শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২০

বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান

আমাদের দেশের নাম "গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ"।১৯৭১ সালের পর থেকেই আমাদের দেশ বাংলাদেশ।এখন সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।সকলেই সেটা জানি।এখন আমার মতো করে কিছু কথা বলি।
আমাদের বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দুই দেশের মাঝে সকল সময় একটি দন্ড থেকেই যায়৷ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের একই অবস্থা।পাকিস্তান ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের মানুষের ওপর এক নির্মম অত্যাচার চালায়।আর শোষণ তো অনেক আগে থেকেই করে আসছিলো।এই সকল কিছুই আমাদের জানা কথা।কিন্তু এখানে কিছু ভাবনার বিষয় আছে।একটি দেশ কিভাবে খারাপ হতে পারে।দেশের শাসনে যারা থাকে তারা খারাপ হতে পারে কিন্তু দেশ নয়।তখনকার পাকিস্তানী নেতাদের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের জন্য আপনা আপনি মুখ দিয়ে গালি চলে আসে।সকলের ক্ষেত্রেই সেটা একই বলা চলে।কিন্তু পাকিস্তান দেশটিকে কখনোই আমি ঘৃণা করতে পারিনা।
এবার আসা যাক মূল কথায়।আমার বোন পাকিস্তানের নাম শুনলেই দাত মুখ খিচে পাগলের মতো করতে শুরু করে।আমি যখন বলি, " আমি মানবধর্মে বিশ্বাসি" তখন বোন বলে, 
--"আমিও মানবধর্মে বিশ্বাসি কিন্তু পাকিস্তানি হচ্ছে পাকিস্তানি।"
এক পর্যায়ে বোন আমাকে রাজাকার বলে অপমান করতে শুরু করে।লাঠি দিয়ে মারতে আসে।কিন্তু আমি বাপু আমার জায়গা থেকে এক চুলও সরে যাওয়ার পাত্র নই।আমি বোনকে বোঝাতে শুরু করি,
--"দেখ বোন পাকিস্তানে আমাদের প্রজন্ম এবং আমাদের বাবা মায়ের প্রজন্মের যে মানুষগুলো রয়েছে তাদের ওপর তোর রাগ থাকার কথা নয়।তারা তো আমাদের কোন ক্ষতি করেনি।"
কিন্তু বোন তো বুঝতে নারাজ।সে বলে,
--"কিন্তু তাদের দাদার প্রজন্ম তো আমাদের দেশের নিরীহ মানুষদের খুন করেছে।"
--"তাতে তাদের কি দোষ।তারা কি কিছু করেছে?তারা হয়তো অনুশোচনা করছে তাদের দাদার প্রজন্মের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের জন্য।"
তার পরেও বোন তার গোয়ার্তূমি নিয়ে বসে রয়েছে।তখন আমি বললাম,
--"ধর তুই একটি বাচ্চাকে রাস্তায় পরে থাকতে দেখলি।ঘটনা ক্রমে জানতে পারলি বাচ্চাটি একটি পাকিস্তানি দম্পতির বাচ্চা।এখন তুই কি বাচ্চাটাকে ফেলে দিবি?নিশ্চই নয়।"
বোনকে দেখলাম চুপ হয়ে গেলো।
আমি বলবো পাকিস্তানের এখনকার মানুষ খারাপ নয়।এখন যদি ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশ মিলে পাকিস্তানিদের শত্রু বলে আক্রমন করে তাহলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ মারা যাবে যারা কোন অন্যায়ই করেনি।আমি বলবো,
--"আমি আমার দেশকে ভালোবাসি।তাই বলে পাকিস্তানকে ঘৃণা করিনা অথবা পাকিস্তানের মানুষদের।আমি সেসকল মানুষদের ঘৃণা করি যারা আমার দেশের নিরীহ মানুষদের নির্বীচারে হত্যা করেছে।তাই বলে তাদের অন্যায়ের ভাগিদার হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মকে চিহ্নিত করতে পারিনা।"
আমি বলবো আমি মানব ধর্মে বিশ্বাসি।

উল্লেখ্যঃপাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন যে অতীতে পাকিস্তানের নেতারা বাংলাদেশের সাথে অন্যায় করেছে।অন্যদিকে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে এসে বাঙালিদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছে সেটিও বলেছেন।
যেখানে তারা অতীতের কর্মকান্ডের জন্য লজ্জিত সেখানে কেন আমরা একটি দেশের ওপর আঙুল তুলছি।যেখানে বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ একেবারেই ভিন্ন।মনের ভেতরে ঘৃণার পালন করলে তার ফল কখনো ভালো হয়না।যেখানে হাদিসে বলা আছে যদি শত্রুরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ। যেখানে এই মানুষদের কোন দোষই নেই।

@SraNton Hossain 

শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০

সেমিনার রুম


(১)
হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সেমিনার রুম।জানালার পাশের খালি টেবিলটিতে বসে রয়েছি।জানালার বাইরে বিরাট একটি বটগাছ এবং ছোট্ট একটি পুকুর ছবির ফ্রেমের মতো শোভা পাচ্ছে।ভালো না লাগার কোন কারণ নেই যে।
জানালার পাশের ছবি রাখার ফ্রেমটিতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি।কতো পুরোনো এবং স্মৃতি মাখা ছবি দেখা যাচ্ছে।কয়েকটি ছবির ওপর আমার চোখ বারবার ঘুরছে ফিরছে।
একটি ছবি দেখে মনে হচ্ছে শীতকালে তোলা।পেছনের দিকের পাহাড়গুলো কুয়াশার চাদড়ে মোড়ানো।ছবিটা পুরোনো হওয়ায় অতোটা স্পষ্ট নয়।
বেশ কয়েকজন তরুণ ছেলে পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।একজনের হাতে গীটার আর বাকিদের ঠোঁটে মিষ্টি এক চিলতে হাসি।ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে রঙিন ক্যামেরার প্রচলন বা ঐ সময়কালের তোলা।
আরেকটি ছবির ওপর আমার চোখ আটকে গেলো।
সরু একটি নদী, দুই পাশে উচু ও সবুজ পাহাড়।নদীর পানিতে পাহাড়ের ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে।ওপরের নীল আকাশ সাথে সাদা সাদা মেঘ।
নদীর বুকে নৌকার মাঝে বেশ কয়েকজন ছেলে বসে রয়েছে।হাস্যোজ্জ্বল চেহারাগুলো দেখে মনের কোথায় যেন পুলক অনুভব করতে পারছিলাম।ছেলেগুলোর পোষাক দেখে একটি স্যারের কথা মনে পড়ছে।স্যার বলেছিলো,
--"আজ থেকে বিশ বছর অতীতে ছেলেদের কাছে একটি স্টাইল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলো।ঢোলা তৈরি করা প্যান্ট সাথে সার্ট বা গেঞ্জি যাই হোক না কেন প্যান্টের মাঝে গুজে পরিধান করা।সাথে চোখে কালো একটি চশমা।"
স্যারের কথার সাথে ছেলেগুলোর কাপড় পরিধান করার ধরন অনেকটা মিলে যাচ্ছে৷সামনের দিকে একটি ছেলে নৌকার পাটাতনে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছে।তার মাথায় এখনকার স্টাইলে একটি ক্যাপ শোভা পাচ্ছে।যা অনেকটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে বলা চলে।কোথায় যেন সকল কিছু ঠিক নেই।কিন্তু এই ছবির বয়স অনায়াসেই পনেরো বছর পার হয়ে যাবে।
আচ্ছা এই ছেলেগুলো এখন কোথায়?তারা সকলের হয়তো মধ্যবয়সী মানুষ।তারা কি তাদের সোনালী অতীত স্মৃতিতে অনুভব করতে পারে?তারা যদি কখনো কলেজের এই সেমিনার রুমে এসে এই ছবিগুলো দেখতে পায় তাহলে তাদের কেমন লাগবে?
কষ্টের অনুভূতি হবে হয়তো।
কিন্তু তারা কি কখনো এক সাথে হতে পারবে?সম্ভাবনা খুবই কম।মানুষগুলো হয়তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরেছে পুরো দেশে চাকরির সুবাদে।শিক্ষা জীবনের পর হয়তো সকলের একসাথে হওয়াই হয়নি।

(২)
নিচে পুকুর এর কিনার থেকে কয়েকজন ছেলে মেয়ের কণ্ঠ ভেসে আসছে।অনেকটা অস্পষ্ট কিন্তু গানের মতো শোনাচ্ছে।সকলে মিলে গান গাইছে হয়তো।
এমন সময় একটি নাম না জানা পাখি তার সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে তুলছে।তার মনে হয়তো অফুরন্ত আনন্দ।
এই পাখি একদিন অতীত হয়ে যাবে,তার আনন্দ ধ্বনিও অতীর হয়ে যাবে,ঐযে গান গাইছে যেই ছেলে-মেয়েগুলো তাদের গাওয়া গানও একদিন অতীত হয়ে যাবে।
শুধু স্মৃতিগুলো জঞ্জালের মতো আটকা পরে থাকবে এই গোলক ধাধায়।
@SraNton Hossain

#শেষ_বেলা

এটিও কোন এক পোষ মাসের গল্প। আমার স্মৃতি শক্তি ম্লান হয়ে আসছে। এখন আর সকল কিছু ঠিকমতো মনে করতে পারি না। কতো শত গল্প যেন ঘন কুয়াশার আড়ালে আত্ম...