভেতর কুপী বাতির আলো এবং তার সামনে বাচ্চারা বই খাতা নিয়ে পড়তে বসেছে।
লোকটির খাওয়া মাত্র শেষ হল।লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম,
-“ভাই সাহেবের নাম কি?”
-“ইদ্রিস মিয়া”
-“বাড়ি না গিয়ে এখানে এসে খাবার খাচ্ছেন যে,বাড়ি যাবেন না?”
-“আপ্নের মতন পৃথিবীটা আমার ঘর।সারাদিন বাবুর ক্ষেতে কাম করি তারপর জেইহানে রাইত সেইহানেই কাইত।“
ইদ্রিস মিয়ার কথাটি বেশ লাগলো।কিছুক্ষণ কথাটি আওড়াতে থাকলাম,
-“যেখানে রাত সেখানেই কাত।“
ইদ্রিস মিয়াকে আবার প্রশ্ন করতে যাবো কিন্তু দেখি মহাশয় চার হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে।পাশে খাবারের বাটিটা পড়ে রয়েছে অযত্নে।
ইদ্রিস মিয়া আজকে আমার খাবারের যোগান দাতা সেদিক থেকে লোকটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।কিন্তু তাকে বিনময়ে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই।আমার এক মাত্র সম্পদ বলতে একটি আধ ছেড়া ডাইরি।ডাইরিটি ইদ্রিস মিয়ার মাথার পাশে রেখে দিয়ে হাটতে শুরু করলাম অজানার উদ্দেশ্যে।হয়তো ইদ্রিস মিয়ার কাছে আমার ডাইরিটি একটি জঞ্জাল ছাড়া কিছুই নয়।হয়তো ডাইরিটি ফেলে দেবে পাশের ডোবায়।তবুও মনে করি তাকে কিছু দেওয়া উচিৎ তাই দিয়েছি।
আচ্ছা সকল ঋণ কি পরিশোধ করা যায়?হয়তো নয়।
ইদ্রিস মিয়া সারা বছর এই মাটির সংস্পর্শে থাকে।সেদিক থেকে বলতে গেলে তার সাথে মাটির এক নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।আমার সাথেও কি মাটির এমন নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে?আমিও তো উনারই মতো।
একটি ক্ষুদ্র কুটিরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু কথা শুনতে পেলাম,
-“চার এক্কে চার।চার দুগুণে আট।“
-“কিরে আর কতক্ষণ ধইরা একই নামতা পড়বি?”
-“এইতো হইয়া গেছে মা।এখনই বাংলা কবিতা পড়ুম।“
-“হ হ পড়।তুই বড় হইয়া ডাক্তার হইয়া না মাইনসের সেবা করবি?ভালো কইরা পড়।“
-“হ মা পড়তাছি।“
সত্যি পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের একটি ইচ্ছা থাকে।এখানে মায়ের ইচ্ছা তার ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে,গরিব মানুষের চিকিৎসা করবে।ছেলের ইচ্ছা বড় হয়ে ডাক্তার হয়ে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করবে।আর আমি নিশাচর মানুষ যে কিনা দিনে বিশ্রাম করে আর রাতে ঘুরতে বের হয়।
আমার আব্বু আম্মু আমার কাছ থেকে যেন কি আশা করেছিলো ঠিক মনে করতে পারছি না।অনেকগুলো বছর মাঝে পার হয়ে গিয়েছে কিনা।না থাক সেসব না ভাবাই ভালো।
বেশ তো আছি যেমনটি আছি।
SraNton Hossain

বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৯

প্রজন্ম





আমি মৃত্যুবরণ করতে চাইনা।পৃথিবীর সাথে সম্পর্কের বাধন হতে মুক্তি পেতে চাইনা,চাইনা পরিবারের কেউ আমাকে ছেড়ে চলে যাক না ফেরার দেশে।কিন্তু তা যে কখনো সম্ভব নয়।
আমাদের দাদুভাই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন মেঘের ওপারে।আব্বু তাঁর ছোটবেলার গল্প করেন আমাদের সঙ্গে।আব্বু নাকি প্রতিদিন দাদুভাই এর হাত ধরে ঘুরতে যেত।এখন আমাদের মাঝে সেই দাদুভাই আর নেই।
মনে পরে যখন চাচাতো ভাইয়ার বিয়েতে দাদুভাই অনেক শখ করে তাঁর দুধের মতো সাদা দাড়িতে মেহেদী দিয়ে লাল করে ফেলেছিল,মনে পরে যখন ঈদের লুঙ্গী পছন্দ না হলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতো,মনে পরে যখন দাদুভাই নামাজ শেষে আমাদের সব ভাই বোনেদের জন্য জিলাপী কিনে আনত।
দাদুভাই এর ব্যাপারে আব্বুর সাথে কথা বলতে বলতে আমার চোখ চক চক করে ওঠে।
আজ থেকে চল্লিশ বছর পর হয়তো আব্বুও আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।তখন কি আমিও খুব কান্না করবো?এই কথা ভাবতেই গলার কাছে কি যেন একটি আটকে আসার অনুভূতি হচ্ছে।
তখন হয়তো আমিও আব্বুর মতো ছেলের ভূমিকা পালন করবো।আমার ছেলে-মেয়েদের কাছে আব্বুর সম্পর্কে অনেক গল্প করবো।হয়তো তখন আমার চোখের কোনে এক ফোটা পানি জমে উঠবে।
কিন্তু এখানে একটি ভাবনার বিষয় রয়েছে।চল্লিশ বছর পর যখন আব্বু মারা যাবে তখন আমিও মধ্য বয়স্ক হয়ে যাবো বলা চলে।তখন দাদুভাই এর খুব হালকা স্মৃতিই অবশিষ্ট থাকবে আমার কাছে।সেই অবশিষ্ট স্মৃতি টুকু আমার ছেলে-মেয়েদের মনে প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে হয়না।
যখন আমি বা আমাদের প্রজন্ম পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে তখন দাদুভাইকে মনে রাখার মতো কেউ থাকবে না।হয়তো তখন আমার ছেলে মেয়েরা বলবে,
-“আমার আব্বু মাঝে মাঝে তাঁর দাদু সম্পর্কে গল্প করতো।“
এতটুকুই।কিন্তু তাকে স্মৃতির পাতায় মনে রাখার মতো কেউ থাকবে না।আমার দাদু বলে যে কেউ ছিল সেটি যেন এই পৃথিবীই ভুলে যাবে।এমন ভাবে যতই প্রজন্ম পরিবর্তন হতে থাকবে ততোই আমরাও পৃথিবী থেকে মুছে যাবো।যেমনটি হয় যখন আমরা রাবার দিয়ে অপ্রয়োজনীয় লিখা গুলি মুছে ফেলি।
এসব চিন্তা করলে মনে হয় এই বেচে থাকার কোন মানে নেই।একদিন তো মারা যেতেই হবে,একদিন তো পৃথিবীর মানুষরা ভুলেই যাবে আমার কথা।
যদি ভবিষ্যতে আমার অনেক টাকা হয় তারপরও কি আমার কোন লাভ হবে?
হবে না।
কোন প্রতিপত্তিও আমাকে মানুষের মনে বাচিয়ে রাখতে পারবে না।
কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যারা তাদের সৃষ্টিকর্মের দ্বারা চিরো স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।তাদের প্রতিভা দিয়ে পৃথিবীর অনেক মানুষের মনে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গিয়েছে।কিন্তু সেরকম কোন গুণ তো আমার কাছে নেই।
সেরকম দুজনের নাম এখন মনে পড়ছে।
একজন হচ্ছে “রেবেকা শফি”।জন্ম ১৯৭৮ সালে।১৯৯৩-১৯৯৪ সালে তাঁর বয়স যখন ১৫ তখন বিদ্যালয়ের একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সে অংশগ্রহণ করে।দীর্ঘ ২৬ বছর পর কোন এক ব্যক্তি সেই ভিডিওটি অনলাইনে প্রকাশ করে দেয় যাতে করে সকলে তাঁর কথা শুনতে পারে।তাঁর বাচন ভঙ্গি এবং বাংলা উচ্চারণ শুনে আমি স্তব্ধ।এক কথায় আমি তাঁর কথা বলার প্রেমে পড়ে যাই।এতো সুন্দর করে কেউ বাংলা উচ্চারণ করতে পারে সেটি আমার জানা ছিলনা।
এই “রেবেকা” মানুষের মনে ঠিকই দাগ কাটতে পেড়েছে।
আর একজন হচ্ছে “তাহমিদা জান্নাত”।২০১৪ সালে ফেসবুকে একটি লিখা দেওয়া হয়।২০১৩ সালের ৭ মার্চ থেকে ২০১৪ সালের ২৫ মে হচ্ছে সেই লিখার আয়ুষ্কাল।এই সময়ে “তাহমিদা” এর ক্যান্সারের বিষাদময় জীবন কেমন কেটেছে তা লিখা হয়েছে।২০১৪ সালের ২৭ মার্চ লিউকোমিয়ার কাছে হার মানতে হয় তাহমিদার।কিন্তু সে কিন্তু মানুষের মন থেকে মারা যায়নি।তাঁর লিখার ভাষা দেখে কতো মানুষ যে কান্না করেছে তাঁর কোন ঠিক নেই।তাঁর অনুভূতিগুলো অনেক মানুষের মনে দাগ কেটে গিয়েছে।
হয়তো মৃত্যুর মুখোমুখি না হলে এমন ভাষায় লিখা সম্ভব নয়।
আমি আমার শেষ জীবনে কোন একটি বরফের দেশে থাকতে চাই যেখানে সারা বছর ধরে বরফ পড়বে।রাতে যখন কনকনে ঠাণ্ডা পড়বে তখন খোলা আকাশের নিচে চাদর মুরি দিয়ে পরিষ্কার তারা ভরা আকাশ দেখবো।অনুভব করবো তারাদের স্পর্শ,অনুভব করবো চাদের আলো।কল্পনা করতে থাকবো যখন আমি তারাদের দেশে চলে যাবো তখনটি কেমন হবে।
আমি অধিকার রাখিনা পৃথিবীর মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার।আমি এতো তুচ্ছ যার জায়গা পৃথিবীতে নয়।
আচ্ছা বরফের দেশে কি আমার প্রিয় ফুলগুলোর সুবাশ পাওয়া যাবে?হয়তো নয়।তবুও আমি সেই মৃত্যু শীতল করা অনুভূতির মধ্যে জীবন ত্যাগ করতে চাই যেখানে তারারা আমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে এবং খিল খিল করে হাসবে।
@SraNton Hossain

বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

অতীত দেখা

টাইম মেশিন বা এরকম কিছু যদি সত্যি আবিষ্কার হতো যা দিয়ে আমাদের অতীত দেখা যেতো কতো ভালো হতো তাই না।আমাদের ছোট বেলার কতো মজার মজার সময়গুলো হাড়িয়ে ফেলেছি চিরদিনের জন্য।যা হয়তো ফিরে পাওয়া সম্ভব না কিন্তু অনুভব করাও কি অসম্ভব।বিজ্ঞানীরা কি আবিষ্কার করতে পারেনা এমন কোন যন্ত্র? 

*সাল ২০৫০। পৃথিবীর মধ্যে যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী তইমুর।সে এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছে যার মাধ্যমে মানুষ তার পুরানো দিনে ঘুরে আসতে পারবে।ঘুরে আসতে পারবে তা ঠিক নয়,সে তার পুরানো দিন গুলো দেখতে পারবে। 
বিজ্ঞান একাডেমীর বিশেষ কিছু বিজ্ঞানী তার কথা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনা।এতো বছর ধরে যে আবিষ্কার এতো বড় বড় বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পারলো না তা নাকি বাংলাদেশের এই খুদে এক বিজ্ঞানী আবিষ্কার করে ফেলেছে। 
তইমুর পৃথিবীর নামি দামি সকল বিজ্ঞানীকে ডাকে তার এই আবিষ্কার দেখানোর জন্য।সে যে শুধু মাত্র বিজ্ঞান মহলে এসেছে শুধুমাত্র এই আবিষ্কারটি করার জন্য।সে তার অতীত দেখতে চায় শুধু।তারপর সে এই আবিষ্কার বিজ্ঞান একাডেমীর হাতে তুলে দিবে।সে তার পুরানো দিন গুলো দেখতে চায় যেখানে সে এবং তার বন্ধুরা মাঠে খেলা করছে।অনেকে তাকে এর জন্যে পাগল বলেও আখ্যা দিয়েছেন কিন্তু সে তার জায়গায় অনর ছিলো। 
সভায় পৃথিবীর বেশ কয়েকটি প্রতিভাবান বিজ্ঞানী এসেছেন।তইমুর সকলের সামনে তার সেই যন্ত্র প্রকাশ করলো।যেখানে মানুষের মাথায় পড়ার মতো একটি হেলমেট এবং নানারকম বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি।পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাবান বিজ্ঞানী টমাস বলে উঠলো 
-আমি দেখতে চাই এটি কাজ করে কিনা।আমি প্রথমে পড়বো এই হেলমেট। 
তইমুর খুশী হয়ে যায়।সে টমাসকে হেলমেটটি পড়িয়ে দেয় এবং নানারকম যন্ত্রপাতি ঘাটতে থাকে।এই হেলমেটের সাথে একটি মনিটর যুক্ত করা রয়েছে।টমাস যা দেখবে বাকি সবাই তাই দেখতে পাবে।কিছুক্ষণ পর মনিটরে একটি উজ্জ্বল আলো ফুটে উঠে।ধীরে ধীরে সেটা পরিষ্কার হতে থাকে।সেখানে দেখা যায় একটি ছেলে একটি ফাটা বল নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।ছেলেটির চুলগুলো একেবারে বোকাদের মতো আঁচড়ানো।সবাই ছেলেটিকে চিনে ফেলল।এটি বিজ্ঞানী টমাস।এলাকার ছেলে তার ফুটবল তা ফাটিয়ে দিয়েছে আর সে সেই ফাটা বল নিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করছে। 
সভার সকলে বিকট শব্দে হেসে উঠলো।তইমুর সময়টা কয়েক বছর এগিয়ে দিলো যেখানে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানী টমাস একটি বই পড়তে পড়তে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেটে যাচ্ছে।সেই বোকা ছেলেটি আজকে এতো বড় বিজ্ঞানী। 
বিজ্ঞানী টমাস তার হেলমেট খুলে ফেলল এবং বলল 
-সত্যি তুমি অসাধারণ আবিষ্কার করেছো তইমুর। 
তইমুরের তো গর্বে বুক ফুলে উঠছে।তইমুরকে বিজ্ঞানী টমাস কানে কানে বলল 
-এই ফুটেজের কোন রেকর্ড থাকলে ডিলিট করে দাও। 
তইমুর বলল 
-স্যার আপনাকে স্ক্যান করার সময়ই রেকর্ড বন্ধ করে দিয়েছি।আপনার মতো এতো বড় বিজ্ঞানীর অতীত রেকর্ড করার মতো সাহস আমার নেই। 
-ধন্যবাদ তইমুর। 

তইমুরের আবিষ্কারের পর পৃথিবীর অনেক বিজ্ঞানী তার সাথে দেখা করতে এসেছিলো।অনেকে তইমুরের আবিষ্কার কিনে নিতে চেয়েছে কিন্তু সে এটি বিক্রি করেনি।সে এটি বিজ্ঞান একাডেমীতে দিবে বলে ঠিক করেছে। 
এখন সন্ধ্যা সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।সে তার অতীত দেখার যন্ত্রটি নিয়ে পড়লেন।আজ সে তার পুরানো দিনে কাটানো সময়গুলো দেখবে।তইমুরের সহকারি জেসিকা তাকে সাহায্য করছে যন্ত্রগুলো ঠিক জায়গায় লাগাতে।যখন যন্ত্রগুলো চালু করা হলো তখন তইমুরের সামনে অন্ধকার হয়ে এলো।তারপর ধীরে ধীরে সব কিছু পরিষ্কার হতে থাকে।সে দেখতে পায় 
একটি ছেলে একটি ছোট ইটের টুকরো লাথি দিতে দিতে স্কুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।ইয়া বড় একটি ঢাউস সাইজের ব্যাগ তার পিঠে।ছেলেটি ক্লাসের সামনে গিয়ে দাড়ায়।দেখে স্যার এসে পড়েছে। 
স্যার তা খুব মজার।স্যার এর নাম ভানু ।কিন্তু সবাই মজা করে বলে বানো স্যার।স্যার বললেন 
-কিরে আজকেও দেরি করে আইলি দেখি। 
-হুম।দুঃখিত স্যার 
-যা সীটে যাইয়া বয় 
ছেলেটি সীটে গিয়ে বসে। 
ভানু স্যার কখনো কোন ছাত্রকে মারেন না।সকলের সাথে মজার সম্পর্ক তার।ছাত্রদের সাথে মজার মজার কথা বলেন। 
স্যার বিজ্ঞান ক্লাস করাচ্ছেন।এমন সময় স্যার পড়ানো বাদ দিয়ে বললেন  
-একটা কথা বলতে পারবি নি?পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তির জায়গা কোনডা।দাড়া ইসলামিক দৃষ্টিতে বলা যাইব না কিন্তু 
-ছেলেটি বলে উঠে পায়খানা 
সবাই হো হো করে হাঁসতে শুরু করে।স্যার সকলের হাসি থামার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।হাসি থামলে স্যার বলেন 
-এক্কেবারে ঠিক উত্তর দিছস।এবার বল ক্যারা কেম্নে পায়খানা করছ 
সবাই তো লজ্জায় শেষ।এই ধরনের স্যার হলো ভানু স্যার। 

তইমুর তার সহকারীকে বলে সময় পরিবর্তন করতে।সময় পরিবর্তন করে এক সপ্তাহ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।তখন তইমুর দেখে 
ছেলেটি ক্লাস করছে খুব মনোযোগ দিয়ে।হাবিব স্যার এর ক্লাস।এমন সময় একটি বই এর প্রকাশনি থেকে তাদের বই এর বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য বাচ্চাদের জন্য ছোট ছোট বই নিয়ে এসেছে।সকলের মাঝে স্যার বই বিতরন করে দিচ্ছে।বই এর নানা রকম রঙ।একটি লাল একটি সবুজ একটি হলুদ।ছেলেটি চাইছিলো যাতে করে তাকে লাল বইটি দেওয়া হয় কিন্তু দিলো সবুজ রঙের বই।সে মন খারাপ করে তার পাশের বন্ধুদের বলল 
-দেখলি আমাকে লাল রঙের বইটি দিলো না।স্যার কিরকম খারাপ। 
ক্লাসের শেষে ছেলেটির দুই বন্ধু মজা করার জন্য স্যার কে এই কথাটি বলে দেয়।স্যার বিষয়টি খুবই সেনসিটিভলি নেয়।তিনি এসে ছেলেটিকে অনেক কথা শোনায়।ছেলেটি খুবই কান্না করতে থাকে।কারন সে ভাবতে পারেনি এমন হবে।ছেলেটির বন্ধু দুজনও একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।তারা ভাবতে পারেনি বিষয়টি এমন হবে।স্যার ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে 
-এটি কি তোমার রাগের কান্না নাকি অনুতাপের কান্না। 
ছেলেটি হেচকি তুলতে তুলতে বলে 
-আমায় মাপ করে দিন স্যার।আমার ভুল হয়ে গেছে। 
হাবিব স্যার কোন কথা না বলে চলে যায়।সকলে ভয় পায় এই ভেবে যে এই কথাটি প্রধান শিক্ষিকার কানে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।তিনি খুবই কোমল মনের মানুষ কিন্তু কোন অন্যায় দেখতে পারেন না।সবাই শুধু প্রার্থনা করছিলো যেন প্রধান শিক্ষিকা না আসে।কিছুক্ষণ পড়েই ছুটির ঘণ্টা দিয়ে দেয়।সবাই হাফ ছেড়ে বাচে। 
কিন্তু কোন লাভ হয় না।সকলে দেখে প্রধান শিক্ষিকা দরজার সামনে দাড়িয়ে।তিনি অনেক কথা শোনায় ছেলেটিকে।ছেলেটি একটি কথাও বলে না।তার পর ছেলেটিকে বেশ কয়েক ঘা লাগিয়ে দেয়।কারন তা নাহলে হয়তো হাবিব স্যার অন্য কিছু মনে করবেন।ছেলেটি কোন শব্দ করে না।সব মার হজম করে নেয়।আর সে তো আসলেই একটি অন্যায় করে ফেলেছে।আর প্রধান শিক্ষিকা যে তার অনেক শ্রদ্ধার একজন মানুষ। 
মুখ বুজে বাড়িতে চলে যায়।বাড়ি গিয়েই মায়ের কোলে মুখ গুজে সে কান্না করতে শুরু করে।সমস্ত কথা সে তার মায়ের কাছে বলে।মায়ের মুখটাও অন্ধকার হয়ে যায়।ছেলে এভাবে কান্না করলে সহ্য করতে পারে না যে সে কিন্তু ছেলে তো তার অন্যায় করেছে অনেক।সে ছেলেকে অনেক ভাবে বোঝায় যেন কান্না না করে। 
পড়ের দিন ছেলেটি স্কুলে যায় মাথা নতো করে।সে যে অন্যায় করেছে তারপর মাথা উচু কীভাবে করবে।প্রথম ক্লাসেই প্রধান শিক্ষিকা আসেন।তিনি বেশ কিছুক্ষণ নিজেই ক্লাস নেন।যাওয়ার আগে প্রধান শিক্ষিকা ছেলেটিকে ডেকে আনেন কাছে।ছেলেটিও খুব ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়।যাওয়ার পর প্রধান শিক্ষিকা ছেলেটিকে ধরে অঝোর ধারায় কান্না করতে থাকে।তিনি যেভাবে মেরেছেন সেটা হয়তো তাকে খুব যন্ত্রণা দিয়েছে। 
প্রধান শিক্ষিকার কান্না দেখে ছেলেটিও কান্না করে দেয়।তার বাধ যেন আর মানেনা।পুরো ক্লাস এই দৃশ্য দেখে।সবার চোখেই হয়তো পানি জমে উঠেছে। 
তখন তইমুর বলে সময় পরিবর্তন করো। 
কয়েক মাস এগিয়ে নেয়ার পর সে দেখতে পায় একটি মেয়ের সাথে ছেলেটির খুব ঝগড়া হচ্ছে।মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দর।পরীর মতো দেখতে তার সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।এক পর্যায়ে ছেলেটি মেয়েটির হাত ধরে প্রধান শিক্ষিকার কাছে বিচার দিতে নিয়ে গেলো।প্রধান শিক্ষিকা কিছুক্ষণ মেয়েটিকে বকাবকি করলো। 
মেয়েটির একেবারে কাদো কাদো অবস্থা।মেয়েটির অবস্থা দেখে ছেলেটির খুব খারাপ লাগে।সেও তখন কান্না করতে থাকে। 
এই ব্যাপারটি চিরো স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো একটি ঘটনা। 
তখন তইমুর বলে বন্ধ করো।সহকারী বন্ধ করে দেয়।তার মাথা থেকে হেলমেট খোলার পর সহকারী দেখে যে পুরো গাল পানি দিয়ে ভেসে যাচ্ছে।এতক্ষন এইসব দেখে খুব কান্না করেছে তইমুর। 
তইমুর নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলে  
-যন্ত্রটি বিজ্ঞান একাডেমীতে পাঠানোর বন্দোবস্ত করো।আর আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবো। 
তিনি তার অতীত দেখতে চেয়েছিলেন বলে এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছে ।তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন এখন এটি পুরো পৃথিবীর কাজে আসুক।নাহয় কিছুদিন পর পর গিয়ে তইমুর তার অতীত দেখে আসবে।কেউ আপত্তি করার কথা নয়।কারন তিনি এটির আবিষ্কারক। 
সকলের কাছে তিনি এখন অনেক সম্মানের মানুষ হয়ে গিয়েছেন। 


#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...